জমি বিক্রি করায় বৃদ্ধ মা-বাবাকে ঘরছাড়া করলেন ছেলেরা
নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৩:৪৭ পিএম, ২১ জানুয়ারি ২০২২ শুক্রবার
বৃদ্ধ দম্পতি হাবিবুর রহমান ও সূর্য খাতুন
শেষ সম্বল ৫ শতক জমি বিক্রি করে দেয়াই কাল হয়ে দাঁড়ায় বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানের (৬৫) শেষ জীবনে। স্ত্রী সূর্য খাতুন (৫০) সহ তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেন ছেলেরা। এ অবস্থায় কোথাও আশ্রয় না পেয়ে শীতের রাতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিলেন তাঁরা।
খবর পেয়ে একটি টিম পাঠিয়ে তাদের উদ্ধার করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তমাল হোসেন। উদ্ধারের পর শীতবস্ত্রসহ খাবার দিয়ে ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে নিজ ঘরে তুলে দেন এবং তার ছেলেমেয়েদের কড়া হুশিয়ারীও দিয়ে আসেন।
খাবার ও শীতবস্ত্রসহ নিজ বাড়িতে ফিরতে পেরে মহা খুশী ওই বৃদ্ধ দম্পতি। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায়সহ ইউএনও মো. তমাল হোসেনের দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া করেন তারা। বৃহস্পতিবার রাতে মানবেতর এই ঘটনাটি ঘটেছে গুরুদাসপুর উপজেলার মহারাজপুর গ্রামে।
বৃদ্ধ হাবিবুর রহমান জানান, তার চার ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। সকলেরই বিয়ে হয়েছে। তার প্রথম স্ত্রী দীর্ঘদিন অসুস্থ থেকে মৃত্যুবরণ করেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর ছেলে-মেয়ে এবং ছেলের বউরা কেউ তাকে দেখাশোনা করেনি। তাই বাধ্য হয়ে শেষ জীবনে চলার সঙ্গী হিসাবে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তিনি নিজেও পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে কোনও কাজ করতে পারেন না। এছাড়া ছেলেমেয়েরা তাকে ভরণপোষণও দেয়না। এ জন্য নিজের কিছু জমি বিক্রি করে দিয়েছিলেন সংসার চালানোর জন্য।
তিনি বলেন, ওই জমি বিক্রি করায় তার ছেলেরা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। রাতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিলেন। কনকনে শীতে কাঁপছিলেন। তাদের এ খবর শুনে গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তমাল হোসেনের সহযোগিতায় তিনি নিজ বাড়িতে ফিরতে পেরেছেন এবং শীতবন্ত্র ও খাবার পেয়েছেন। এসময় ইউএন’র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
হাবিবুর রহমানের ছেলে ফুয়াদ রহমান জানান, তার মা মারা যাওয়ার পর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই স্ত্রীর কথা শুনে ৫ শতক জমি বিক্রি করেছেন তার বাবা। জমি বিক্রি করার কারণে তাদের বসবাসের সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে অভিমানে তার বাবাকে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীসহ বাড়ি থেকে বের করে দেন। এজন্য তারা অনুতপ্ত। এমন কাজ তারা আর কখনই করবেন না বলে জানান।
ইউএনও তমাল হোসেন জানান, নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের মহারাজপুর গ্রামের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানের ৪ ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারেন প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি। ওই দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়েই দুই শতক জায়গার ওপর তৈরি টিনশেড ঘরে বসবাস করতেন। ছেলে মেয়েদের কেউ বৃদ্ধ দম্পতিকে ভরণপোষণ দিতনা। নিজেদের জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য বৃদ্ধ হাবিবুর রহমান তার শেষ সম্বল ৫ শতক জমি বিক্রি করে দিলে সন্তানেরা ক্ষুদ্ধ হয়ে তাদের দুজনকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তার বাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর কোথাও আশ্রয় না পেয়ে পথে পথে ঘুরতে থাকেন। স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে জানতে পারেন বৃদ্ধ দম্পতি কোথাও আশ্রয় না পেয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং তীব্র শীতে জুবুথুবু হয়ে পড়েছেন। খবর শুনেই তিনি নিজ গাড়ি দিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ণ কর্মকর্তা কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ নজরুল ইসলাম ও স্কাউট সদস্য রাসেল আহমেদকে দিয়ে শীতবস্ত্র ও কিছু খাবার পৌঁছান ওই বৃদ্ধ দম্পতির কাছে। পরে বৃদ্ধ দম্পতিকে তাদের নিজ বাড়ি-ঘরে তুলে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তার ছেলেদের সাথে তিনি কথা বলেছেন। তারা আর কখনও যেন তার বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বের করে না দেন এবং নির্যাতন করা না করেন সে বিষয়ে অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে এমন ঘটনা ঘটালে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি তাদেরকে হুঁশিয়ার করেছেন।
এনএস//