বিনিয়োগে ফিরেছে মোংলা ইপিজেড
মোংলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১২:০৪ পিএম, ৪ জানুয়ারি ২০২২ মঙ্গলবার
রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার দোহাই দিয়ে একসময়ের বিমুখ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ মোংলা ইপিজেডে বিনিয়োগ ফিরতে শুরু করেছে। গত পাঁচ বছরে এই ইপিজেড থেকে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে রপ্তানি।
বিশেষ প্রণোদনা, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা এবং ব্যাপক প্রচরণার কারণেই এই ইপিজেডে সুদিন ফিরেছে বলে মোংলা ইপিজেড সূত্রে জানা গেছে।
দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে মোংলা ইপিজেড প্রতিষ্ঠা করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনশ’ তিন একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই ইপিজেডে ২৫৪টি শিল্প অঞ্চল তৈরি করা হয়েছে। যার অধিকাংশ ইতোমধ্যে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
বেপজার নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর বলেন, শুরুর দিকে পিছিয়ে থাকা মোংলা ইপিজেডকে এগিয়ে নিতে গৃহীত পদক্ষেপের কারণে এখন সুফল পেতে শুরু করেছে। আধুনিক সুযোগ সুবিধা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে এই ইপিজেডে বর্তমানে ৩৪টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে রয়েছে। আরও আটটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশ, জাপান, চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডের বিনিয়োগকারীরা প্রায় ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে এই ইপিজেডে। এ পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্যসামগ্রী।
নাজমা বিনতে আরও বলেন, আট হাজার ২০৯ জন বাংলাদেশি শ্রমিক এখানে কর্মরত রয়েছেন। এসব শ্রমিকরা ম্যানিকুইন হেড, উইগ, মার্বেল কলাম, মার্বেল টাইলস, তাঁবু, সার্জিক্যাল গাউন, লাগেজ ও ট্রাভেল ব্যাগ, কার সিট হিটার, সিগারেট ও সিগার, ক্রোকারিজ সামগ্রী, লাইটার, পাটের সূতা ও ব্যাগ, গার্মেন্টস্ এক্সেসরিজসহ বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন ব্রান্ডের পণ্য সামগ্রী তৈরি করছেন।
পদ্মা সেতু ও ফয়লা বিমান বন্দর পুরোপুরি বাস্তবায়ন এবং গ্যাস সংযোগ চালু হলে অনেক বিনিয়োগকারীরা এখানে ছুটে আসবেন বলেও জানান তিনি।
ইপিজেডের যে ক’টি কারখানা রয়েছে তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ভারতীয় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ‘ভিআইপি’। এই কোম্পানিরই রয়েছে ১০টি কারখানা, যা থেকে উৎপাদন হয় লাগেজ ব্যাগ এবং এক্সেসরিজ। ভারত, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই ব্যাগ রপ্তানি করে বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থ বছরে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে শীর্ষ বিনিয়োগ ট্রফি লাভ করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
ভিআইপি’র জিএম মিজানুর রহমান খান বলেন, এই ইপিজেডে ব্যবসা বান্ধব পরিবেশের জন্য খুবই উপযোগী। শুরুতে তাদের একটি কারখানা থাকলেও সুযোগ-সুবিধা এবং শ্রমিক অসন্তোষ না থাকায় বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে। তাদের এখন ১০টি কারখানা। এতে সাড়ে পাঁচ হাজার শ্রমিক কাজ করছে বলে জানান তিনি।
মোংলা ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক মাহবুব আহম্মেদ সিদ্দিক জানান, অল্প সময়ে ভালো ব্যবধানেই এগিয়ে গেছে এই ইপিজেড। গত অর্থবছরে এই ইপিজেড থেকে সর্বমোট ৯২৯ দশমিক ৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা গত পাঁচ অর্থবছরের তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেশি। এসময় কর্মসংস্থান বেড়েছে আট হাজার ২০৯ জন। এর মধ্যে ৬১ শতাংশ নারী ও বাকি ৩৯ শতাংশ পুরুষ শ্রমিক।
বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বেপজার পক্ষ থেকে এই ইপিজেডে অনেক প্রণোদনা কার্যকর রয়েছে। অন্যান্য ইপিজেডের তুলনায় মোংলা ইপিজেডের জমি ও ভবন ভাড়া প্রায় অর্ধেক। ঢাকা, চট্রগ্রাম, কর্ণফুলী, আদমজী এবং কুমিল্লা ইপিজেডে যেখানে বছরে প্রতি বর্গমিটার জমির ভাড়া ২ দশমিক ৫০ ডলার, সেখানে মোংলা ইপিজেডের জমির ভাড়া ১ দশমিক ৪০ ডলার।
একইভাবে অন্য ইপিজেডগুলোতে বেপজা স্ট্যান্ডার্ড কারখানা ভবনের বর্গমিটার প্রতি ভাড়া মাসে ৩ দশমিক ০ ডলার। অথচ মোংলা ইপিজেডের ভাড়া ১ দশমিক ৭৫ ডলার বলে জানান মাহাবুব আহম্মেদ সিদ্দিক।
এএইচ/