ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

স্মৃতির পাতায় লতার দুর্লভ ১০ ছবি

একুশে টেলিভিশন  

প্রকাশিত : ০৪:৩১ পিএম, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ রবিবার | আপডেট: ০৪:৩৩ পিএম, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ রবিবার

সুরের সরস্বতীর স্বর্গযাত্রায় ছন্দ হারিয়েছে ভারতীয় সঙ্গীতাঙ্গন। সংগীতের ইতিহাসে একটি সুরেলা অধ্যায়ের সমাপ্তি। তবে এই কিংবদন্তির সৃষ্ট অসংখ্য গান রয়ে যাবে মানুষের হৃদয়ে। ৯২ বছরের দীর্ঘ জীবনকে কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করেননি লতা মঙ্গেশকর। 

নিজের জন্মদিনের স্মৃতিচারণ করে এক সাক্ষাৎকারে লতা মঙ্গেশকর বলেছিলেন, ‘আমার বাবা যখন মারা যান, তখন আমার বয়স পাঁচ। বাবার (দীননাথ মঙ্গেশকর) মৃত্যুর পর আমাদের পারিবারিক অবস্থা খুবই সংকটপূর্ণ হয়ে পড়ে। মা আমাদের নিয়ে হিমশিম খেয়েছেন। তাই ওই সময় আলাদা করে জন্মদিন নিয়ে ভাবার সময় পাইনি। তবে আমার কাছে জন্মদিনের সেরা উপহার বাবা-মায়ের আশীর্বাদ। জন্মদিনে তাদের কথা বেশি মনে পড়ে।’ 

গানের পরিবারে জন্ম, বাবা বাড়িতে অনেককেই গান শেখান। অথচ মেয়েটি ছোটবেলা থেকে গান শিখলেও তেমন কোনো অগ্রগতি ছিল না। একদিনের ঘটনা, খানিকটা সময়ের জন্য তার বাবাকে বাইরে যেতে হল। এক ছাত্রকে বলে গেলেন গান যেন ঠিকমতো চলে। ফিরে এসে দরজায় দাঁড়িয়ে দেখলেন তার মেয়ে ছাত্রের গাওয়া রাগ শুধরে দিচ্ছে। পাঁচ বছর বয়স থেকে মেয়েটি বাবার লেখা মারাঠি গীতি নাটকে ছোট ছোট চরিত্রে অংশগ্রহণ করতেন।

একদিন লতার বাবার নাটকে নারদ মুনির চরিত্রের অভিনেতা কোনো কারণে অনুপস্থিত। তার আবার গানও গাওয়ার কথা। লতা তার বাবাকে এসে বলল,  সে নারদের ভূমিকায় অভিনয় করতে চায়। মেয়ের প্রস্তাব তার বাবা শুনেই বাতিল করে দিলেন। মেয়ের বায়নায় বাবা শেষমেশ রাজি হলেন। মেয়ের অভিনয় আর গানে দর্শকরা তো বেজায় খুশী। তারা ফের তার গান ও অভিনয়ের দাবি জানায়।  

মা-বাবা ও আশা-ঊষার সঙ্গে লতা 

কিন্তু বাবা বেশী দিন পৃথিবীতে রইলেন না। ফলে গোটা পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ে ১৩ বছর বয়সী মেয়ের ওপর। বাবার মৃত্যুর পর সঙ্গীত পরিচালক গুলাম হায়দার হন লতার গুরু। ৮৪তম জন্মদিনে লতা বলেছিলেন, গুলাম হায়দার তার জীবনে ‘গডফাদার’ ছিলেন। গুলাম হায়দারের হাত ধরে তার জীবনে সুযোগ এল ‘মজবুর’ (১৯৪৮) চলচ্চিত্রে ‘দিল মেরা তোড়া, মুঝে কাহি কা না ছোড়া’ গানটি গাওয়ার। এই এক গানেই বলিউড ইন্ডাস্ট্রি নতুন এই গায়িকাকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য হয়। 

প্রথম ছবিতে আশা ও লতা

কয়েক যুগের সঙ্গীত জীবনে লতা নিজের গান একেবারেই শোনেন নি। কারণ শুনলেই তার মন খারাপ হয়ে যাবে। মনে হবে, এটা এভাবে না করে অন্যভাবে করলে ভাল হত। মনে হবে, এই সুরটা অন্যরকম হতে পারত। তাই নিজের গান থেকে লতা দূরে দূরেই থেকে গেছেন।  

দুই বোন, লতা ও আশা 

অন্যদিকে ৭৫ বছরের গানের কেরিয়ারে তিনি বোধহয় তিন কী চার দিন রেকর্ডিংয়ে ঠিক সময়ে পৌঁছতে পারেননি। তবে কী কারণে দেরি হয়েছিল সেটাও তার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মনে আছে। স্টুডিওতে কোনও দিন চেয়ারে বসে গান রেকর্ড করেন নি। কারণ মনে করতেন গাইতে হলে দাঁড়িয়ে গাইতে হয়। আর যে দিন রেকর্ডিং থাকত সে দিন চা ছাড়া লতা প্রায় কিছুই খেতেন না। 

সাদাকালো ছবিতে যে কিশোরীকে দেখা যাচ্ছে তিনি লতা মঙ্গেশকর। কিন্তু এটা কেউ বলতে পারবেন কী যে লতা মঙ্গেশকরের কোলে ছোট্ট শিশুটি কে? দুই-তিন মাসের শিশুটি অভিনেতা ঋষি কাপুর। লতা মঙ্গেশকরকে উদ্দেশ্য করে ঋষি কাপুর নিজেই ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন ছবিটি। 

মেলোডির রানি লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। কারণ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই সময় বিভিন্ন স্থানে গান পরিবেশন করে বাঙালি রিফিউজিদের জন্য তহবিলও সংগ্রহ করেছিলেন এই কিংবদন্তী। বিখ্যাত অভিনেতা সুনীল দত্তসহ ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্লেনে করে বিভিন্ন স্থানে গান পরিবেশন করতে যেতেন তারা।

এ নিয়ে লতা মঙ্গেশকর টুইটারে একটি বার্তা প্রকাশ করেছিলেন। সে বার্তায় তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে এসে সংগীত পরিবেশনের স্মৃতিচারণা করেছিলেন।

টুইটটি তিনি করেছিলেন ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। টুইটারে লতা মঙ্গেশকর ১৯৭১ সালে অজন্তা শিল্পীগোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করেন। 

এসবি/