ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

ভালবেসে বিয়ে, আড়াই বছর গ্রামছাড়া কৃষক পরিবার

নাটোর প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৩:১৬ পিএম, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ শুক্রবার

সন্তান কোলে সুমাইয়া খাতুন

সন্তান কোলে সুমাইয়া খাতুন

নাটোরের সিংড়া উপজেলায় ছেলে ভালবেসে বিয়ে করার অপরাধে এক কৃষক পরিবারকে গ্রামছাড়া করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও প্রতিপক্ষের হুমকির মুখে এখনও ওই ভূক্তভোগী পরিবার গ্রামে ফিরতে পারছেন না। নানা মহলে অভিযোগ করেও পাননি প্রতিকার।

উপরুন্তু ঘটনার পর লুট করা হয়েছে ওই কৃষক মজিবরের গরু-ছাগল সহ বাড়ির আসবাবপত্র।  ঘটনাটি ঘটেছে নাটোরের সিংড়া 

ঘটনাটি উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের সরিষাবাড়ী গ্রামের কৃষক মজিবুর রহমানের পরিবারে। পরিবারের সদস্যরা গ্রামে ফিরে আসার জন্য প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের কাছে আকুতি জানিয়েছেন।

ভূক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের জুন মাসে উপজেলার সরিষাবাড়ী গ্রামের কৃষক মজিবুর রহমালের ছেলে মো. সেলিম ও প্রতিবেশী শাহ আলমের মেয়ে সুমাইয়া খাতুন প্রেমের টানে ঘর ছেড়ে পালিয়ে বিয়ে করেন। কিন্তু মেয়ের ভালোবাসাকে মেনে না নিয়ে সুমাইয়ার বাবা শাহ আলম প্রভাব খাটিয়ে কৃষক মজিবুর রহমানের দুই ছেলে ও স্ত্রীসহ তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে সিংড়া থানায় একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। 

আর এই সুযোগে লোকজন নিয়ে কৃষক মজিবুর রহমানের বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও ভাংচুর করেন প্রতিপক্ষ শাহ আলম। 

ঘটনার এই আড়াই বছরে সেলিম ও সুমাইয়া দম্পতির ঘরে জন্ম নিয়েছে একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান। হুমকির মুখে এখনও দেড় বছর বয়সী ওই শিশু সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ওই দম্পতি।  

সুমাইয়া খাতুন বলেন, ‘আমরা ভালোবেসে বিয়ে করেছি। এখন আমাদের ঘরে একটি সন্তান রয়েছে। কিন্তু আমার বাবার হুমকির কারণে প্রায় আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও পরিবার নিয়ে গ্রামে ফিরতে পারছি না। বরং মিথ্যা মামলা দিয়ে আমার স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে হয়রানি করা হচ্ছে।’

সুমাইয়া খাতুনের শ্বশুর-শাশুড়ি

প্রতিবেশীরা বলেন, প্রেমের টানে পালিয়ে ছেলে-মেয়ে বিয়ে করেছে। কিন্তু একটি কৃষক পরিবারকে প্রায় আড়াই বছর ধরে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। তারা নিতান্তই গরীব। প্রতিপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় অসহায় ও নিরীহ মানুষ তাদের পক্ষ নিতে চায় না।

সুমাইয়ার শ্বশুর মজিবর বলেন, ‘প্রায় আড়াই বছর আগে আমার ছেলে ভালবেসে বিয়ে করায় শাহ আলম লোকজনসহ বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট চালায়। তারা দেড়শ’ মণ ধান, তিনটা গরুসহ বাড়িতে যা ছিল সব লুট করে নিয়ে যায়। এক কাপড়ে আমাদের গ্রামছাড়া করা হয়েছে। আমার তিন ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে তার লোকেরা।’
   
প্রতিপক্ষ শাহ আলম বলেন, ‘তার মেয়ে অপহরণ করার অভিযোগ এনে তিনি থানায় মামলা করেছেন। তবে ওই কৃষক মজিবুর রহমানের বাড়িতে লুটপাট করা ও তাদের কাউকে কোন হুমকি প্রদান করার অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। কাউকে কোন হুমকি প্রদান করা হয়নি বরং তারাই মামলার কারণে বাড়ি ছেড়েছে।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য আকবর হোসেন বলেন, ‘ওই গ্রামের একটি ছেলে ও মেয়ে ভালোবেসে বিয়ে করায় একটি পরিবারের সদস্যরা মামলা-হামলার ভয়ে বেশ কিছুদিন ধরে বাড়ি ছাড়া। কারণ মেয়ের বাবা ধনী লোক বলে দুর্বলের পক্ষে কেউ কথা বলতে চায় না। তাই বিষয়টির গ্রাম্যভাবে কোন সমাধান করা সম্ভব হয়নি।’

ডাহিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মামুন সিরাজুল মজিদ বলেন, ‘একটি প্রেমের বিয়েকে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে বলে জেনেছি। যদি কেউ গ্রাম ছাড়া হয়ে থাকে তবে বিষয়টি সুরাহার উদ্যোগ নেওয়া হবে ‘ 
 
সিংড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নুর-এ-আলম সিদ্দিকী বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে ওই গ্রামে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। মামলা ও তৃতীয় পক্ষের কথা শুনে ওই কৃষক পরিবার গ্রামে আসেনি। গ্রামে থাকলে তাদের কোন সমস্যা হবে না।’ 

এএইচ/