ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

তরুণদের জন্য ই-কমার্স ও এর পলিসি সহজীকরণের আহ্বান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:২০ পিএম, ২২ জানুয়ারি ২০২২ শনিবার | আপডেট: ০৮:৪৭ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০২২ রবিবার

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিন দিন ইকমার্স এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভোক্তারা এখন তরুণ উদ্যোক্তাদের দ্বারা তৈরিকৃত  বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল পণ্য এবং সেবা নিতে পাচ্ছে । তবে, এখনো এই  ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি তাদের সম্ভাব্য  লক্ষে পৌছতে পারেনি। এর সম্প্রসারণ এবং অগ্রগতি বিভিন্ন কারণেই প্রতিনিয়ত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রেনিউর ল্যাব ইয়ুথ অ্যান্ড ইনোভেশন ট্রাস্ট এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা উদ্যোক্তাদের উন্নতির লক্ষে কাজ করে থাকে এবং তাই তারা উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসা গঠন ও নতুন ব্যাবসা তৈরির প্রক্রিয়াকে  সহজ করার লক্ষ্যে "বিজনেস বুস্ট বাংলাদেশ" নামের একটি প্রকল্প  হাতে নেয় ২০২১ সালে। ব্যবসা সংক্রান্ত নীতির সংস্কারের জন্য তারা ইতোমধ্যে একটি জরিপ পরিচালনা করেছে এবং শত শত যুব উদ্যোক্তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে এই বিষয়ে। এই প্রক্রিয়ায় আইনজীবী, নীতিনির্ধারক এবং ব্যবসায় নিবন্ধকদের সাথে সুসংহত আলোচনাও সম্পাদন করা হয়েছে।

এই উদ্যোগের অংশ হিসাবে ২২ জানুয়ারী, ২০২২ ডিজিটাল ব্যবসা এবং ই-কমার্সের উপর একটি ২-ঘন্টার ভার্চুয়াল গোলটেবিল আয়োজন করা হয়েছিল যেখানে তারা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যা সার্বজনীনভাবে প্রাপ্ত জরিপটির ফলাফলকে সামগ্রিকভাবে প্রকাশ করেছে।

এই গোলটেবিল আলোচনায়, বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে ব্যবসা প্রক্রিয়ার নানান  অসুবিধা এবং উদ্যোক্তাদের জন্য আরও অনুকূল পরিবেশ কীভাবে সৃষ্টি করা যায় সে সম্পর্কে তাদের মতামত প্রকাশ করেছেন। এই উদ্যোগের চূড়ান্ত লক্ষ্য হল স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের বৃদ্ধিতে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত নীতির সংস্কার করা। গোলটেবিলটি বাংলাদেশে ই-কমার্স ও স্টার্টআপকে বুস্টিং নিয়ে আলোচনার জন্য বিভিন্ন ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব, স্টার্টআপ উদ্যোক্তা এবং নীতিনির্ধারকদের একত্রিত করে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের মত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বিশেষজ্ঞ এবং নীতিনির্ধারক তাদের মতামত উপস্থাপন করেছেন; তাজদিন হাসান, সিএমও, দারাজ-আলিবাবা গ্রুপ; রেজওয়ানুল হক, হেড অব ইকমার্স, a2i প্রোগ্রাম, বাংলাদেশের আইসিটি বিভাগ; শাহারিয়ার হাসান জিসান, জাতীয় পরামর্শক, a2i, বাংলাদেশ আইসিটি বিভাগ; সাবেরা আনোয়ার, প্রতিষ্ঠাতা, গো-দেশী-মেড ইন বাংলাদেশ, প্রমুখ সকলেই এই বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানের ভিত্তিতে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং ধারণা উপস্থাপন করেন।

গোলটেবিল আলোচনাটির সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন প্রেনিউর ল্যাব ইয়ুথ অ্যান্ড ইনোভেশন ট্রাস্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রাখশান্দা রুখাম। প্রেনিউর ল্যাব ইয়ুথ অ্যান্ড ইনোভেশন ট্রাস্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জনাব আরিফ নিজামী এই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন। 

