ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া হিংসাহিংসি আজও চলমান নারায়ণগঞ্জে (ভিডিও)

মুহাম্মদ নুরুন নবী

প্রকাশিত : ১২:২১ পিএম, ১২ জানুয়ারি ২০২২ বুধবার

‘খেলা হবে, খেলা’ নারায়ণগঞ্জের এমপি শামীম ওসমানের এ বক্তব্য বহু আগে থেকেই মানুষের মুখে মুখে। সেখানকার সিটি নির্বাচনেও কী তাহলে রাজনীতির খেলা বড় হয়ে দেখা দিবে? নাকি ভোটের সমীকরণে যোগ হবে ভিন্ন কোনো মাত্রা?

স্থানীয় সরকারের নির্বাচন অন্যকোন স্থানে হলে দেশবাসীর ততোটা আগ্রহ থাকে না। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়ে ওঠে জাতীয় ইস্যু। সবাই বাড়তি আগ্রহ নিয়ে তীক্ষ্ণ নজর রাখেন শিল্প নগরীর ভোটের রাজনীতির প্রতি। কাঁদা ছোঁড়াছুড়িও যেমন থাকে আবার ভোটের ফলাফলেও থাকে চমক। এবারও এ সিটিতে এর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে না। ভোটের সময় যত গড়াচ্ছে, বৈচিত্র আসছে এই নির্বাচনে।

নারায়ণগঞ্জের দুই হেভিওয়েট শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াত আইভির দ্বন্দ্বের একটা ইতিহাস আছে। শামীমের দাদা খান সাহেব ওসমান আলী আর আইভির বাবা আলী আহমেদ চুনকার জীবদ্দশায় শুরু হয়েছিল এই রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। উত্তরাধিকারসূত্রে সে হিংসাহিংসি আজও চলমান। 

ওসমান পরিবারের পুত্র এ কে এম শামসুজ্জোহার সমর্থনে নৌকার প্রার্থী হয়েছিলেন খোকা মহিউদ্দিন। পৌরসভা নির্বাচনে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন আলী আহমেদ চুনকার কাছে ১৯৭৩ সালে। তারপর থেকে যখনই নির্বাচন আসে নারায়ণগঞ্জের মাটিতে তখনই শুরু হয় রেষারেষি। ভোটের আগে-পরে তা কখনো সংঘাতেও গড়ায়। 

নারায়ণগঞ্জ সিটির প্রথম নির্বাচন হয় ২০১১ সালে। শাসমুজ্জোহার ছেলে শামীম ওসমানকে পরাজিত করেন চুনকার মেয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভী। এরপর থেকে সিটি নির্বাচনে প্রকাশ্যে মাঠে নেই শামীম ওসমান। তারপরও বছরজুড়ে আলোচনা-সমালোচনায় সরব আছেন তিনি।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘অদৃশ্য শক্তি যখন দৃশ্যমান হয়েগিয়েছে, অদৃশ্য শক্তিমান হোক আর দৃশ্যমান শক্তি হোক জন জোয়ারের কাছে, জনস্রোতের কাছে কোনদিনই কোন কিছু টিকে থাকে না। থাকবেও না।’

এবারের ভোটেও সন্দেহ দানা বেধেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারকে সমর্থন দিচ্ছেন ওসমান পরিবারের কেউ কেউ। 

এরইমধ্যে নৌকার পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শামীম ওসমান। 

নারায়নগঞ্জ নাগরিক কমিটির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি রফিউর রাব্বি বলেন, ‘তৈমুর আলম খন্দকার যে ওসমান পরিবারের সমর্থন নিয়ে দাঁড়িয়েছেন, এটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। জনতার প্রার্থী তৈমুর আলম না। সে বিশেষ একটা জায়গার প্রার্থী। এরা যে রাজনীতি করে এটা অপরাজনীতি, এটাকে রাজনীতি বলে না।’

২৭টির মধ্যে ৯টি ওয়ার্ড শামীম ওসমানের নির্বাচনী এলাকা। আর ১৮টি ওয়ার্ড তার বড় ভাই সেলিম ওসমানের সংসদীয় এলাকা।

জনগণের বিশ্লেষণ বলছে, ওয়ার্ডগুলোর কাউন্সিলরদের জেতাতে মরিয়া ওসমান পরিবার।   

সুশাসনের জন্যে নাগরিক কমিটির নারায়ণগঞ্জ সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা বলেন, ‘একটি অপশক্তি নানানভাবে চেষ্টা করে উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি করে, এবছরও তার ব্যতিক্রম নয়। উত্তপ্ত অবস্থাটা আছে, একইসাথে কাউন্সিলরদের মধ্যে একধরনের গরম পরিবেশ আমরা লক্ষ্য করছি।’ 

নারায়ণগঞ্জে দলীয় প্রার্থীর বিপরীতে লড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয়ের রেকর্ডও একেবারে কম নয়। 

স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘তারা যদি আমাকে সমর্থন দিয়ে থাকেন আমার অপরাধটা কোথায়? নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস এটা বলে, সরকার যাকে সাপোর্ট দেয় সে পাস করে না। বিএনপির আমলে আমরা যাকে দাঁড় করিয়েছিলাম সে পাস করেনি।’

তবে, সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন আর নৌকার জোয়ারে ভেসে যেতে পারে প্রতিপক্ষের সব ষড়যন্ত্র- এমন কথাও বলছেন নারায়ণগঞ্জের মানুষ।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বৈচিত্রময় নির্বাচনে সবসময় দেখা গেছে প্রতীকের চেয়ে ব্যক্তির ভাবমূর্তি প্রধান হয়ে ওঠে। এবারে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও দুই প্রার্থী প্রচার-প্রচারণায় দলের সমালোচনার দায় এড়াতে নিজেদের রাজনীতি ও মেয়র হিসেবে উন্নয়নকে তুলে ধরে সমর্থন চাইছেন। ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন ভোটার ঠিক কি রায় দেন সে উত্তর জানতে দেশবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। 

এএইচ/