ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

জুতাপেটা ও ৮ হাজার টাকায় নিস্পত্তি ধর্ষণের ঘটনা!

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৩:৫৬ পিএম, ১৭ জানুয়ারি ২০২২ সোমবার

নওগাঁর মান্দায় প্রতিবন্ধী একশিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রাম্য সালিশে মাত্র ৮ হাজার টাকায় বিষয়টি নিস্পত্তি করা হয়েছে। এসময় অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলাম সুটকাকে (৪৫) জুতাপেটা করে বিষয়টি গোপন রাখার জন্য বলা হয়েছে। 

সম্প্রতি ঘটনাটি ঘটেছে মান্দা উপজেলার কাঁশোপাড়া ইউনিয়নের বড় চক চম্পক গ্রামে। ঘটনার ১০ দিন পর সোমবার (১৭ জানুয়ারি) বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় দোষী ব্যক্তিকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে তাঁর দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তাঁরা। 

অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলাম সুটকা একই গ্রামের মৃত সদর উদ্দিন সরদারের ছেলে। সম্পর্কে তিনি ভুক্তভোগী শিশুটির দাদা হন।

স্থানীয়রা জানান, গত ৬ জানুয়ারি মাছ ধরার কথা বলে স্থানীয় খাল পাড়ের একটি সরিষার খেতে নিয়ে শিশুটিকে ধর্ষণ করেন আশরাফুল ইসলাম ওরফে সুটকা নামের ওই ব্যক্তি।

ভুক্তভোগী শিশুটির মা জানান, তাঁর মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী ও স্থানীয় বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত ৬ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে বাড়ির অদূরে নিজেদের আলু খেত দেখতে যায় সে। সেখানে থেকে মাছ ধরার কথা বলে আমার মামা শ্বশুর সুটকা মেয়েকে খালের পাড়ে নিয়ে যায়। পরে পাশের একটি সরিষা খেতে নিয়ে তাকে পাশবিক নির্যাতন করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘পরে অসুস্থ মেয়েকে বাড়ি পৌঁছে দেন মামা শ্বশুরের পরিবারের লোকজন। এসময় আমার স্বামী বাড়িতে ছিলেন না। রাতে বাড়ি ফিরলে ঘটনার বিষয়ে তাঁকে অবহিত করি। আর স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দিয়ে মেয়েকে সুস্থ করে তোলা হয়েছে।’ 

ভুক্তভোগী শিশুটির দাদা নেকবর আলী মোল্লা বলেন, নাতনিকে ধর্ষণের ঘটনায় গত ৯ জানুয়ারি রাতে প্রতিবেশী আনোয়ারা বিবির নেতৃত্বে তাঁর বাড়িতে সালিশের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে এলেঙ্গা গ্রামের নাসির উদ্দিন, স্থানীয় কামাল হোসেন, সৈয়দ আলী সরদার, দীনু কবিরাজ, আব্দুল জলিল, বাবুল হোসেন লেদু, জিন্নাতুন নেছাসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। 

তিনি আরও বলেন, সালিশে ধর্ষণের কথা স্বীকার করায় সুটকাকে জুতা পেটা করেন মাতবরেরা। পরে শিশুটির চিকিৎসার জন্য ৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। 

সালিশের আয়োজক আনোয়ারা বিবি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘বিষয়টি নিজেদের মধ্যে হওয়ায় নিষ্পত্তি করে দেয়া হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনা সালিশে নিষ্পত্তি করে দেয়া যায় কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা গ্রামের মানুষ, আইন বিষয়ে এতকিছু জানি না।

এদিকে ওই গ্রামের লুৎফর রহমান, আক্কেল আলী, মোজাম্মেল হকসহ অনেকেই এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করে অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলামকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।

এ প্রসঙ্গে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, ‘এ ধরণের কোনও ঘটনা আমার জানা নেই। কেউ অভিযোগও করেননি। খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’

এনএস//