ঢাকা, বুধবার   ০৯ অক্টোবর ২০২৪,   আশ্বিন ২৪ ১৪৩১

তৃতীয়পক্ষের মামলায় সেতু নির্মাণে অনিশ্চয়তা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৩:০৮ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ মঙ্গলবার

তৃতীয় পক্ষের মামলা এবং ঠিকাদারের গাফিলতিতে দীর্ঘ সাড়ে ৩ বছরেও শেষ হয়নি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর সড়কে জনগুরুত্বপূর্ণ শুলকুর বাজার সেতু। এতে চরম দুভোর্গে পাঁচ ইউনিয়নের প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষ। এদিকে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় সেতু নির্মাণে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। 

জনগণের কোন কাজেই আসছে না এলজিইডি কর্তৃক ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১৮ ফুট চওড়া সুদৃশ্য সংযোগ সড়কটি। নির্মাণ কাজের মেয়াদ ২ বছর পেরিয়ে গেলেও দৃশ্যমান হয়েছে শুধুমাত্র একটি স্প্যান।  

স্থানীয় এমপি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ সেতু পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ নিলে তৃতীয় পক্ষ হাইকোর্টে মামলা করায় সেতুটি নির্মাণে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা।   

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় নতুন সেতু নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালে কুড়িগ্রাম এলজিইডি টেন্ডার আহ্বান করে। টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্মাণ কাজটি পান কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা এন্ড আবু বকর জেবি। 

৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুর নির্মাণ ব্যয় ছিল ৫ কোটি ৫২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট। যা শেষ হওয়ার নির্ধারিত মেয়াদ ছিল ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০। নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও গত ২ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে সেতুর নির্মাণ কাজ। সেতুর একটি মাত্র স্প্যান নির্মাণ করা হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, কাজটি বসুন্ধরা এন্ড আবু বকর জেবি’র স্বত্বাধিকারী আলতাফ হোসেন এবং কে এম বদরুল আহসানের নামে হলেও বাস্তবে তৃতীয়পক্ষ হিসাবে অসমাপ্ত কাজটি করেন নিম বাগান এলাকার গোলাম রব্বানী।

তৃতীয়পক্ষ গোলাম রব্বানী জানান, চাহিদা অনুযায়ী বিল প্রদানে বিলম্ব ও কাজ বাতিল করায় আমি হাইকোর্টে রিট করেছি। 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা এন্ড আবু বকর জেবি’র স্বত্বাধিকারী কে এম বদরুল হাসান (মামুন) জানান, আর্থিক সমস্যার কারণে চুক্তি অনুযায়ী সময়মতো কাজটি সম্পন্ন করতে পারিনি। আদালতে আমরা কোনো রিট করিনি। হাইকোর্টে রিটের কথা জানতে পেরে থানায় জিডি করেছি আমরা।

ওই প্রতিষ্ঠানের আরেক স্বত্বাধিকারী আলতাফ হোসেন জানান, বিধিসম্মতভাবে কাজ বাতিলের বিষয়ে আমাদের কোন দ্বিমত নেই। তবে আমাদের সম্পন্নকৃত কাজের সঠিক বিল চাই। জনদুর্ভোগ লাঘবে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে আমরা মেনে নেবো। যার আবেদন ইতিমধ্যে এলজিইডি অফিসে দাখিল করেছি। 

কুড়িগ্রাম এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ে সেতুর কাজ শেষ করতে পারেনি। ইতোমধ্যে প্রথমবার কাজ সমাপ্তির সময় শেষ হলেও আবারও সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। চলতি বছরের ২ জুন কাজ সমাপ্তির শেষদিন ছিলো। 

তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ ফুট চওড়া সংযোগ সড়ক নির্মাণ হলেও সেতুটির কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এর সুফল জনগণ পাচ্ছেন না। জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে যথাযথভাবে আগের টেন্ডার বাতিল করে নুতন টেন্ডারের কার্যক্রম শুরুর আগেই হাইকোর্টের নির্দেশনায় নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, বর্তমান ঠিকাদার দিয়ে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। নুতন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে জনগণের দুভোর্গ নিরসনে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাগাদা দেয়া হয়েছে। 

কুড়িগ্রাম-২ আসনের এমপি আলহাজ্ব পনির উদ্দিন আহমেদ বলেন, জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে নুতন ঠিকাদার নিয়োগ করে এলজিইডি’র প্রকৌশলীকে সেতুর নির্মাণের কাজ দ্রুতসম্পন্ন করতে নির্দেশ দেয়াহয়েছে। এলজিইডি কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করবে বলে জানিয়েছে।

এএইচ/