ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

পণ্যবাহী ট্রাকে চোরাচালানি পণ্য, সক্রিয় দু’দেশের সিন্ডিকেট

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:৫৩ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০২২ সোমবার | আপডেট: ০৪:৫৫ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০২২ সোমবার

আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ট্রাকের মাধ্যমে বেনাপোল-পেট্রাপোল চেকপোস্ট দিয়ে চোরাচালানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের কোটি কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়ে এক শ্রেণির অসাধু চক্র পণ্য পাচার করছে। দু'পারের দুটি সিন্ডিকেট এ কাজে জড়িত বলে জানা গেছে।

ভারত থেকে আমদানি পণ্যবাহী ট্রাকের সাথে নিয়ে আসে টাকা, পাসপোর্ট, শাড়ি, থ্রিপিস, ওষুধ, কসমেটিক্স, গাঁজা, ফেনসিডিল, মদ, অস্ত্রসহ নানা ধরনের পণ্য। আবার বাংলাদেশ থেকে রফতানি পণ্যবাহী ট্রাকে যাচ্ছে স্বর্ণ, ডলারসহ বিভিন্ন পণ্য। এসব পণ্য পাচারের চালান বেনাপোল ও পেট্রাপোলে অনেকবার আটক হওয়ার পরও পাচারের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা থেকে যায় ধরা ছোয়ার বাইরে। আটক হয় ট্রা, ট্রাক চালক ও হেলপাররা। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) চার কেজি স্বর্ণসহ ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে বিএসএফ এর হাতেআটক হয়েছে ট্রাকসহ বাচ্চু নামে একজন বেনাপোলের ট্রাক চালক। 

ঢাকা মেট্রো-ট-১১-২০৩৩ নং গাড়ির মালিক শওকত মিয়া বলেন, গত মঙ্গলবার ঢাকা থেকে নাছির গ্লাস নিয়ে বেনাপোল এসে বদলি চালক বাচ্চু খান এর নিকট ভারত প্রবেশের জন্য ট্রাক হস্তান্তর করি। আমরা ঢাকা থেকে বেনাপোল আসলে এখানকার শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা আমাদের সরাসরি ভারতে প্রবেশ করতে দেয় না। এরা আমাদের নিকট থেকে গাড়ি নিয়ে ইউনিয়নের স্থানীয় লোকদের মারফত ভারতে গাড়ি পাঠায়। আমার পণ্য বোঝাই ট্রাক নিয়ে ভারত প্রবেশের পর খবর পাই বদলি চালক বাচ্চু খান চার কেজি স্বর্ণ নিয়ে আটক হয়েছে সে দেশের বিএসএফের হাতে। আমি গাড়ির অপেক্ষায় আজ ৬দিন বেনাপোল বন্দরে অপেক্ষা করছি।

একই ধরনের অভিযোগ করেন খুলনার ট্রাক চালক রতন মিয়া। তিনি বলেন, আমরা বেনাপোল আসলে একটি চক্র আমাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে এখানকার চালকদের দিয়ে ভারতে গাড়ি পাঠায়। আর এসব চালকরা এখান থেকে হুন্ডির টাকা ও স্বর্ণ পাচারের সাথে জড়িত হয়ে পড়ে। মাঝে মধ্যে এমন কয়েকটি চালান আটক হয়েছে বিএসএফ সদস্যদের হাতে। এর আগেও কয়েকটি স্বর্ণের চালানসহ আটক হয় এরকম বদলি চালকরা।

স্থানীয় কাদের আলী বলেন, বাংলাদেশি চালকরা শুধু স্বর্ণ ডলার পাচার করে না। ভারতীয় ট্রাক চালকরা আমদানি পণ্যর সাথে নিয়ে আসে ভারত থেকে শাড়ী, থ্রি-পিস, ফেনসিডিল, মদ ওষুধ, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটসহ নানা ধরনের পণ্য। মাঝে মধ্যে কাস্টমস, পুলিশ, বিজিবি সদস্যদের কাছে বেনাপোল বন্দর এলাকা থেকে কিছু চালান আটক হলেও বড় বড় অংশ চলে যায় দেশের অভ্যন্তরে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক ব্যক্তি বলেন, বেনাপোল বন্দর এলাকায় গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী চক্র। এরা বন্দরের কিছু অসাধুকর্মকর্তাদের যোগসাজসে নিয়ে আসে ভারত থেকে অবৈধ পণ্য। বিভিন্ন শেডে আনলোড করে অথবা ট্রাক টার্মিনাল বা কাঁচামালের ইয়ার্ডে নামিয়ে বন্দরের নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে যোগ সাজসে বের করে এসব পণ্য। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয় ওই চক্রটি। এভাবে আমদানি পণ্যর সাথে চোরাচালানি পণ্য এনে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে এই এলাকার কিছু অসাধু চক্র। এর মধ্যে অনেকেই সিএন্ডএফ ব্যবসার নাম করে এসব কাজ করে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তারা বিভিন্ন লোকের লাইসেন্স ভাড়া নিয়ে এ কাজ করে থাকে।

সম্প্রতি ক্যাপসি ক্যামের চালানের মধ্যে প্রায় কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়ে শাড়ি, থ্রি পিস, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, শিষা জাতীয় মাদক দ্রব্য নিয়ে আসে বন্দরের কাঁচামালের ইয়ার্ডে। পরে তা জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে আটক করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

বেনাপোল বন্দরের আনসার এর প্লাটুন কমান্ডার আবুল কালাম বলেন, আমার দায়িত্বকালে এ পর্যন্ত বন্দর এলাকায় যত অবৈধ পণ্য অথবা অবৈধভাবে কাউকে ঘোরাফেরা করতে দেখেছি তাকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে বন্দরের উর্ধতন কর্মকর্তাদের অবগত করিয়েছি। কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে আমরা সে ভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করেছি। 

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবির তরফদার বলেন, কাস্টমস, বন্দর মিলে যৌথভাবে সার্বক্ষণিক এ বিষয়ে নজর রাখা হয়। ইতোমধ্যে অনেক অবৈধ পণ্য চালান আটক করা হয়েছে। কিছু ট্রাক চালক তাদের কেবিনের মধ্যে এসব পণ্য নিয়ে আসে। ভারতে যে সব ট্রাক পণ্য নিয়ে যায় সেগুলো চেকপোস্টে বিজিবি-কাস্টমস যৌথ ভাবে তল্লাশি করে থাকে। তবে চালক যদি তার ট্রাকের মধ্যে কোন জিনিস লুকিয়ে নিয়ে যায় সেটা ধরা অসম্ভব। তারপরও আমরা নজরদারি বাড়িয়েছি। 
কেআই//