ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

কোভিড পজিটিভ পরবর্তী দৈনিক খাদ্যতালিকা কেমন হওয়া উচিৎ

শামসুন নাহার স্মৃতি

প্রকাশিত : ১০:০৬ এএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ শুক্রবার | আপডেট: ১০:০৭ এএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ শুক্রবার

কোভিড পজিটিভকালীন আমরা সাধারণত একটু সচেতন থাকি। তখন নিয়মিত এবং সময়মতো খাদ্য গ্রহণ করে থাকি সচরাচর। কিন্তু যখনই ১৪ দিন পর করোনা টেস্টে নেগেটিভ রেজাল্ট আসে, তখনই মনে হয় যেন আমি সুস্থ হয়ে গেছি। কিন্তু আসল ধাক্কাটা আসে তখনই। 

কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পরেও অনেকের নানান ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে, বিশেষ করে তীব্র দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। কারণ শরীরের ডিফেন্স সিস্টেম দুর্বল হয়ে যায়, তাই দ্রুত এনার্জি দিতে পারে এমন খাবার রাখতে হবে দৈনিক খাদ্য তালিকায়। কোভিড পজিটিভকালীন থেকেই খাবারের রুচি কমে যায় অনেকেরই। তাই অল্প খাবারে অধিক পুষ্টি ও ক্যালরি পাওয়ার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

  • দৈনিক ক্যালরির ৪৫ থেকে ৫৫ শতাংশ নিতে হবে কার্বোহাইড্রেট থেকে। তবে শুধুমাত্র সিম্পল কার্বোহাইড্রেট না নিয়ে এর সঙ্গে ডায়েটারি ফাইবারযুক্ত কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট পরিমাণ নিশ্চিত করতে হবে।

  • ১৫ থেকে ২০ ভাগ নিতে হবে প্রথম শ্রেণির প্রোটিন থেকে। এক্ষেত্রে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ডি, ক্যালসিয়াম, জিংকসমৃদ্ধ ডিম থাকতে হবে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়। প্রয়োজনবোধে একটি বা দুটি ডিম খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও মাছ-মাংশের সঙ্গে পাঁচমিশালি ডালও খেতে পারেন পর্যাপ্ত পরিমাণে।

  • ২৫ থেকে ৩০ ভাগ নিতে হবে ফ্যাট জাতীয় খাবার থেকে। এক্ষেত্রে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ওমেগা থ্রি, ওমেগা সিক্স পেতে হলে মাছের তেলের বিকল্প নাই। এর সঙ্গে অলিভ অয়েল, ঘি, বাদাম, বাটার, পিনাট বাটার, সামুদ্রিক মাছ, দুধ ইত্যাদি খাবার খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। 

  • পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ তাজা শাকসবজি ও ফলমূল নিতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন সি যুক্ত ফল, যেমন- লেবু, কমলা, মাল্টা, পেয়ারা, বরই, আপেল ইত্যাদি রাখতে হবে।

  • কোভিড পজিটিভ পরবর্তী সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন বা ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে। যেমন- ভিটামিন ডি, সি, ফলিক এসিড, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিংক ইত্যাদি খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তবে সাপ্লিমেন্টের চেয়ে প্রাকৃতিকভাবে এসব পুষ্টি উপাদান গ্রহণের পরিমাণ বাড়াতে হবে। প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা পূরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী ফল, ফলের জুস বা শরবত চিনি ছাড়া বা মধু দিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

  • দ্রুত এনার্জি পাওয়ার জন্য সবজি ও প্রোটিনযুক্ত খাবার, যেমন- ভেজিটেবল চিকেন স্যুপ, সালাদ, ভেজিটেবল চিকেন খিচুড়ি, সবজি খিচুড়ি ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। কিংবা ডাল সবজি করলে এর সাথে এক টুকরো লেবুর রস দিয়ে খেলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি-এর পাশাপাশি আয়রনও পেয়ে যাবেন পর্যাপ্ত পরিমাণে।

পানি ও পানীয় জাতীয় খাবারঃ
কোভিড পজিটিভ-এর চিকিৎসা ও প্রতিরোধে যেমন পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খাওয়া জরুরি, ঠিক তেমনি পজিটিভ পরবর্তী সময়েও শরীরকে চাঙ্গা করতে ও সুস্থ রাখতে সঠিক পরিমাণে তরল ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। শারীরিক চাহিদামাফিক বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। 

