কবি আবুল হোসেনের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ
প্রকাশিত : ০১:৫৭ পিএম, ২৯ জুন ২০১৭ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৫:২১ পিএম, ১ জুলাই ২০১৭ শনিবার
ছবি: কবি আবুল হোসেন
চল্লিশের দশকের অন্যতম প্রধান কবি আবুল হোসেনের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৪ সালের এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেন।
‘৪৭-এর দেশভাগের পর কেউ কেউ যখন রবীন্দ্র-সাহিত্য বর্জনের কথা বলেছেন, ইসলামী ধারায় কাব্যচর্চায় মনোযোগী হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, সে সময় আবুল হোসেন আধুনিক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে কবিতার মূলধারাকে বেগবান করার কাজে প্রয়াসী হয়েছিলেন।
কবিতার শুদ্ধতায় বিশ্বাসী আবুল হোসেন বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট থানার আরুয়াডাঙা গ্রামে ১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট জন্ম গ্রহণ করেন।তার মায়ের নাম মেহেরুন নেসা।
তাঁর পৈতৃক নিবাস খুলনা জেলার দেয়াড়া গ্রামে। তাঁর শৈশব কাটে পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরে, এরপর কলকাতায় ও পরবর্তীকালে বাংলাদেশে।
তিনি ১৯২৯ সালে সাত বছর বয়সে কৃষ্ণনগর কলিজিয়েট স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৩৭ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন কুষ্টিয়া হাইস্কুল থেকে।
তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯৪২ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক ও পরে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
তিনি কবিতাচর্চা শুরু করেছিলেন স্কুল জীবন থেকেই। তখন থেকেই তিনি সাহিত্যচর্চা আর সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক সংগঠনের লালনে তিনি সময় দিয়েছেন ।
তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্র পরিষদের সম্পাদক ছিলেন। বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির কার্যকরী পরিষদ, পাকিস্তান রাইটার্স গিল্ডের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ ও বাংলা একাডেমির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন।
ছিলেন রবীন্দ্র চর্চাকেন্দ্রের সভাপতি। তাঁর রচিত গ্রন্থসংখ্যা ২৫টি। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নববসন্ত’ ১৯৪০ সালে প্রকাশিত হয়। অন্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে-বিরস সংলাপ (১৯৬৯), হাওয়া তোমার কি দুঃসাহস (১৯৮২), দুঃস্বপ্ন থেকে দুঃস্বপ্নে (১৯৮৫), এখনও সময় আছে (১৯৯৭), আর কিসের অপেক্ষা (২০০০), রাজকাহিনী (২০০৪ ) অন্যতম।
২০০৭ সালে `আবুল হোসেনর ব্যঙ্গ কবিতা` ও গদ্যের বই `দুঃস্বপ্নের কাল`, ২০০৮ সালে `প্রেমের কবিতা` ও `কালের খাতায়`, ২০০৯ সালে গদ্য `স্বপ্ন ভঙ্গের পালা` বইগুলি প্রকাশিত হয়।
তাঁর অনুবাদ করা কবিতাগুলি হচ্ছে- `ইকবালের কবিতা`, `আমার জন্মভূমি`, `অন্য ক্ষেতের ফসল`। ২০০০ সালে তিনি `আমার এই ছোট ভুবন`, ২০০৫ সালে `আর এক ভুবন` নামে দুটি স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ লিখেন।
তাঁর অনুদিত উপন্যাস হচ্ছে `অরণ্যের ডাক`। `পার্বত্যের পথে` নামক ভ্রমণ কাহিনীও লিখেছেন তিনি।
এছাড়াও তাঁর আরও অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে।
সরকারি চাকরি দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। কর্মজীবনে তিনি উচ্চপ্রদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। কর্মজীবনের শুরুতে প্রথম তিনি কলকাতা আয়কর কমিশনারের অফিসে এক্সামিনার অব অ্যাকাউন্টস পদে যোগ দেন।
ভারত ভাগের পর তিনি ময়মনসিংহে সহকারী বিক্রয় কর অফিসার হিসেবে আসেন। এর দুই-আড়াই বছর পর ১৯৫০ সালের মাঝামাঝিতে তিনি ঢাকার রেডিও পাকিস্তানে একটি সমপর্যায়ের চাকরিতে যোগ দেন।
এরপর তিনি ব্যাংককে সিটো পাবলিক ইনফরমেশন অফিসে ইন্টারন্যাশনাল স্টাফ হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর তিনি সেখান থেকে বাংলাদেশে ফিরে তিনি জনসংযোগ বিভাগে যোগ দেন।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন তিনি। প্রথম যৌবনে লেখক হিসেবে দাঁড়িয়ে-পড়া এই শিল্পী ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সরকারের যুগ্ম সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
আবুল হোসেন সাহিত্যে অবদানের জন্য সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য তিনি ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮০ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
এছাড়া তিনি জাতীয় কবিতা পুরস্কার নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক, পদাবলী পুরস্কার, কাজী মাহবুবুল্লাহ পুরস্কার ও স্বর্ণপদক, আবুল হাসানাৎ সাহিত্য পুরস্কার, জনবার্তা স্বর্ণপদক, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, জনকন্ঠ গুণীজন সম্মাননা ও জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক সংবর্ধনাসহ বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন।
১৯৫৮ সালে তিনি প্রখ্যাত লেখক আকবর উদ্দিনের জেষ্ঠ কন্যা সাহানার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
২০১৪ সালের ২৯ জুন, ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে গুণী এই সাহিত্যিক মৃত্যুবরণ করেন।