ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৮ অক্টোবর ২০২৪,   আশ্বিন ২৩ ১৪৩১

ভলিবল খেলোয়াড় থেকে যেভাবে নিউজিল্যান্ড বধের নায়ক!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:০৮ পিএম, ৫ জানুয়ারি ২০২২ বুধবার

স্যালুট মাষ্টার এবাদত হোসাইন

স্যালুট মাষ্টার এবাদত হোসাইন

দুই বছর আগে মিরপুরের মাঠে বিপিএলের ম্যাচে চট্টগ্রামের বিপক্ষে সিলেট সিক্সার্সের হয়ে উইকেট নেয়ার পর যখন সামরিক কায়দায় স্যালুট দেন এক তরুণ, তখন মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেই ছবি ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে সাত উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন সেই স্যালুট দেয়া বোলারটিই। নাম তাঁর এবাদত হোসাইন চৌধুরী। নিজের ২৮তম জন্মদিনের দুইদিন আগে পাওয়া দলের জয়ের পেছনে তাঁর ছিল প্রধান ভূমিকা।

মজার ব্যাপার হলো- বর্তমানে একজন পুরোদস্তুর ক্রিকেটার বা পেস বোলার হিসাবে পরিচিতি পেলেও বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এই সদস্য কিন্তু খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেছিলেন একজন ভলিবল খেলোয়াড় হিসাবেই।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে সঞ্চালকের প্রশ্নের জবাবে এবাদত হোসাইন বলেন, ‘আমার ভলিবল থেকে ক্রিকেটে আসার গল্পটা অনেক লম্বা। তবে আমি ক্রিকেট উপভোগ করছি। সেইসঙ্গে বাংলাদেশ ও বিমান বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করাটাও।’
 ‍
মৌলভীবাজারে জন্ম নেয়া এবাদত হোসাইন চৌধুরী ২০১২ সালে বিমান বাহিনীতে সৈনিক হিসাবে যোগ দেন। সেখানেই চাকরির পাশাপাশি বাহিনীটির নিয়মিত ভলিবল দলের সদস্য হিসেবেই খেলতে শুরু করেন।

ভলিবল দিয়ে ক্রীড়া জীবন শুরু করলেও পরবর্তীতে ক্রিকেট খেলার প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবাদত। ২০১৪ সালে সিটি ক্লাবের হয়ে ঢাকায় প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলার সুযোগ পান।

তবে এই বোলার প্রথমে নজরে আসেন ২০১৬ সালে, রবি পেসার হান্ট প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। সেই সময় তাঁর দ্রুত গতির বলের জন্যই মূলত ‘স্পিড স্টার’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। সেখান থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের হাই পারফর্মেন্স ক্যাম্পে ডাক পান এই যুবক।

সেই বছর ওই ক্যাম্পে আরও ডাক পেয়েছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ, নাজমুল হোসাইন শান্ত, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, সাদমান ইসলামের মতো তরুণরাও। যারা আজ প্রতিনিধিত্ব করছেন জাতীয় দলের হয়ে।

সেই সময় হাই পারফর্মেন্স ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ দিতে আসা পাকিস্তানী গ্রেট আকিব জাভেদের প্রশংসাও কুড়ান এবাদত হোসাইন। ওই সময়ে বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ম্যানেজার ছিলেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘এবাদত দারুণ সমালোচনার মুখে ছিল অনেকদিন। কারণ ওর বোলিং এভারেজ ভালো একজন বোলারের সাথে যায় না। আর এটা নিয়ে অনেক সমালোচনাও হচ্ছিল। কিন্তু তার পরেও ওর মধ্যে ভালো করার যে জেদ ছিল, ভালো করার চেষ্টা ছিল- সেটাই তাঁর সবচেয়ে বড় সম্পদ বলে আমার মনে হয়।’

এবাদত হোসাইনের বোলিংয়ের অনেক পরিবর্তন তিনি দেখতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন ফাহিম। বিকেএসপির এই কোচ বলনে, ‘রিসেন্টলি আমি দেখলাম, ওর বোলিংয়ের মধ্যে কিছু পরিবর্তন এসেছে। অনেক ডিসিপ্লিনড মনে হয়েছে. টেকটিক্যালি ইমপ্রুভড মনে হয়েছে ওকে। যার জন্য তাঁকে কঠোর অনুশীলনও করতে হয়েছে।’

২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশের হয়ে খেলতে নেমে নয় ওভারে ১৯ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন এবাদত। যার মধ্যে তিনটি ওভার ছিল মেডেন।

এরপর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) সিলেট সিক্সার্সের হয়ে মাঠে নেমে আলোচিত হয়ে ওঠেন এবাদত। সিলেট সিক্সার্সের শেষ ম্যাচে মাত্র ১৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে দলের জয়ের নায়কে পরিণত হন। এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগে (বিসিএল) পাঁচ ম্যাচে ২১ উইকেট নিয়ে নির্বাচকদের নজরে আসেন এই পেসার।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এবাদত হোসাইনের প্রথম অভিষেক ঘটে ২০১৯ সালের মার্চে। তাসকিন আহমেদ ইনজুরিতে থাকায় নিউজিল্যান্ড সফরে তিনি জাতীয় টেস্ট দলের হয়ে খেলার ডাক পান। ৩ মার্চ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এবং টেস্টে অভিষেক হয়।

কিন্তু বোলিংয়ের ধারাবাহিকতা নিয়ে বরাবরই সমালোচনার মধ্যে থেকেছেন এবাদত হোসাইন। এর মধ্যে ১০টি টেস্ট খেলে ফেললেও তাঁর বোলিং গড় ছিল প্রায় ১০০। উইকেট সংখ্যা ছিল মোটে ১১টি। এমন পরিসংখ্যান ও সমালোচনার মধ্যেই নতুন বছরে ১১তম টেস্ট খেলতে নামেন এবাদত।

তবুও ভাগ্য যেন সহায় হচ্ছিল না কিছুতেই। কারণ, নিউজিল্যান্ডের সিমিং কন্ডিশনে দেখা যায় প্রথম ইনিংসেও সেই ছন্নছাড়া বোলিং। ভাগ্যক্রমে একটি উইকেট পেলেও রান দেন ৭৬টি। তবে দ্বিতীয় ইনিংসেই যেন জ্বলে ওঠেন তিনি। 

আগুন ঝরানো এক স্পেলে মাত্র দুই ওভারেই দুর্দান্ত সব সুইং রিভার্স সুইং ডেলিভারি দিয়ে তিনটি উইকেট তুলে নেয়ার পাশাপাশি এই ৪৬ রান দিয়ে দখল করেন ক্যারিয়ার সেরা ৬টি উইকেট। যার ফলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডকে তাঁদের মাটিতেই হারিয়ে ম্যাচ সেরা হয়ে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে নিজের নাম খোদাই করে ফেললেন এবাদত হোসেন চৌধুরী। রাতারাতি বনে গেলেন জিরো থেকে হিরো!

এনএস//