এছাড়াও চিনি ছাড়া টক দইয়ের লাচ্ছি, লেবু পানি, ফলের জুস, পাতলা করে দুধ-সাগু, পাতলা করে জাও, ডাবের পানি, পাতলা করে সবজি খিচুড়ি, এক চা চামচ বাটার দিয়ে লেবু, লেবু চা, আদা চা খাওয়া যেতে পারে। প্রতি দুই ঘণ্টায় অল্প অল্প করে কিছু তরল খাবার খাওয়া উচিত। কারণ এতে করে দুর্বল শরীর খুব দ্রুত শক্তি অর্জন করতে পারে।

সুষম খাবারের পাশাপাশি দ্রুত সুস্থতা লাভের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিতে হবে। দৈনিক কমপক্ষে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে এবং সময় মত খাবার গ্রহণ করতে হবে। 

কোভিড পজিটিভ এবং পজিটিভ পরবর্তী সময়ের জন্য নমুনা খাদ্যতালিকাঃ

ভোর ৬টা বা সাড়ে ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠেই হালকা কিছু নিতে পারেন, যেমন- আদা, গোলমরিচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, তেজপাতা দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে এর সাথে এক টুকরো লেবুর রস দিয়ে এক ধরনের চা তৈরি করতে পারেন। প্রয়োজনে এই চায়ে অল্প একটু হলুদের গুঁড়ো দিতে পারেন। কারণ আমাদের খুব ভালো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দরকার। কোভিড কালীন সময়ে রোগ প্রতিরোধক হিসেবে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের বিকল্প নেই এবং একটি বিস্কুট খেতে পারেন। 

সকালের নাস্তাঃ
(৮.০০-৮.৩০টা) 
আটার রুটি ২ অথবা ৩টি,
মিক্সসড সবজি ১ কাপ/ সব্জি-ডাল ১ কাপ/চিকেন স্যুপ ১ কাপ,
১টি ডিম সিদ্ধ, 

অথবা
পাতলা করে সবজি খিচুড়ি ১ কাপ + ডিম ১টি
২ টেবিল চামচ ওটস, ১ কাপ লো ফ্যাট মিল্ক, ১টি কলা, ১ চা চামচ কিসমিস দিয়ে খেতে পারেন + ১টি ডিম সিদ্ধ 

বেলা ১১টায়
যে কোনও ফল ১টি, যেমন- সবুজ আপেল/পেয়ারা/বাউ কুল/নাশপাতি/কমলা/মাল্টা ইত্যাদি। 
অথবা মৌসুমী ফল ১ কাপ বা ১ গ্লাস ডাবের পানি।
এবং এর সাথে অল্প কিছু বাদাম খেতে পারেন।

দুপুরের খাবারঃ
(১.০০-২.০০টা)
ভাত ১ বা ২ কাপ,
যে কোনও শাক ২ টেবিল চামচ,
মিক্সড সবজি হাফ কাপ,
মাছ বা মাংশ ২ পিস,
লেবু, শশা

দুপুরের খাবারের ১ ঘণ্টা পর ১/৪ কাপ টক দই

বিকালের নাস্তাঃ
(৪.৩০-৫.৩০টা)
ভেজিটেবল চিকেন স্যুপ ২ কাপ/ফ্রুটস কাস্টারড ১ কাপ/১টি ওটস বিস্কুট, ১ কাপ মসলা লিকার চা + যে কোনও ১টি ফল

রাতের খাবারঃ
(৮.০০-৯.০০টা)
রুটি ২টি,
সবজি ১ কাপ,
মাছ/মাংশ ১ পিস

অথবা
ওটস, সবজি, চিকেন, খিচুড়ি ১ কাপ, লেবু, শশা

অথবা
চিকেন স্যুপ ১ কাপ 
২ পিস ব্রাউন ব্রেড

আর রাতে ঘুমানোর আগে ১ গ্লাস লো ফ্যাট মিল্ক অথবা ১/২ কাপ টক দই। ক্যাফেইনযুক্ত খাবার আয়রন শোষণে বাধা দেয়। তাই এই সময় এ অতিরিক্ত চা-কফি গ্রহণ না করাই ভালো।

লেখক- ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিষ্ট এন্ড ডায়েটিশিয়ান, উত্তরা ক্রিসেন্ট হসপিটাল, উত্তরা, ঢাকা।

এনএস//