ট্রাকচাপায় রাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে রাতভর বিক্ষোভ, প্রক্টর প্রত্যাহার
রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১০:০৫ এএম, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ বুধবার | আপডেট: ১০:০৬ এএম, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ বুধবার
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আবাসিক হলের সামনে ট্রাকচাপায় শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাতভর বিক্ষোভ করেছে সহপাঠী ও শিক্ষার্থীরা। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পাঁচটি ট্রাকে আগুন দিয়ে প্রথমে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে, পরে উপাচার্য বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। এসময় শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে রাতেই প্রক্টরকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৮টায় শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে নির্মাণাধীন ভবনের পাথরবাহী একটি ট্রাক মোটরসাইকেল আরোহী তিন শিক্ষার্থীকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে নিহত হন চারুকলা অনুষদের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ও রাবি ড্রামা অ্যাসোসিয়েশন (রুডা) সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাবিব হিমেল। এ ঘটনায় একই বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান রিমেলকে গুরুতর অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এসময় প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে দুর্ঘটনাস্থলে নিহত হিমেলের লাশটি পড়ে থাকতে দেখা যায়।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা কয়েক দফায় শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। পরে পৌনে ১১টায় রামেক হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় লাশটি।
উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার এই ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড বলে আখ্যায়িত করেন।
এদিকে, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী দুর্ঘটনাস্থলে এসে জড়ো হন। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নির্মাণের মালবাহী পাঁটি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া নির্মাণস্থলে ব্যাপক ভাঙচুর ও দুটি কক্ষে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এসময় পুলিশ ও ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চাইলে শিক্ষার্থীদের বাধায় তারা ফিরে যান।
শিক্ষার্থীদের একটি অংশ রাতে প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড় তিন ঘন্টা অবরোধ করে রাখে। আরেকটি অংশ উপাচার্যের বাসভবনের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এসময় গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা উপস্থিত হলে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে তারাও স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
মঙ্গলবার রাত দেড়টায় উপাচার্য ভবনের সামনে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যান রাজশাহী সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়েরুজ্জামান লিটন। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু উপস্থিত ছিলেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের পদত্যাগসহ নিহতের পরিবারকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ, নিহতের বোনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি প্রদান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পাল্টানো এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।
শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ও উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার।
এ সময়ে উপাচার্য ঘোষণা দেন প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক লিয়াকত আলীকে প্রত্যাহার করা হবে। এছাড়াও এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।
শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে একসাথে এই সমস্যার সমাধানকল্পে কাজ করার আশ্বাস প্রদান করেন উপাচার্য।
এএইচ/