ড. আতিউর রহমান বলেন , “রিপোর্টটি অসাধান ভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে এবং সঠিক সমস্যা গুলো সামনে এসেছে এই রিপোর্ট এর মাধ্যমে। তিনি আরও বলেন  আমাদের ব্যবসার প্রক্রিয়া এবং রেগুলেশনগুলি  সহজ করে নিয়ে আসতে হবে এবং এর পাশাপাশি যথাযথ নজরদারি এবং পর্যবেক্ষণ  প্রয়োজন। ব্যবসার একটি বড় সমস্যা হল প্রত্যেক বছর ট্রেড লাইসেন্স রিনিউ করা । উক্ত প্রক্রিয়াটি ৫ বছর ব্যবধানে  একবার হওয়া উচিত যারা ছোট উদ্যোক্তা তাদের জন্য। অনেক সময় রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া এর খরচ নতুন উদ্ধক্তাদের জন্য অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়ে উঠে। “

ব্যবসার নতুন রূপ, ই-কমার্স সারা বিশ্বের মতো দেশেও দ্রুত গতিতে প্রসারিত হচ্ছে। অনেক মানুষ, বিশেষ করে নারীরা নতুন ব্যবাসা তৈরিতে আগ্রহ বেশি প্রকাশ করছে । জনাব তাজদিন হাসান বলেন, " যখন একটি কোম্পানি উন্নতির শীর্ষে থাকে তখন কিছু ক্ষেত্রে তাদের ব্যবসায় নতুন কৌশল আনতে হয় ইনোভেশন আনার জন্য এবং ইনোভেশন নিয়ে আসে স্বচ্ছতা আর বিশ্বাস যা অনেক গুরুত্বপূর্ণ  ই-কমার্স ব্যবসায়। " তিনি আরও বলেন,  " এটা খুব ভাল দিন যে ই-কমার্স এখন মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।  ই-কমার্সকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা উচিত এবং আমাদের উচিত ইনোভেশন, অবকাঠামো এবং লজিস্টিকসে আরও বেশি বিনিয়োগ করা ” 

রেজওয়ানুল হক বলেন, “উদ্যোক্তা এবং উদ্যোগগুলির পরিবহন ব্যবস্থা সহজ করার জন্য, a2i দ্বারা CLTP (সেন্ট্রাল লজিস্টিক ট্রাফিক প্ল্যাটফর্ম) নামে একটি নতুন ট্র্যাফিক প্ল্যাটফর্মও প্রবর্তন করা হচ্ছে, যার দ্বারা প্রতিটি পার্সেলের একটি নিজস্ব আইডি থাকবে এবং এটি প্রতিটি পার্সেলকে কেন্দ্রীয়ভাবে ট্র্যাক করতে সক্ষম হবে।” শাহারিয়ার হাসান জিসান বলেন, “অনেক সরকারি ও আধা-সরকারি সংস্থা উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে যাতে তারা একটি মানসম্মত প্রক্রিয়া বজায় রাখতে পারে এবং ইকমার্সের বৃদ্ধির জন্য, তাদের যে মান অনুসরণ করা উচিত, তারা তা বজায় রাখতে পারে।”

নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করা সাবেরা আনোয়ার বলেন, “বিসিক বা এসএমই-এর কর্মসূচী খুবই সীমিত এবং যারা আসলে এই সেক্টরে কাজ করছেন তারা তাদের থেকে উল্লেখযোগ্য সহায়তা পাচ্ছেন না। তাই এর একটি সঠিকভাবে দেখাশোনা করা গুরুত্বপূর্ণ”

ইকমার্স এবং স্টার্টআপ খাত বর্তমানে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। কিন্তু এই শিল্পটি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে বিপুল চ্যালেঞ্জেরও সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যদি এই সমস্যাগুলি সমাধান করা যায় এবং সংস্কার বাস্তবায়িত করা যায় তবে এই খাতটি সমাজকে একটি উজ্জ্বল এবং প্রতিশ্রুতিশীল ভবিষ্যত প্রদান করতে সক্ষম হবে। সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য এই ধরণের আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। 

আরকে//