ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

হিজাব নিয়ে কী হচ্ছে কর্ণাটকে? 

একুশে টেলিভিশন  

প্রকাশিত : ০৪:৪০ পিএম, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ বুধবার

নানা ভাষা ও বৈচিত্রপূর্ণ সংস্কৃতির দেশ ভারত। পৃথিবীর খুব কম দেশই আছে যেখানে একই ভূখণ্ডে মিলেমিশে এতো মানুষের বাস। দীর্ঘদিন অসাম্প্রদায়িক চেতনার চর্চাতেই যেন দেশটিতে টিকে আছে জাতিতে জাতিতে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। কিন্তু সম্প্রতি দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের কর্ণাটক রাজ্যের একটি ঘটনা নাড়া দিয়েছে বিশ্ব মহলে। 

ঘটনার শুরু কর্ণাটকের একটি কলেজ থেকে। সম্প্রতি রাজ্যের উদুপি জেলার কুন্ডাপুরের একটি কলেজে শিক্ষার্থীদের হিজাব পরায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, রাজ্য সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী হিজাব পরা তাদের ইউনিফর্ম নীতিবিরুদ্ধ। এনিয়েই বিতর্কের শুরু। 

এই নিষেধাজ্ঞার পরেও গেল বৃহস্পতিবার কিছু শিক্ষার্থী হিজাব পরে কলেজে আসলে প্রথমে তাদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়।

এ সময় আবারও তর্ক-বিতর্ক শুরু হলে শেষ পর্যন্ত ক্যাম্পসে ঢুকতে দেয়া হয় তাদের। তবে কোনও ক্লাসে অংশ নিতে না দিয়ে আলাদা কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়। এই পুরো বিষয়টির একটি ভিডিও আবার ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। 

এরপরেই জানা যায় একটি নয়, এলাকার বেশ কয়েকটি কলেজেই এই নিয়ম করা হয়েছে। একে একে সেই কলেজগুলোতেও শুরু হয় প্রতিবাদ। যা বেগবান হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আরেকটি ভিডিও শেয়ারের পর। 

রাজ্যের মাণ্ড্য প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, হিজাব পরা এক মুসলিম শিক্ষার্থীকে ঘিরে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিচ্ছে একদল যুবক। যাদের প্রত্যেকের গলায় গেরুয়া উত্তরীয়। এ অবস্থায় ভয় না পেয়ে ওই মুসলিম শিক্ষার্থীকে ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দিয়ে পাল্টা জবাব দিতেও দেখা যায়। 

ভিডিওর ওই মুসলিম শিক্ষার্থীর নাম মুসকান। যিনি পরবর্তীতে গণমাধ্যমে বলেন, “আমি যখন কলেজে ঢুকছিলাম, তখন বাধা দেওয়া হয়। জিজ্ঞেস করা হয়, আমি কেন বোরখা পরে এসেছি? কিন্তু আমি এসব নিয়ে মোটেও চিন্তিত হইনি। তাই আমাকে দেখে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়া শুরু হলে আমিও পাল্টা ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দিতে থাকি।’’ 

মুসকানের দাবি, উপস্থিত গেরুয়া উত্তরীয় পরিহিতদের কয়েক জন তারই সহপাঠী। তবে বেশির ভাগই বহিরাগত। 

এই পরিস্থিতিতে মুসকানের ভাষ্য, “ওরা আমাদের পড়াশোনা করার অধিকারটাই ছিনিয়ে নিতে চায়, এক টুকরো কাপড়ের জন্য!’’

পরিস্থিতি যখন এমন, ঠিক সেই মুহূর্তে এই বিষয়ে সরব ভারতের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।

তিনি বলেন, “নারী কোন কাপড় পরবে, না পরবে সেটি ঠিক করার অধিকার নারীর এবং ভারতীয় সংবিধানে তাদের সেই অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।’’

বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাইও। ঘটনাটিকে ‘ভয়ানক’ বলেই উল্লেখ করেছেন তিনি।

টুইটারে লিখেছেন, “হিজাব পরে মেয়েদের স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এটা ভয়ঙ্কর ঘটনা।’’ 

এ সময় ভারতের রাজনীতিকদের উদ্দেশ্যে তিনি লেখেন, “মুসলিম নারীদের কোণঠাসা করার চেষ্টা এ বার বন্ধ করুন আপনারা।’’

এদিকে এরইমধ্যে কর্নাটকের সীমা ছাড়িয়ে হিজাব বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে বিজেপি শাসিত রাজ্য মধ্যপ্রদেশ এবং পুদুচেরিতেও।

এ বিষয়ে আন্দোলকারীরা আদালতে দুটি আবেদন করেছেন। একটি হল, ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী একজন নারী কী পরবেন তা বেছে নেওয়া তার মৌলিক অধিকার। অপরটি হল, কোনও রাজ্য সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য এমন কোনও ড্রেস কোডের নিয়ম জারি করতে পারে কিনা, যা হিজাবকে নিষিদ্ধ করে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কর্ণাটক রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জারি করা নতুন ড্রেসকোডে কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য হিজাব নিষিদ্ধ হয়ে যায় রাজ্যটিতে। 

এবিষয়ে আন্দোলনকারীদের আইনজীবী জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের এমন নির্দেশনা একইসঙ্গে অসংবিধানিক এবং বেআইনী।  

এসবি/