নোয়াখালী নার্সিং কলেজের ৯১ শিক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:১৩ পিএম, ২১ জানুয়ারি ২০২২ শুক্রবার
সারাদেশের ন্যায় প্রতিদিনই নোয়াখালীতেও বাড়ছে সংক্রমণের হার। জেলা স্বাস্থ অধিদপ্তরের সবশেষ তথ্যমতে বর্তমান সংক্রমণের হার শতকরা ১৮ শতাংশ। এরইমধ্যে করোনার বন্ধ হয়ে গেছে নোয়াখালী নার্সিং ও মিডওয়াইফাই কলেজ। বর্তমানে ওই কলেজের ২৬৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯১ জন শিক্ষার্থী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি সংক্রমণের বিস্তার রোধে স্বশরীরে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে শিক্ষার্থীদের জেনারেল হাসপাতালের ক্লিনিকালি সেবাও। নেওয়া হয়েছে নানা সতর্কতা। তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপসর্গ কম থাকায় অনলাইনে পাঠদান চালু রাখা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, গত ৩ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির শীতকালিন ছুটি ছিল। ছুটি শেষে ক্যাম্পাস ও আবাসিক হোস্টোলে ফিরে আসেন শিক্ষার্থীরা। গত ১৭ তারিখ সোমবার প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীর জ্বর ও কাশি শুরু হলে দ্রুত জেনারেল হাপসাতালে নিয়ে অ্যান্টিজেন রেপিড টেস্ট করা হয়। কিছুক্ষণ পর তার করোনা পজিটিব রিপোর্ট আসে। এরপর হোস্টেলে তার সাথে থাকা বাকিদের নমুনা পরীক্ষা করে আরও কয়েকজনের শরীরে শনাক্ত হয় ভাইরাসটি। পরবর্তীতে কলেজ কর্তৃপক্ষ ২৬৬ শিক্ষার্থীর নমুনা পরীক্ষা করলে ৯১ জনের শনাক্ত হয় করোনা। গত ১৮ জানুয়ারি থেকে পাঠদান বন্ধের ঘোষণা আসে।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) বিকেলে নাসিং এ গিয়ে দেখা যায়, পুরো ক্যাম্পাসই ফাঁকা। করোনার থাবায় মুখরিত এ ক্যাম্পাস এখন স্তব্দ। তবে ভবনের আবাসিক কক্ষ ও বারান্দায় মুখে মাস্ক পরে নিজেদের মধ্যে খুনসুটিতে সময় কাটাতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। ক্লাসের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ক্লিনিকালী সেবা দিতেন রোগীদের। কিন্তু শিক্ষার্থীরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় এখন সেবা দিতেও বেগ পেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। একসঙ্গে এত শিক্ষার্থী আক্রান্ত হওয়ায় উদ্বেগে পড়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে আক্রান্তরা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকায় স্বস্তি আছে কিছুটা। শিক্ষার্থীরা যাতে আতংকিত না হয়, সে জন্য মানসিক সাপোর্টের পাশাপাশি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষার্থী লিপি ইমাম বলেন, আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের কয়েকজনের জ্বর ও হালকা কাশি আছে। তবে সবাই মানসিকভাবে ভালো আছে। এরমধ্যে বর্তমানে কয়েকজনের কোন প্রকার উপসর্গ নেই।
তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রিয়াল সরকার বলেন, অসুস্থদের আমাদের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষক ও চিকিৎসকদের পরামর্শমতে তাদের ওষুধ ও ভিটামিন সি যুক্ত খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স আবদুল্যাহ্ ফারুক বলেন, ৯১ শিক্ষার্থীর করোনা পজিটিভ হওয়ায় হাসপাতালে রোগীদের স্বাস্থসেবা দিতে স্বাভাবিকের তুলনায় আমাদের কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। কারণ ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের জন্য বড় ধরনের একটি সাপোর্ট।
নাসিং ইনস্ট্রাক্টর ইনচার্জ খালেদা খানম জানান, সকল শিক্ষার্থীর দুই ডোজ টিকা দেওয়া থাকায় সবাই অন্য রোগীদের তুলনায় ভালো আছে। প্রতিষ্ঠানের হোস্টেলে আক্রান্তদের আলাদা কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। সবার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিটি কক্ষে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্কসহ সুরক্ষা সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তাদের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হলেও আগামী শনিবার থেকে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই এখন সুস্থ, তাদের নমুনা পুনরায় পরীক্ষা করে নেগেটিভ আসার পর স্বশরীরে আবার পাঠদান চালু করা হবে।
তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থীরা ছাড়া কলেজে দায়িত্বরত শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারিরা সবাই সুস্থ রয়েছেন। সবাইকে স্বাস্থবিধি মেনে সাবধানে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কেআই//