ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

শিক্ষার ভিত যাদের হাতে, তাদেরই পদমর্যাদার ভিত নড়বড়ে (ভিডিও)

মুশফিকা নাজনীন

প্রকাশিত : ০৩:১০ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ শুক্রবার | আপডেট: ০৩:১১ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ শুক্রবার

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদমর্যাদা তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর সমমানের। শিক্ষার ভিত যাদের হাতে রচিত হয় তাদেরই যদি এমন পদমর্যাদা দেয়া হয় তাহলে মানসম্মত শিক্ষা কি অর্জিত হবে ? বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মতে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মুল্যায়নে বড় গলদ রয়েছে। শিক্ষকতা পেশায় সম্মানজনক বেতন, গ্রেড ও মর্যাদা দিয়ে শিক্ষকদের সামাজিক নেতৃত্বস্থানীয় ভুমিকায় আনার পরামর্শ তার। 

নুরননবী শান্ত। চাকরী জীবনে প্রথম বেছে নিয়েছিলেন শিক্ষকতা পেশা। কিছুদিন পর সেই পেশা ছেড়ে যোগ দেন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায়। শিক্ষকতা পেশায় যে বেতন পেতেন তা দিয়ে জীবনমান অর্জন তো দূরে থাক সচ্ছলভাবে সংসার চালানোই সম্ভব ছিলো না। 

তিনি বলেন, “আমাদের এখানে শিক্ষকরা ভালো থাকবেন, ভালো খাবেন, ভালো পোশাক করবেন এই উপায়টা নেই। অনেক পিএইচডি করা মানুষ আছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কারণ সেখানে শিক্ষকের বেতন স্কেল সবচেয়ে বেশি।“

অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশে প্রাথমিকের শিক্ষকরা বেতন পান তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারীদের সমান। একজন সদ্য নিয়োগ পাওয়া সহকারী শিক্ষকের বাড়িভাড়া চিকি’সা যাতায়াত সব মিলে সর্বসাক্যুলে বেতন ১৮ হাজার ৬৫০ টাকা। আর প্রধান শিক্ষকের বেতন ২০ হাজার ৮২৫ টাকা। এ দিয়েই কায় ক্লেশে চলে তাদের পুরো সংসার। নিম্ন জীবনমান ও মর্যাদার কারণে মেধাবীরা তাই আসতে চান না প্রাথমিক শিক্ষকের পেশায়। 

অনেক শিক্ষকই বলেন, উচ্চ শিক্ষিতরা প্রাথমিক শিক্ষকতায় আসলেও অর্থনৈতিক কারণে হতাশা থেকে আবার পেশা পরিবর্তন করে। 

এক শিক্ষক আবার বলেন, “আমরা তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী, এটা তো শিক্ষা ক্ষেত্রের জন্য অনেকটাই অসম্মানজনক।“ 
ব্রিটেন-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ইকোনোমকি ও সোশ্যাল রিসার্চে জানা যায় শিক্ষকতায় সবচে মর্যাদা পাওয়া শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে  চীন, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, রাশিয়া,  ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া,  তুরস্ক,  ভারত, নিউজিল্যান্ড এবং  সিঙ্গাপুর। 

ফ্রান্সে আদালতে শুধু শিক্ষকদের চেয়ারে বসতে দেয়া হয়, যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষকদের রয়েছে ভিআইপি মর্যাদা, জাপানে সরকারের বিশেষ অনুমতি ছাড়া শিক্ষকদের গ্রেফতার করা যায়না। চীনে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পদ শিক্ষকতা, আর কোরিয়ায় শিক্ষকরা মন্ত্রীদের সমান সুযোগ পান। 

কিন্তু একেবারে ভিন্নচিত্র বাংলাদেশে। শিক্ষকের মর্যাদা কেবল মুখে আর বই পুস্তকে। শিক্ষকরা বলেন, শিক্ষকের আত্মমর্যাদার জায়গাটি ক্ষুণ্ণ হলে শিক্ষা ব্যবস্থাও ক্ষুণ্ণ হয়।  

স্বাধীনতার পর গঠিত ড. কুদরাত ই খুদা শিক্ষা কমিশনে সমগ্র শিক্ষাকেই জাতীয়করণের কথা বলা হয়। শিক্ষকদের সামাজিক অবস্থান সুদৃঢ় করার লক্ষ্য গৃহিত হয়। 

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক  বলেন ৭৫ এর পট পরিবর্তনে ওপনিবেশিক মডেল অনুসরন করে একটি গোষ্ঠী কুদরাত ই খুদা শিক্ষা কমিশনের নীতি বাস্তবায়ন হতে দেয়নি। 

তিনি বলেন, “প্রাথমিক শিক্ষা নানা ভাগে বিভক্ত, প্রাথমিক পর্যায়ে যে বেতন ভাতা দেওয়া হয় তা অন্যান্য পেশার চেয়ে অনেক কম। বঙ্গবন্ধু যে চিন্তা করতে পেরেছিলেন ১৯৭২ ও ৭৩ সালে সেই জায়গায় আমরা আর যেতে পারিনি।“  

শিক্ষা কাঠামোর সংস্কার, বাজেট বাড়ানোর পাশাপাশি সামাজিকভাবে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি। 

বলেন, “মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের প্রাথমিক শিক্ষার দিকে আকৃষ্ট করা গেলে আমরা একটা প্রজন্ম পাবো যেই প্রজন্মের মাঝে অন্তত উচ্চতর নৈতিক অবস্থান দেখা যাবে।“ 

শুধু পাঠদান নয় । একই সঙ্গে সমাজ সংস্কার ও উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষকদের সামাজিক নেতৃত্বস্থানীয় ভুমিকায় আনলে জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গঠনের লক্ষ্য অর্জিত হবে। 

এসবি/