পাঁচ দিনেও সন্ধান মেলেনি স্কুলছাত্রের, এলাকায় নানা গুঞ্জন
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১০:৪১ এএম, ২৫ জানুয়ারি ২০২২ মঙ্গলবার
মায়ের সঙ্গে আবু হুরায়রা
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তালতলায় নিখোঁজের পাঁচ দিনেও সন্ধান মেলেনি স্কুলছাত্র আবু হুরায়রার। এদিকে এই নিখোঁজ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় জন্ম নিয়েছে নানা ধরনের কুসংস্কার। তাকে জ্বীনে তুলে নিয়েছে বলে গুঞ্জন ওঠেছে।
বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আবু হুরায়রার পরিবারের লোকজন স্থানীয় কথিত এক কবিরাজের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তবে স্কুলছাত্রকে উদ্ধারে জোর চেষ্টা চালান হচ্ছে, জানিয়েছে পুলিশ।
নিখোঁজ স্কুলছাত্র এলাকার ভুট্টা ব্যবসায়ী ও কৃষক আবদুল বারেকের ছেলে। পরিবারে রয়েছে তার ছয় বোন। আবু হুরায়রা এ বছর চুয়াডাঙ্গা ভি জে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ১৯ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ৩টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে আবু হুরায়রা পার্শ্ববর্তী রনজু হক নামের এক প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়তে যায়। ওই শিক্ষকের ঘরে বই-ব্যাগ রেখে সে বাইরে বের হয়। এরপর থেকে তাকে আর পাওয়া যায়নি।
ওই দিন সন্ধ্যায় পরিবারের লোকজন তাকে খুঁজতে বের হয়। রাতে খবর দেয় হয় পুলিশকে। এলাকায় মাইকিংও করা হয়। ধারণা করা হয়, বাড়ির পাশে পুকুরে পড়েছে সে, তার জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা ওই পুকুরে দীর্ঘসময় ধরে তল্লাশি চালান। কিন্তু তার সন্ধান মেলেনি।
এদিকে, গ্রামের সব মানুষের মুখে মুখে একই কথা- আবু হুরায়রাকে জ্বীনরা তুলে নিয়ে গেছে। তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সিরাজগঞ্জ জেলার কথিত এক কবিরাজ ৫০ হাজার টাকার দাবি করেছেন। তাকে ৩০ হাজার টাকা অগ্রিম দেয়াও হয়েছে। ছেলে ফেরত পাওয়ার পর বাকি ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে।
তবে টাকা দেওয়ার কথা অস্বীকার করলেও সিরাজগঞ্জের ওই কবিরাজের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা স্বীকার করেছেন শিশু আবু হুরায়রার বাবা আবদুল বারেক। তিনি বলেন, ছেলে ফেরত পেলে টাকা দিতে কোনো আপত্তি নেই। ওই কবিরাজের মোবাইল নম্বরটা চাইলে তিনি দিতে অস্বীকৃতি জানান।
ছেলের হারানোর পর থেকে তারা এখন পাগলপ্রায়। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম বলে জানান তিনি।
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, গত বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে একইভাবে গ্রামের কৃষক হায়াত আলী (৭০) নিখোঁজ হয়েছিলেন। ঘটনার পাঁচ দিন পর সন্ধ্যায় তাকে মাঠে পাওয়া যায়। পরে গ্রামবাসীর মনে বিশ্বাস জন্ম নেয় যে ওই কবিরাজের মাধ্যমে জ্বীনরা রেখে গিয়েছিল।
এসব গুঞ্জনে আসল ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, আমরা সবকিছু মাথায় রেখেই শিশু আবু হুরায়রাকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যে শিক্ষকের কাছে ব্যাগ রেখে বের হয়ে নিখোঁজ হয়েছে, ওই শিক্ষককেও সন্দেহে রাখা হয়েছে।
এছাড়া নিখোঁজের বাবার সঙ্গে গ্রামের কারও কোনো ধরনের বিরোধ আছে কি না, এসবও আমরা খতিয়ে দেখছি, বলেন ওসি।
এএইচ/