কুয়ায় পড়ে যাওয়া শিশুর জন্য রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায় মরক্কো
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:৪০ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ শনিবার
মরক্কোয় গত কয়েকদিন ধরে পাঁচ বছর বয়সী যে শিশুটি একটি গভীর কুয়ার ভেতরে আটকা পড়ে আছে জরুরি উদ্ধার কর্মীরা তাকে তুলে আনার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বলা হচ্ছে এই উদ্ধার অভিযান অত্যন্ত জটিল, তবে উদ্ধার-কর্মীরা তাদের অভিযানের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন। কিন্তু একই সঙ্গে ভূমিধ্বসের আশঙ্কায় শিশুটিকে উদ্ধারের এই তৎপরতা আরো বেশি বিপদজনক হয়ে উঠেছে।
উত্তর আফ্রিকার এই দেশটির স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে শিশুটির নাম রায়ান। তার পিতা চারদিন আগে যখন কুয়াটি মেরামতের কাজ করছিলেন তখন সে হঠাৎ করে ৩০ মিটার (১০৪ ফুট) গভীরে পড়ে যায়।
মরক্কোর উত্তরাঞ্চলীয় একটি গ্রামে শিশুটিকে উদ্ধারের এই তৎপরতা মরক্কোও প্রতিবেশি আলজেরিয়ার মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। উদ্ধারকাজ দেখতে ঘটনাস্থলে জড়ো হয়েছে হাজার হাজার মানুষ।
সমবেত লোকজন হর্ষ-ধ্বনি দিয়ে উদ্ধারকারীদের উৎসাহ যোগাচ্ছেন। এবং মরক্কোর সংবাদ মাধ্যম ও সোশাল মিডিয়াতে এই খবরটি নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। রায়ানকে উদ্ধার করে কূপের ভেতর থেকে বের করে আনা হচ্ছে- এরকম একটি দৃশ্য দেখতে সারা দেশ যেন রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে।
রায়ানকে উদ্ধারের এই চেষ্টা গোটা আরব বিশ্বে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে।
কুয়াটি বেশি প্রশস্ত না হওয়ার কারণে এখন সেখানে বড় আকারের গর্ত তৈরি করে শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। বুলডোজার দিয়ে এই গর্ত করা হচ্ছে কুয়ার সমান্তরালে। কিন্তু সেখানকার মাটিতে পাথর ও বালি থাকার কারণে জায়গাটি ধসে পড়ারও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
উদ্ধার-কর্মীরা বলছেন, তারা বালকটির প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। গত মঙ্গলবার থেকে বালক রায়ানকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
তারা আশা করছেন গর্তটি যখন কুয়ার গভীরতার সমান পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাবে তখন আড়াআড়ি সুড়ঙ্গ তৈরি করে বালকটিকে বের করে আনা সম্ভব হবে।
একজন উদ্ধারকারী আবদেসালাম মাকোদি শুক্রবার দুপুরে বলেন, "আমরা গত তিনদিন ধরে একটানা কাজ করছি। ফলে লোকজন ক্লান্ত হয়ে পড়তে শুরু করেছে। কিন্তু তারপরেও পুরো টিম ধৈর্য ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।"
বালক রায়ানকে উদ্ধারের কাজে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় একজন বিশেষজ্ঞ মোহামেদ ইয়ানি কোয়াহাবি, তিনি বলেছেন কুয়াটি সরু হওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি জানান স্থানীয় অনেক স্বেচ্ছাসেবী ও উদ্ধার-কর্মীরা বার বার কুয়ার নিচে নামার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
"সমস্যা হলো কুয়াটি খুব সরু। এর ব্যাস মাত্র ২৫ সেমি (৯.৮ ইঞ্চি)। কুয়ার ২৮ মিটার গভীরে গিয়ে এটি আরো বেশি সরু হয়ে গেছে। ফলে আমরা তার কাছে পৌঁছাতে পারছি না," বলেন তিনি।
উদ্ধারকারী দলের একজন বলেন, "আমরা যতোই তার কাছে যাচ্ছি, কুয়াটি ততোই সরু হয়ে যাচ্ছে। সেখান দিয়ে আরো নিচে নামা কঠিন। একারণে আমরা একটা গর্ত করে ভেতরে নামার চেষ্টা করছি।"
তবে কর্তৃপক্ষের ভয় হচ্ছে এর ফলে দুর্ঘটনাক্রমে ভূমিধ্বসের মতো ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে।
রায়ানের পিতা, দুর্ঘটনার সময় যিনি সেখানে কাজ করছিলেন, বলেন এর পর থেকে তিনি এক পলকও ঘুমাতে পারেন নি এবং রায়ানের মা খুব ভেঙে পড়েছেন।
"ওই মুহূর্তে আমি তার ওপর থেকে চোখ সরিয়ে নিয়েছিলাম, আর তখনই সে কুয়ার ভেতরে পড়ে গেল। এর পর থেকে আমি ঘুমাইনি," স্থানীয় একটি সংবাদ মাধ্যমে একথা বলেছেন রায়ানের পিতা।
মরক্কোর মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় কাঁদছিলেন রায়ানের মা। তিনি বলেন, "পুরো পরিবারটিই তাকে খুঁজতে গিয়েছিল। তখন আমরা বুঝতে পারি যে সে আসলে কুয়ার ভেতরে পড়ে গেছে। তাকে ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে আমি এখনও আশা ছাড়িনি।"
বৃহস্পতিবার কুয়ার ভেতরে একটি ক্যামেরা ফেলা হয়েছিল। তার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে শিশুটির এখনও জ্ঞান আছে। যদিও তার মাথায় সামান্য আঘাতের কিছু চিহ্ন রয়েছে। শিশুটির যাতে শ্বাস নিতে কষ্ট না হয় সেজন্য উদ্ধার-কর্মীরা কুয়ার ভেতরে অক্সিজেনের মাস্ক ফেলেছেন। ভেতরে খাবার এবং পানিও দেওয়া হয়েছে।
কুয়াটির কাছে চিকিৎসকদের একটি দলও অবস্থান করছে। যে কোনো সময়ে রায়ানকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে তারা প্রস্তুত। তাকে কুয়ার ভেতর থেকে তুলে আনার পর দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সেখানে একটি হেলিকপ্টারও পাঠানো হয়েছে। সূত্র: বিবিসি
এসি