ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

বইমেলা ১৭ মার্চ পর্যন্ত চালানোর ইচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:৩০ পিএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৫:৩২ পিএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ মঙ্গলবার

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবারের বইমেলা ১৫ দিন পর শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলা চালানোর ঘোষণা দেওয়া হলেও করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকায় মেলা ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পর্যন্ত চালানোর ইচ্ছা পোষণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বইমেলার উদ্বোধন ঘোষণার আগে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এবছর বইমেলা দেরিতে শুরু করতে হলো। প্রস্তুতি ছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিল। যে কারণে দেরি করে শুরু করতে হলো। আজকে ১৫ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করতে পারছি সেটাই বড় কথা। তবে আমার ইচ্ছা এই মেলা ১৭ মার্চ পর্যন্ত চালানো। আমার মনে হয় বইমেলা পুরো মাসই চালাতে পারি।”

স্বাস্থ্যবিধি মেনে বইমেলা চালানোর আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “সবাই স্বাস্থ্য-সুরক্ষা মেনে বইমেলায় আসবেন। সবাই টিকা নেবেন। মাস্ক পরে সবাইকে সুরক্ষিত থাকতে হবে। সবাই টিকা নেবেন। যাদের দুই ডোজ টিকা নেওয়া হয়েছে, তারা বুস্টার ডোজ নেবেন।”

বাংলা লেখার জন্য একটি নির্দিষ্ট ফ্রন্ট তৈরির কাজ চলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাংলাকে পরিচিত করাতে বিভিন্ন ফ্রন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। ডিজিটাল প্রকাশনা করতে হবে। আধুনিক এই প্রকাশনা বাদ দিলে চলবে না।”

শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলা একাডেমিতে আমরা বইমেলা আয়োজন করে আসছি। এটা আমাদের প্রাণের মেলা। পাকিস্তান সরকার আরবি ও রোমান ভাষায় বাংলা লেখার প্রচলন করতে চেয়েছিল। আমি বলবো, বাংলা যেমন আমাদের আনন্দের ভাষা তেমন আমাদের প্রতিবাদেরও ভাষা।”

১৯৪৭ সালের পরিস্থিতি তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, “১৯৪৭ সালে করাচিতে এক সভায় বাংলাকে মাতৃভাষার স্বীকৃতি দিতে আহ্বান জানানো হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যে আন্দোলন করা হবে, এর সিদ্ধান্ত বঙ্গবন্ধুই দিয়েছিলেন। পাকিস্তান কখনোই আমাদের ভাষাকে স্বীকৃতি দিতে চায়নি। স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর অবদান মুছে ফেলে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। কারণ তিনি ভাষার আন্দোলন করতেই কারাগারে ছিলেন।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকেও অনেক তথ্য পাওয়া যায়। রোমান ও আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রচলন করতে চেয়েছিল পাকিস্তান। এমনকি রবীন্দ্রচর্চা নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিল। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। কানাডা প্রবাসী রফিক ও সালাম বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘে নিয়ে যান। কিন্তু কোনো সদস্য রাষ্ট্র প্রস্তাব না দিলে তা নেওয়া সম্ভব হয় না। তাই আমরা সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ শুরু করি।”

শেখ হাসিনা বলেন, “দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, ২০০৮ সালে আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট তৈরি করি। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়েত জোট এই কাজটি বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে একদিকে ভালোই হয়েছিল। তারা বন্ধ করে দেওয়ার কারণে পরবর্তী সময়ে আমরা আবার যখন সরকারে এলাম, আমরা আবার কাজ শুরু করলাম এবং এটি আমার হাতেই উদ্বোধন হলো।”

বইমেলায় যেসব বই প্রকাশিত হবে, তা সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদান রাখবে এমন প্রত্যাশা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি। আমরা স্বাধীনভাবে বাংলায় কথা বলতে পারছি। হাজারো বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারছে। আমাকে শুধু নিজের ভাষা নিয়ে থাকলে চলবে না, অন্য ভাষা সম্পর্কেও জানতে হবে। এজন্য অনুবাদে জোর দিতে হবে। তাদের সাহিত্যকে জানতে হবে। মুজিববর্ষ উদযাপন করার সময় বঙ্গবন্ধুর অনেক কিছু আমি সম্পাদনা করে দিয়েছি। করোনার কারণে আমাদের থেমে থাকলে চলবে না। করোনার কারণে আমরা অনেক কবি, সাহিত্যিকে হারিয়েছি। আশা করছি, এই বইমেলায় যেসব বই প্রকাশিত হবে, তা সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদান রাখবে।”

বাংলা একাডেমি উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে নতুন নতুন কবি-সাহিত্যিক খুঁজে পাওয়া যাবে। এজন্য গ্রাম এলাকায় আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিতে হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, “আমি মনে করি, প্রশাসন থেকেও এই বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। জাতির পিতার সোনার বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। আমি বই মেলার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।”

আরকে//