ডাকরা গণহত্যার ইতিহাস বিকৃত করার প্রতিবাদে মানববন্ধন
বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৩:৩৪ পিএম, ১২ জানুয়ারি ২০২২ বুধবার
বাগেরহাটের রামপালের ডাকরা গণহত্যার ইতিহাস বিকৃত এবং আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে মানবন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
ডাকরা বধ্যভূমি সংরক্ষণ কমিটির উদ্যোগে বুধবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে রামপাল উপজেলার ডাকরা বধ্যভূমির সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধা, ডাকরা গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাগেরহাট জেলা পরিষদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অতিন্দ্রনাথ হালদার দুলাল, ডাকরা বধ্যভূমি সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক ও ডাকরা গণহত্যা বইয়ের লেখক বিষ্ণুপদ বাগছি, বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আলতাফ হোসেন, আব্দুল খালেক হাজী, আব্দুল হামিদ শেখ, শেখ আব্দুল হক, ডাকরা গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষক শিশির কুমার বিশ্বাস, পুনেন্দ বিশ্বাস, গণহত্যায় স্বজন হারানো মুক্তা বিশ্বাস, স্বপ্না রানী বিশ্বাস ও দিপক রায় প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, কেউ কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থে ডাকরা গণহত্যার ইতিহাস বিকৃত করছেন। এর অংশ হিসেবে মোংলা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শেখ আব্দুস সালামের নামে ডাকরা গণহত্যা জড়িয়ে মিথ্যা অপপ্রচার ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করছেন।
তারা বলেন, ১৯৭১ সালে ডাকরা গণহত্যার সাথে শেখ আব্দুস সালাম জড়িত ছিলেন না। বরং শেখ আব্দুস সালামের পরিবার মুক্তিযুদ্ধের সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের আশ্রয় ও খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপণ্য করার জন্য একটি দুষ্টচক্র অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এই অপপ্রচার ও ইতিহাস বিকৃতি রোধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন মানববন্ধনকারীরা।
ডাকরা বধ্যভূমি সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি প্রফুল্ল চন্দ্র রায় বলেন, অত্যাচারিত ও স্বজন হারা মানুষ আমরা। এই গণহত্যাকে কেন্দ্র করে কোন অপপ্রচার ও বিকৃত ইতিহাস রচিত হলে তা আমরা মেনে নেব না। ১৯৭১ সালে ডাকরা গণহত্যার সাথে শেখ আব্দুস সালামের কোন সম্পৃক্ততা ছিল না, বরং তার পরিবার ওই সময় হিন্দুদের আশ্রয় ও খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
গণহত্যা বইয়ের লেখক সাবেক প্রধান শিক্ষক বিষ্ণুপদ বাগছি বলেন, ডাকরা গণহত্যা বিষয়ক বই লেখার সুবাদে এই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা, নিহতদের স্বজন ও প্রতক্ষদর্শীদের সাথে আমি কথা বলেছি। গণহত্যার সাথে শেখ আব্দুস সালাম জড়িত এমন কথা কেউ বলেনি। গণহত্যার সাথে শেখ আব্দুস সালামকে জড়িয়ে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
বাগেরহাট জেলা পরিষদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অতিন্দ্রনাথ হালদার দুলাল বলেন, জীবন বাজী রেখে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করেছি। তার মানে এই নয় যে, নিরাপরাধ মানুষকে অপরাধী বলব। যে বা যারা ডাকরা গণহত্যার ইতিহাস বিকৃতের অপচেষ্টা করছেন আমি তাদেরকে ধীক্কার জানাই।
ডাকরা গণহত্যার প্রতক্ষদর্শী শিক্ষক শিশির কুমার বিশ্বাস বলেন, ১৯৭১ সালে শেখ আব্দুস সালাম ডাকরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণিতে পড়তেন। গণহত্যার সাথে সে কোনভাবে জড়িত ছিল না।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ২১ মে শুক্রবার বাগেরহাটের রজ্জব আলী ফকিরের রাজাকার বাহিনী রামপাল উপজেলার পেড়িখালী ইউনিয়নের ডাকরা গ্রামে ব্যাপক গণহত্যা চালায়। তারা সেদিন প্রায় ছয় শতাধিক সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। জেলার সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ডের মধ্যে এটি অন্যতম।
এএইচ/