বাংলাদেশের সঙ্গে লতার নিবিড় সম্পর্ক
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:১৯ পিএম, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ রবিবার | আপডেট: ০৩:৪৬ পিএম, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ রবিবার
মেলোডির রানি লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। কারণ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই সময় বিভিন্ন স্থানে গান পরিবেশন করে বাঙালি রিফিউজিদের জন্য তহবিলও সংগ্রহ করেছিলেন এই কিংবদন্তী। বিখ্যাত অভিনেতা সুনীল দত্তসহ ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্লেনে করে বিভিন্ন স্থানে গান পরিবেশন করতে যেতেন তারা।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তার জন্য ভারতীয় শিল্পীরা এগিয়ে আসেন। গান গেয়ে তহবিল সংগ্রহের পাশাপাশি গড়ে তুলেছিলেন বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাপী সচেতনতা।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র স্থাপনেও অর্থ সাহায্য করেছিলেন তারা। সে সময় লতা মঙ্গেশকর ছাড়াও আশা ভোঁসলে, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, কিশোর কুমার, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মোহাম্মদ রফি, মান্না দে, সলিল চৌধুরী প্রমুখ শিল্পীরা বাংলাদেশের জন্য সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
বাংলাদেশের সেই ঘটনা নিয়ে লতা মঙ্গেশকর টুইটারেও একটি বার্তা প্রকাশ করেছিলেন। সে বার্তায় তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে এসে সংগীত পরিবেশনের স্মৃতিচারণা করেছিলেন।
টুইটটি তিনি করেছিলেন ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। টুইটারে লতা মঙ্গেশকর ১৯৭১ সালে অজন্তা শিল্পীগোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি লিখেছিলেন, “নমস্কার। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হতেই আমি সুনীল দত্তের গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশ গিয়ে অনেক কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিলাম। সে সময়ে সেনাবাহিনীর উড়োজাহাজে করে সব জায়গায় গিয়েছিলাম।”
শুধু তাই নয়, লতা মঙ্গেশকর বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে গানও গেয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে মমতাজ আলীর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘রক্তাক্ত বাংলা’ নামে চলচ্চিত্রে প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক সলিল চৌধুরী সুরে ‘ও দাদাভাই’ শিরোনামের গান গেয়েছিলেন এই কিংবদন্তী সঙ্গীত শিল্পী। এটিই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে গাওয়া লতা মঙ্গেশকরের একমাত্র গান।
কোকিলকণ্ঠী এ সুরসম্রাজ্ঞীর মৃত্যুতে ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনেও শোক নেমে এসেছে। তার চলে যাওয়া যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না বাংলাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন।
স্মৃতিচারণ করে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, “পৃথিবীর নিয়মে তিনি (লতা মঙ্গেশকর) চলে গেলেন। ভাবতাম, তিনি হয়তো কখনও যাবেন না। এমন একটা মনের ভেতর চিন্তা হতো। লতা মঙ্গেশকর নাই পৃথিবীতে এটা ভাবাই যায় না। আমি ভাগ্যবান যে লতাজির সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল, কথা বলতে পেরেছিলাম।”
সাবিনা ইয়াসমিন আরো বলেন, “সেদিনের স্মৃতি খুব মনে পড়ছে। এত বড় মাপের শিল্পী, কিন্তু কাছে গিয়ে বোঝার উপায় নেই। তিনি যত বড় শিল্পী ছিলেন, মানুষ হিসেবে ছিলেন ততই বিনয়ী।”
সংগীতের নক্ষত্র এই গায়িকার সান্নিধ্য পেয়েছিলেন বাংলাদেশের গায়িকা আঁখি আলমগীর। ২০১৭ সালে তার বাসায় গিয়েছিলেন তিনি।
সেদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে গণমাধ্যমে আঁখি আলমগীর বলেন, “একটি সিনেমার গান রেকর্ডিং এর জন্য আমরা ভারতে গিয়েছিলাম। রেকর্ডিং এর আগে আগে লতাজির সঙ্গে দেখা করার সুযোগটা হয়েছিল। আর সেটা করে দিয়েছিলেন রুনা আন্টি (রুনা লায়লা)। ২৬ মার্চ অস্ট্রেলিয়ায় আমার একটা শো ছিল। তার সঙ্গে দেখা করার জন্য সেই শোটা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কারণ দেখা করার তারিখ ছিল ২৭ মার্চ। শো করে ভারতে গিয়ে দেখা করা কঠিন ছিল। তাই শো ছেড়ে দিয়ে ভারতে চলে যাই। লতাজির সঙ্গে দেখা করার আগের রাতে আমি একটুও ঘুমাতে পারিনি। আমি যে লতাজির কি পরিমাণ ভক্ত সেটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। ছোটবেলায় উনার গান ক্যাসেট প্লেয়ার ও রেডিওতে শুনে শুনে মুখস্ত করে ফেলতাম। অনেকেই হয়তো তার ভক্ত কিন্তু আমার মতো এতটা কাছে যাওয়ার সুযোগ কয়জন পায়! আমি সেই সুযোগটা পেয়ে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।”
আঁখি আরো বলেন, “লতাজি আমাদের সময় দিয়েছিলেন ২৭ মার্চ বিকেল ৪ টায়। কথা ছিল ৩০ মিনিট সময় দেবেন। কিন্তু তিনি আমাদের অবাক করে দিয়ে আড়াই ঘণ্টা সময় দিলেন। বলা যায় এই সময়টা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলোর একটি।”
লতা মঙ্গেশকর রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা ১২ মিনিটে হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গানের জগতে তিনি রয়ে গেলেন প্রতিদ্বন্দ্বীহীন এক সঙ্গীতসম্রাজ্ঞী হয়ে।
এসএ/