ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

ভাষা বাঁক নিয়েছে বহুবার (ভিডিও)

অখিল পোদ্দার

প্রকাশিত : ১১:১০ এএম, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ শুক্রবার | আপডেট: ১১:১১ এএম, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ শুক্রবার

শুরুটা অষ্টম শতকে। আর অষ্টাদশ শতকে এসে বাংলা ভাষা লাভ করে বর্তমান রূপ। যার আদি নিদর্শন চর্যাপদ। প্রায় ১৩শ’ বছর পুরোনো বাংলা ভাষার বিকাশ।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে বাঙালির ভাষালিপি যোগসূত্র স্থাপন করেছিল বহু বছর আগেই। 
সময়ের প্রবাহমানতায় বাংলা ভাষা বাঁক নিয়েছে বহুবার।

বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক (গবেষণা) ড. তপন বাগচী বলেন, ‘আমরা যে বাংলা ভাষায় কথা বলি সেটি নিকবেদের সংস্কৃতের সাথে তুলনীয়। সংস্কৃত থেকে বাংলা ভাষা এসেছে এটা আমরা অনেকেই ধরে নেই, কিন্তু এটি ঠিক নয়। সংস্কৃত ভাষার পাশাপাশি প্রাকৃত ভাষার সন্ধান আমরা পাই। মাগধী প্রাকৃত, যা মগদ রাজ্যে পাওয়া গিয়েছিল। সেই মাগধী প্রাকৃত ভাষার বির্বতিত রূপ আজকের বাংলা ভাষা। তার প্রাথমিক নির্দশন হাজার বছর আগে চর্চাপদে পেয়েছিলাম।

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘সঞ্জয় কুমার চট্টপাধ্যায় বলেছেন মাগধী প্রাকৃত থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে। পরবর্তীকালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন মাগধী প্রাকৃত নয় গৌর অপভ্রংশ থেকে বাংলা ভাষার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা কিন্তু ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতটাকে মান্য করি।’

প্রাচীন বাংলা, মধ্য বাংলা কিংবা আধুনিক যুগের বাংলার যে রূপ রয়েছে তার সাথে মাগধী প্রাকৃতের মিল আছে এমন প্রমাণও দিয়েছেন পণ্ডিতেরা। 

অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘চায়নারা না আসলে চিনি, চাল শব্দগুলো পেতাম না। যদি একটা সুনামি না হতো তাহলে সুনামি শব্দ হতো না। মোঘল আমলে ফার্সি ছিল আমাদের রাজ ভাষা। ফলে বাঙালিরা ফার্সি ভাষা শিখিছে। হিন্দু-মুসলিম মিলে সেই ফার্সি ভাষ শিখিছে। ব্রিটিশ আমলে ইংরেজি ছিল রাষ্ট্রভাষা। সুতরাং আমরা ইংরেজি শিখেছি। এখন বাংলা রাষ্ট্রভাষা। অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সূত্রে নানা কিছুর ভেতর দিয়ে বিচিত্র ভাষা এসেছে, বহু ভাষা এসেছে। এখন হয়তো আমরা জানিও না যে বালতি একটা পর্তুগিজ শব্দ।’

ড. তপন বাগচী বলেন, ‘নেপালে পেয়েছিলাম চর্চাপদের ভাষা। আজকের ২২ সালে এসেও সেই ভাষা অনেকের কাছে দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ ভাষা পরিবর্তিত হয়েছে মুখ থেকে লেখ্য রূপে, লেখ্য রূপে পরিবর্তন হতে গিয়ে সেই বর্ণমালা বা লিপি ধারণ করেছে। সেই লিপিরও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে।’

অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘এই ফেব্রুয়ারিতে আমাদের অঙ্গিকার হওয়া উচিত শুদ্ধ ভাষায় কথা বলবো, শুদ্ধ বাংলায় কথা বলবো এবং মুদ্ধ বাংলার চর্চা করবো। অন্যদিকে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে যদি বাংলা ভাষাকে আমরা না মিলাতে পারি তাহলে বাংলা ভাষা খুব বেশি অগ্রসর হতে পারবে না।’

মাঝে মাঝে পরিবর্তন ঘটলেও বৈদিক যুগ থেকে অবিচ্ছিন্ন প্রবাহে বাংলা ভাষা চলে এসেছে রূপান্তরের মাধ্যমে নানান নামে। 

এএইচ/