ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

আলমাতি যেন ‘কেয়ামতের কোন দৃশ্য’!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৩২ এএম, ৯ জানুয়ারি ২০২২ রবিবার

আলমাতি শহরের একটি দৃশ্য

আলমাতি শহরের একটি দৃশ্য

কাজাখস্তানের সবচেয়ে বড় শহর আলমাতিকে (পূর্ব নাম আলমাআতা) দেখলে মনে হবে এটি যেন রোজ কেয়ামতের কোন দৃশ্য। পোড়া টায়ারের গন্ধে ভারি হয়ে আছে এর আকাশ-বাতাস। রাস্তায় লোকজন খুবই কম। অনেকেই বাড়ির বাইরে বের হতে সাহস পাচ্ছেন না। শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো ছিল গণবিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু। সেখানে এখন সেনা ও পুলিশের রোডব্লক।

বিবিসির সাংবাদিক আবুজলিল আব্দুরাসুলফ বলেন, আমি বেশ ক'বছর ধরে নিয়মিতভাবে আলমাতি গিয়েছি। স্বাভাবিক অবস্থায় এই বিশাল শহরটি থাকে কর্মচঞ্চল। প্রচুর সবুজ জায়গা রয়েছে শহরে। রয়েছে খানা-পিনার অঢেল ব্যবস্থাও।

কিন্তু আলমাতির অসংখ্য দোকান-পাট আর ব্যাংক এখন বন্ধ। সেগুলোতে লুঠতরাজ হয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত আসতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে বৈকি।

আলমাতি শহরে বেশিরভাগ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রধান স্কয়ারের আশেপাশে। বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর এখানেই প্রতিবাদকারীরা প্রথম জড়ো হয়। এসময় হামলার শিকার হয় আশেপাশে অবস্থিত সংবাদমাধ্যমগুলোর কার্যালয় এবং পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হয় মেয়রের কার্যালয়। ভবনটির রঙ এখন কালো। এখনও সেখান থেকে কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা গেল।

এখানকার কিছু বাসিন্দা, যাদের সঙ্গে কথা হয়, তাঁরা জানালেন, তাঁরা হতবাক আর ক্ষুব্ধ। কাজাখস্তানে এধরনের সহিংস বিক্ষোভ এক বিরল ঘটনা। যে দ্রুততার সঙ্গে এই সহিংসতা ছড়িয়েছে, তাতে তাঁরা অবাক হয়ে গেছেন।

কিছু লোক অবশ্য বললেন, রাশিয়া এবং অন্যান্য দেশ থেকে সৈন্য আসাতে তারা খুশি হয়েছেন। তারা আশা করছেন, এতে হয়তো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। 

একজন নারী বললেন, সরকারের উচিত ছিল একেবারে গোড়া থেকেই কঠোর হাতে এসব দমন করা। তিনি বলেন, "শুরু থেকে বল প্রয়োগ করলে এসব ঘটতো না, সম্ভবত অস্ত্র ব্যবহারের জন্য তারা নিন্দার ভয়ে চিন্তিত ছিল। কিন্তু দেখুন এখন কী হাল।"

সহিংসতা নিয়ে রাগ থাকলেও প্রতিবাদকারীদের প্রতিও রয়েছে কিছু মানুষের সহানুভূতি। এসব বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন এমন অনেক মানুষ এসেছিলেন গ্রামাঞ্চল থেকে। তাদের আয় কম এবং সংসার চালাতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন।

এদের মধ্যে ২২-বছর বয়সী একজন, যিনি পাচক হিসেবে কাজ করেন তিনি বলেন, "তাঁদের যেসব দাবিদাওয়া ছিল সেগুলো আমরা বুঝতে পারি। তাঁদের বেতন বাড়ছে না, জনগণের বেশিরভাগই বহু কষ্টে জীবনযাপন করছেন। কিন্তু এখনকার ভাংচুর আর গুণ্ডামীতেও সাধারণ মানুষই কষ্ট পাচ্ছে। এসব বন্ধ হওয়া দরকার।"

এখন আলমাতির বাসিন্দাদের সামনে রয়েছে খাদ্য সঙ্কট। সুপারমার্কেটগুলো এখন বন্ধ। যেসব দোকান খোলা, তাঁরা শুধু নগদ অর্থে বেচাকেনা করছে। এটিএম থেকে টাকা তোলাও বেশ কঠিন। শহরে কোনও ইন্টারনেট সংযোগ নেই। এমনকি রাস্তায় ট্যাক্সি পাওয়াও দুস্কর।

ইন্টারনেট আর ফোন সেবা না থাকার কারণে দেশের অন্য জায়গায় কী ঘটছে- তা জানাও কঠিন। আর এমন পরিস্থিতিতে এতসব গুজব বাতাস উড়ছে যে, কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা- তা যাচাই করাও কঠিন।

কাজাখস্তানে আগে যেসব বিক্ষোভ হয়েছে, তার সবই মূলত ছিল স্থানীয় পর্যায়ে। এর কোনটিতেই বিমানবন্দরের ওপর কোনও হামলা হয়নি। কিন্তু এবার সেটাও হয়েছে। অতি-সম্প্রতি এই বিক্ষোভ শুরু হয় জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে। যেখানে সরকারের বিরুদ্ধে ছিল ব্যাপক অসন্তোষ।

কাজাখস্তানের স্বাধীনতার পর প্রথম প্রেসিডেন্ট নুরসুলতান নজরবায়েফ দীর্ঘদিন দেশ শাসন করেন। ২০১৯ সালে তার পদত্যাগের পর কাজাখরা আশা করেছিলেন যে, নতুন প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ দেশে বড় ধরনরে পরিবর্তন আনবেন।

কিন্তু তারা আশাহত হন। এর মধ্যে একটি ঘটনায় রাজধানী আস্তানার নতুন নামকরণ করা হয় নুর-সুলতান। এই ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে, আগের সরকারের লোকজনের হাতেই ক্ষমতা রয়ে গেছে। 

অবশ্য এখন কাজাখস্তানের পরিস্থিতি বেশ শান্ত এবং দেশের নিয়ন্ত্রণ দৃশ্যত সরকারের হাতে। কিন্তু বিক্ষোভ আপাতত থামলেও অসন্তোষ রয়েই গেছে। ফলে যে কোনওসময় যে কোনও স্ফুলিঙ্গ থেকে আবারও বিক্ষোভে আগুন ধরে যেতে পারে। সূত্র- বিবিসি।

এনএস//