ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

ফরেন পলিসি’র প্রতিবেদন

‘মাদকের রাজধানীতে পরিণত হয়েছে সৌদি আরব’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:২৫ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ শনিবার

এমন সব খাদ্য পণ্যের মধ্যেই পাচার হচ্ছে মাদক

এমন সব খাদ্য পণ্যের মধ্যেই পাচার হচ্ছে মাদক

চলতি বছরে সৌদি আরবে ‘কেপ্টাগন’ নামক মাদকের ট্যাবলেট পাচার ও এর ব্যবহারের বিষয়ে বেশ কিছু খবর প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমগুলোতে। কোনও কোনও সূত্র বলছে, সৌদি আরব কার্যত মাদকের গুদামে পরিণত হয়েছে।

সম্প্রতি এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে মার্কিন সাময়িকী ফরেন পলিসি সৌদি আরবকে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে মাদকের রাজধানী হিসেবে অভিহিত করেছে। 

গত ২০ ডিসেম্বর প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটি মাদক বিক্রির লাভজনক বাজারে পরিণত হয়েছে এবং সৌদি সমাজে মাদকের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কোনও কোনও সংবাদ মাধ্যম মাদকের ব্যবসা ও এর বিস্তারে সৌদি যুবরাজদের হাত থাকার কথা জানিয়েছে। কিন্তু সৌদি কর্মকর্তারা মাদক ব্যবসায় যুবরাজদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনতে চায় নি।

২০১৫ সালের অক্টোবরে সৌদি আরবে পাচারকালে ২৪ লাখ পিচ 'কেপ্টাগন' নামক মাদকের ট্যাবলেট আটক করে লেবাননের নিরাপত্তা বাহিনী। এর সঙ্গে জড়িত আবদেল মহসেন বিন ওয়ালিদ বিন আবদুল আজিজ নামে এক সৌদি যুবরাজ এবং তাঁর চার সহযোগীকেও আটক করে লেবানিজ বাহিনী। 

এ বিষয়ে চলতি বছর এপ্রিলে রিয়াদ এই বলে ঘোষণা করে যে, লেবানন থেকে ২৪ লাখ মাদকের ট্যাবলেট সৌদি আরবে পাচারের চেষ্টা প্রতিহত করা হয়। ডালিমের একটি চালানের মধ্যে কারসাজি করে এসব মাদক সৌদি আরবে আনার চেষ্টা করা হয়। এর জের ধরে সে সময় সৌদি সরকার লেবানন থেকে সৌদিগামী কিংবা সৌদি আরবের ওপর দিয়ে অন্যান্য দেশে সব্জি ও ফলমূল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

এছাড়া চলতি বছর জুনেও লেবাননের নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, আবারও  'কেপ্টাগন' নামক মাদকের আড়াই লাখ ট্যাবলেট সৌদি আরবে নেয়ার চেষ্টাকালে ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে। ছোট ছোট বৈদ্যুতিক পানির পাম্পে এসব মাদক লুকিয়ে রাখা হয়। 

এরপর জুলাইয়ে ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনোমিষ্ট এ তথ্য ফাঁস করে দিয়ে জানায়, বেশ কয়েকজন সৌদি যুবরাজ সিরিয়া থেকে মাদক সংগ্রহ করে তা সৌদি আরবসহ পারস্য উপসাগরীয় আরব দেশগুলোতে বিক্রি করছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মাদক চোরাকারবার ও ব্যবসার কাজে সৌদি যুবরাজদের জড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে- তাদের হাতে থাকা যথেষ্ট ক্ষমতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার। যার ফলে তাঁরা মাদকের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এ কাজে তাঁরা ব্যক্তিগত বিমান ব্যবহার করছে। 

এ সংক্রান্ত ওই প্রতিবেদনে ফরেন পলিসি লিখেছে, ‘গত মাসে সৌদি আরবে মাদক পাচারের তিনটি বড় চালান ধরা পড়ে। এ থেকে বোঝা যায়, সৌদি সমাজে মাদক ভয়াবহ বিস্তার লাভ করেছে এবং বর্তমানে মাদকের ব্যবহার সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এই মাদক ব্যবহারের ফলে মানুষের আচরণে অদ্ভুত পরিবর্তন দেখা দেয় এবং তারা দীর্ঘ সময় ধরে জেগে থাকতে পারে।’

'কেপ্টাগন' নামক মাদকের ট্যাবলেট

আর এর ফলস্বরূপ দেখা যায় যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি আরবের সমাজ ব্যবস্থায় নজিরবিহীন পরিবর্তন এসেছে। নাইট ক্লাবে নাচ-গান চালু করা, জুয়ার আড্ডা বসানো- প্রভৃতির সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি মাদকের প্রতি যুবক শ্রেণীর আসক্তি এমন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে বলা যায়, সৌদি সমাজ ইসলামি মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে গিয়ে পাশ্চাত্যের বিজাতীয় সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকে পড়ছে। তাদের বর্তমান জীবন ব্যবস্থায়ও পাশ্চাত্যের প্রভাব লক্ষণীয়। সূত্র- ফরেন পলিসি।

এনএস//