ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

কমলাপুর পর্যন্ত বাড়বে মেট্র রেল, ৮০০০ কোটি টাকা বাড়তে পারে ব্যয়

একুশে টেলিভিশন  

প্রকাশিত : ০৭:৩২ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০২২ বৃহস্পতিবার

কমলাপুর পর্যন্ত যাবে মেট্র রেল। এ জন্য নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় প্রায় আট হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাস্তবায়নকারী সংস্থার এমডি।

এ প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ের পর একনেকের অনুমোদন পেলে ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) ৬ প্রকল্প বা উত্তরা থেকে মতিঝিল হয়ে প্রস্তাবিত কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রো রেলের মোট নির্মাণ ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।

বর্তমানে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলমান প্রকল্পটির মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।

মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত আরও ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার মেট্রো রেল সম্প্রসারণ এবং স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের উঠানামা, নিরাপত্তা, বয়স্ক, মহিলা এবং প্রতিবন্ধীসহ সব ধরনের যাত্রী পরিষেবার সুযোগ সুবিধা বাড়াতে অতিরিক্ত এ ব্যয় হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা ডিএমটিসিএল এমডি এম এ এন সিদ্দিক।

বৃহস্পতিবার ঢাকাবাসীর স্বপ্নের এ প্রকল্পে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার পথে ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।

এর মধ্য দিয়ে দেশের প্রথম এ মেট্রো রেলের পুরো অংশের নিরবচ্ছিন্ন কাঠামো দৃশ্যমান হল।

বৃহস্পতিবার তোপখানা রোডে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ৫৮২ ও ৫৮৩ নম্বর পিয়ারের মাঝে সর্বশেষ অংশে ভায়াডাক্টটি বসানো হয়।

পিয়ারগুলোর উপরে যে কংক্রিটের কাঠামো বসিয়ে একটির সঙ্গে আরেকটি যুক্ত করা হয়, তাকে বলে ভায়াডাক্ট। এটির ওপরই বসবে রেললাইন, তার ওপর দিয়ে চলবে বৈদ্যুতিক ট্রেন।

প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা ডিএমটিসিএল এমডি এম এ এন সিদ্দিক বলেন “কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণসহ পুরো প্রকল্পে যাত্রীদের প্রবেশ, বের হওয়া এবং বিশ্বমানের যাত্রী পরিষেবা দেওয়ার জন্য আমরা প্রায় আট হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি।"

তিনি বলেন, এ প্রস্তাব আমরা মন্ত্রণালয়ের পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় যাচাই বাছাই করে তা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাবে। এরপর তা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার এবং পরের বছর ডিসেম্বরের মধ্যে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৮ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার মেট্রোরেল চালু করা হবে, জানান তিনি।

সবশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি ৭৪ শতাংশ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৯০ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭৩ দশমিক ০৮ শতাংশ।

প্রকল্পটির প্রায় শেষ পর্যায়ে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ঢাকার বিদ্যমান গণপরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবহারবান্ধব মেট্রো রেল চালুর বিষয়টি মাথায় রেখে ঢোকার ও বাহির হওয়ার পয়েন্টগুলো জনসাধারণের জন্য স্বাচ্ছন্দময় করা হবে। এ জন্য নতুন কাজের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, যেখানে মেট্রোরেলের স্টেশন থাকবে সেখানে প্রচুর মানুষের চলাফেরা হবে। কিন্তু ঢাকা শহরে বর্তমানে সড়ক পরিবহন ও সড়কের যে অবস্থা তাতে এই চাপ সামলানো সম্ভব হবে না।

“নগরীর সব রাস্তা প্রয়োজনীয় প্রশস্ত না থাকায় প্রয়োজনীয় জায়গায় প্রয়োজনে ভূমি অধিগ্রহণ করে ফুটপাতসহ সড়ক প্রশস্ত করা হবে। যাতে সড়কে যানজট সৃষ্টি না হয় এবং যাত্রীরা যাতে ভোগান্তিতে না পড়েন।“

উন্নত বিশ্বের মতো যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দের জন্য যা করার প্রয়োজন সবগুলোই নতুন প্রস্তাবে সংযোজন করা হয়েছে, যোগ করেন তিনি।

নতুন প্রস্তাবে মেট্রো রেলের স্টেশন প্লাজা এবং ট্রান্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্টকে (টিওডি) প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে। এখন মূল প্রকল্পের সঙ্গে এগুলোর সম্পর্ক নেই।

তিনি বলেন, “মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বিস্তারিত নকশা এবং ভূমি অধিগ্রহণ কাজের শেষ পর্যায় আসছি। আশা করি এ দুটি কাজ আগামী এক দুই মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তারপরেই এই অংশের মূল কাজ শুরু হয়ে যাবে।”

ডিটিসিএল এমডি বলেন, মূলত প্রস্তাবিত অতিরিক্ত কাজের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের বেশি ব্যয় হবে। ভূমি অধিগ্রহণ (ব্যয়) আগে দেড়গুণ ছিল। এখন এটা তিনগুণ দিতে হবে।

“এছাড়া ডলারের বিপরীতে আমাদের টাকা বিনিময় হারে পরিবর্তন এসেছে। অর্থাৎ ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে। সেখানে অতিরিক্ত অর্থ যাচ্ছে। এছাড়া সিডি ভ্যাট বা উন্নয়ন প্রকল্পের মূসক ও শুল্ক হার পরিবর্তন হওয়ায় এখাতেও ব্যয় বেড়েছে।“

তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে এক পয়সাও বেশি দেওয়া হবে না, যোগ করেন তিনি।

এসময় তিনি যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য উচ্চ প্রযুক্তির সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং সেখানে ফেইস ডিটেকশনের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান।

এছাড়া প্রতিটি স্টেশনে যেখানে যে পরিমাণ যাত্রী হতে পারে, সেভাবে উঠানামার জন্য এস্কেলেটর, সিঁড়ি, র‌্যাম্প, লিফট এবং বয়স্ক, রোগী বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করা হবে।

এসবি/