নকল টিকা নিয়ে মিমি চক্রবর্তীর ক্ষোভ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:১৬ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ রবিবার
গত বছর নিজের অজান্তে ভুয়া টিকা নিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন কলকাতার সাংসদ অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী। এতে পুরো কলকাতায় শোরগোল পড়ে যায়। ঘটনাটিতে যেভাবে তাকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিল, তা নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই তার। বরং তিনি মনে করেন, ওই সময় তিনি সরব হয়েছিলেন বলেই এত বড় প্রতারণা প্রকাশ্যে এসেছে। বহু মানুষের প্রাণ বেঁচেছে।
শনিবার এক লাইভ অনুষ্ঠানে এর বিস্তারিত জানান সাংসদ মিমি। গত ২৩ জুন কসবা থানার অন্তর্গত রাজডাঙায় একটি টিকাকেন্দ্র থেকে কোভিড প্রতিষেধক নিয়েছিলেন তিনি। টিকা নেওয়ার পর খেয়াল করেন, তার ফোনে প্রতিষেধক প্রাপ্তি সংক্রান্ত প্রশংসাপত্র আসেনি।
পরেই কসবা থানায় লিখিত অভিযোগ করে মিমি জানান, নিজেকে আইএএস কর্মকর্তা এবং কলকাতা পৌরসভার যুগ্ম-কমিশনার হিসেবে পরিচয় দিয়ে দেবাঞ্জন দেব নামে এক ব্যক্তি প্রতিষেধকের এই ভুয়া কর্মসূচি চালান। মিমির অভিযোগের ভিত্তিতেই দেবাঞ্জনকে গ্রেফতার করে কসবা থানা।
এর পরেই ভুয়া টিকা শিবির-কাণ্ডের তদন্তে নামে পুলিশ। উঠে আসতে থাকে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই ঘটনা প্রসঙ্গেই শনিবারের সান্ধ্য আড্ডায় মিমি বলেন, ‘‘ভাগ্যিস সেদিন আমি গিয়েছিলাম! নইলে ও (জাল টিকা শিবির-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেব) হয়তো ধরাই পড়তো না। আমি টিকা নিতে না গেলে জানাই যেত না যে, ও (দেবাঞ্জন) এতগুলো ভুয়া কর্মসূচি চালাচ্ছে কলকাতা শহরে। আমি তখন তৎপর না হলে হয়তো আজও ও ওই শিবির চালিয়ে যেত।
দেবাঞ্জনের শিবির থেকে টিকা নেওয়ার তিনদিন পর থেকেই মিমির শরীরে হঠাৎই পানি শূন্যতার দেখা দেয়। রক্তচাপ নেমে যাওয়ার পাশাপাশি পেটে যন্ত্রণা শুরু হয়। ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়তে থাকেন সাংসদ-তারকা। বাড়িতে বেশ কয়েক দিন বিশ্রামে ছিলেন তিনি। তবে একই সঙ্গে এই প্রশ্নও উঠেছিল, সাংসদ হয়েও সঠিক খবরাখবর না নিয়েই কেন একটি ভুয়া টিকা কেন্দ্রে প্রতিষেধক নিতে যান তিনি?
পুরো ঘটনায় সাংসদ মিমির ‘অসচেতনতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও আক্ষেপ নেই তার। মিমি বলেন, ‘‘এই গোটা ঘটনার সঙ্গে আমার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় জড়িয়ে থাকলেও আমি খুশি যে, সঠিক সময় সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছিলাম আমি। একটা ভুয়া মানুষের থেকে এত মানুষকে বাঁচাতে পেরেছি, এতেই আমি খুশি। আর প্রশাসনও কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে আমার অভিযোগের ভিত্তিতে।
ভুয়া টিকা শিবির-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেফতার দেবাঞ্জন রিমান্ডে পুলিশকে জানিয়েছেন, কসবার শিবিরে কোভিশিল্ড কিংবা কোভ্যাক্সিন টিকা দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছে অ্যামিক্যাসিন ইনঞ্জেকশন, যা পুরসভার নাম করে বাগরি মার্কেট থেকে কিনেছিলেন তিনি। তার কসবার অফিসেই কোভিশিল্ডের নকল মোড়ক ছাপানো হত। পরে ওই ইনঞ্জেকশনের ভায়ালে তা বসিয়ে দিতেন তার চার কর্মী! ভবিষ্যতে চড়া দরে বেচতে প্রায় ২৫ লাখ টাকার মাস্ক, স্যানিটাইজারও বেআইনিভাবে মজুত করে রেখেছিলেন দেবাঞ্জন।
এর পরেই দেবাঞ্জনের একের পর এক অফিস এবং বাড়ি তল্লাশি করে উদ্ধার হয় ভুয়া পরিচয়পত্র, কলকাতা পুরসভার নকল সিল, কাগজপত্র, তার ব্যবহৃত টয়োটা গাড়ি। জানা যায়, নিজের প্রকৃত পরিচয় গোপন রাখতে গাড়িটিতে নীল বাতি, পতাকাও ব্যবহার করতেন দেবাঞ্জন। গাড়ির পেছনের কাচে লাগানো থাকত রাজ্য সরকারের বিশেষ স্টিকার।
সূত্র আনন্দবাজার পত্রিকা
এমএম/