পিঠা-পায়েস খেয়েও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার সহজ কিছু উপায়
শামসুন নাহার স্মৃতি
প্রকাশিত : ০৪:২৪ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার
শীতের পিঠাপুলি
যারা ওবেসিটিতে ভুগছেন কিংবা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ডায়েট কিরছেন অথবা টাইপ-২ ডায়াবেটিসে ভুগছেন, যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য হিমশিম খাচ্ছেন, তাঁরা শীতকাল আসলেই অনেকটাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
কারণ শীতকালে এমনিতেই শারীরিক কাজ কমে যায়, সেইসঙ্গে খাওয়া দাওয়ারও ধুম পড়ে যায়। বিশেষ করে বাঙালি সমাজে। শীতকালে বেড়ে যায় নানান ধরনের সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানও। ধুম পড়ে যায় বিয়ে-শাদির দাওয়াতেরও। বাঙালীর দাওয়াত মানেই যে পেট পুরে খাওয়া।
এছাড়া শীতকাল মানেই পিঠাপুলির সময়। এ সময় নানান ধরনের পিঠা-পুলির আয়োজন হয় সর্বত্রই। তাই শীতকাল আসাতে ওজন বেড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। এই কারণে অনেকে ভয়ে থাকেন শীতকাল আসলেই বুঝি আমার ওজন বেড়ে গেল কিংবা আমি ডায়েট করছি- এই সময় আমি কিভাবে শীতের পিঠা খাব? কিংবা এত দাওয়াত খেয়ে কিভাবে এত তাড়াতাড়ি ওজন মেইনটেইন করব।
অর্থাৎ শীতকালে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা নিয়ে অনেকেই খুব বেশি টেনশনে পড়ে যান। কিন্তু কিছু বিষয় মেনে চললে কিংবা কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখলে শীতকালটা উপভোগও করা যাবে, আবার ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
শীতকালে আরামের ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছে করে না অনেকেরই। তাই এসময়ে সকালে হাঁটার পরিবর্তে বিকালে কিংবা সন্ধ্যায় হাঁটতে পারেন।
ইদানিংকালে ভিটামিন-ডি এর অভাব দেখা যায় অনেকেরই, তাই সকালের নাস্তার পরে সকাল ১০টা কিংবা ১১টার দিকে যদি ২০ থেকে ৩০ মিনিট হাঁটতে পারেন, তাহলে শারীরিক পরিশ্রমের পাশাপাশি ভিটামিন ডিও পর্যাপ্ত পরিমাণে পেতে পারেন।
অর্থাৎ শীতকালে এই সময় হাঁটলে শারীরিক পরিশ্রমও হল এবং সূর্যের আলো থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডিও নেয়া হলো।
শীতকালে অনেকে আবার ব্যাডমিন্টনও খেলতে পারেন। বিকালে কিংবা সন্ধ্যায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট যদি ব্যাডমিন্টন অথবা লন টেনিস জাতীয় খেলাধুলা করতে পারেন তাহলেও কিন্তু শারীরিক পরিশ্রম হবে, এতে করে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে খুউব সহজেই।
শীতকাল মানেই পিঠা পুলির সময়। শীতকালে পিঠা-পায়েস খেতে কার না ভাল লাগে! তবে অনেকই আছেন ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে পিঠা পায়েস খাওয়া থেকে পুরোপুরিই বিরত থাকেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি- ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে নিজেকে বঞ্চিত না করে পরিমিত পরিমাণে শীতকালীন মজার পিঠা সকালের নাস্তার পরিবর্তে খেলে খুব একটা সমস্যা হবে না। কিংবা রাতের খাবারের পরিবর্তে মুরগীর মাংশ দিয়ে চিতই পিঠা, খোলাজা পিঠা কিংবা চালের রুটি খাওয়া যেতে পারে পরিমিত পরিমাণে।
শীতকালীন সবজির আসলে বিকল্প নাই। শীতকালের সবজিগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও তেমন সুস্বাদু। তাই এই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর মজাদার সবজিগুলো দিয়ে পরিমিত পরিমাণে সবজি খিচুড়ি, সবজি ওটস খিচুড়ি, সবজি স্যুপ ও সালাদ খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে শীতকালে ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার খেয়ে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
শীতকাল আসলেই দাওয়াতের ধুম পড়ে যায়, বিয়ে-শাদিসহ বিভিন্ন ধরনের আচার অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায়। বাঙালিদের আচার-অনুষ্ঠান বা দাওয়াত মানে খাওয়া-দাওয়ার বিশাল আয়োজন থাকবেই। তাই যারা বাড়তি ওজন নিয়ে টেনশনে আছেন কিংবা শীতকালে ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে থাকেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, যখনই দাওয়াত হোক না কেন কিংবা যতই আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করুন না কেন আপনার খাবারের মান ও পরিমাণ কিন্তু আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে।
অর্থাৎ যতই দাওয়াত থাকুক, আপনি পরিমিত পরিমাণে খাবার গ্রহণ করবেন। এক্ষেত্রে একটি ছোট্ট টিপস হল- যেদিন আপনার ডিনারের দাওয়াত থাকবে, সেদিন আপনি আপনার ডিনার ডান হাফ করে যেতে পারেন। এতে করে আপনি চাইলেও বেশি পরিমাণে খেতে পারবেন না। কিংবা রাতে দাওয়াত থাকলে সেদিন আপনি দুপুরবেলা সালাত অথবা শুধুমাত্র স্যুপ কিংবা সালাদ খেতে পারেন। এতে করে সারাদিনের ক্যালরির পরিমাপ ঠিক থাকবে।
কিংবা দুপুরে দাওয়াত থাকলে দুপুরে ভারী খাবার হয়ে গেলে, সেক্ষেত্রে রাতে এক গ্লাস লো ফ্যাট মিল্ক কিংবা এককাপ টকদই অথবা শুধুমাত্র এক কাপ ভেজিটেবল স্যুপ খেতে পারেন। এতে করে আপনি দাওয়াতও উপভোগ করলেন এবং ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়টাও থাকল না।
শীতকাল আসলে আমাদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা যেটা হয়, তা হল- শীতকালে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা হয় না। এতে করে শারীরিক নানান ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। শরীরে ডিহাইড্রেট হয়ে যায় এবং নানান ধরনের ইউরিন ইনফেকশনসহ ইউরিনারি ট্র্যাক-এর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই শীতকালে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এছাড়া গরম দুধ কিংবা টক দইয়ের শরবত খেলে পানির চাহিদাটা অনেকাংশে পূরণ হয়। এমনকি শীতকালে ভুনা তরকারির পরিবর্তে একটু ঝোল জাতীয় তরকারি যদি খাওয়া হয়, এতে করে শরীরে পানির চাহিদা পূরণ হয় খুব সহজে।
তাই আসুন, শীতকালে ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে শীতকালটা উপভোগ করা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না। শীতকালে নিয়ম মেনে চলে এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস-এর মাধ্যমে এবং পরিমিত পরিমাণে পিঠা পুলি খেলেও ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
লেখক- ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিষ্ট এন্ড ডায়েটিশিয়ান, উত্তরা ক্রিসেন্ট হসপিটাল, উত্তরা, ঢাকা।
এনএস//