ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

দৃষ্টি এখন ২৬ ফেব্রুয়ারির বাংলাদেশের দিকে

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ও ডা. শেখ মোহম্মদ ফজলে আকবর

প্রকাশিত : ১২:৪৩ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ রবিবার | আপডেট: ১২:৫০ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ রবিবার

২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে অনেক বড় একটা ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। সারাদেশে এদিন অনুষ্ঠিত হবে মহা-ভ্যাকসিনযজ্ঞ। দেশ জুড়ে এদিন এক সাথে এক কোটি মানুষকে কোভিড-১৯ টিকার আওতায় আনার প্রস্তুতি চলছে। 

এক কোটি একটা অনেক বড় সংখ্যা নিঃসন্দেহে এবং সেটা যেকোনো বিষয়ের বেলাতেই। আর তা যদি হয় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন, তবে তো তা বলাই বাহুল্য। তবে শুধুমাত্র সংখ্যাতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যদি বিষয়টিকে দেখা হয়, তবে তা হবে বিষয়টিকে খাটো করে দেখার নামান্তর মাত্র।

পৃথিবীতে জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান এখন আট নম্বরে। আমাদের আগে আছে চীন, ভারতসহ আরো সাতটি দেশ আর জাপান, ডিআর কঙ্গোর মতো দেশগুলোর অবস্থান আমাদের ঠিক পরপরই। 

একদিনে এক কোটি নাগরিককে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের আওতায় আনার মতো সক্ষমতা আছে হাতে গোনা ক’টি মাত্র দেশের। কারণ পৃথিবীতে গুটিকয়েক দেশের জনসংখ্যাই এক কোটির উপরে। তবে তার চেয়েও যা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, এক কোটি মানুষকে একদিনে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসার বুকের পাটা এ পর্যন্ত দেখাতে পেরেছে শুধুমাত্র চীন আর তার পরে ভারত, গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ৭১তম জন্মদিনে। 

২৬ ফেব্রুয়ারি সফল হলে আমরা হবো এই অসমান্য সাফল্যের অধিকারী তৃতীয় রাষ্ট্র। নিঃসন্দেহে এটি কোভিড ম্যানেজমেন্টে বাংলাদেশের সাফল্যের লম্বা তালিকায় আরো একটি গৌরবের পালক যোগ করতে যাচ্ছে। 

তবে অন্যভাবে দেখতে গেলে বিষয়টি তার চেয়েও অনেক বড় কিছু। কারণ চীন এবং ভারত, যে দুটি রাষ্ট্র আমাদের আগে এই অসামান্য মাইল ফলকটি ছুঁতে পেরেছে তাদের জনসংখ্যা আমাদের চেয়েও বহুগুণ বেশি। সত্যি বলতে কি, এই দুটো দেশ পৃথিবীর সবচাইতে জনবহুল রাষ্ট্রের তালিকায় একেবারে উপরে। তার উপর এদের প্রত্যেকেরই আছে নিজস্ব ভ্যাকসিন এবং একটি নয়, বরং একাধিক ভ্যাকসিন। কাজেই ভারত বা চীনের জন্য এই লক্ষ্যটি অর্জন করাটা কঠিন হলেও সম্ভব।

অন্যদিকে বাংলাদেশের জন্য এটি হচ্ছে অসম্ভবের প্রায় কাছাকাছি একটি লক্ষ্য যার অন্যতম কারণ আমাদের নিজস্ব ভ্যাকসিন সক্ষমতার অনুপস্থিতি। শুধুমাত্র এত কঠিন একটি লক্ষ্য অর্জনের এই অতি কঠিন উদ্যোগটি নেয়ার সাহসটুকু দেখানোর জন্যই বাংলাদেশ বাহবা’র দাবিদার। আর কাজটি করে দেখাতে পারলে তো কথাই নেই! পাশাপাশি আরো ক’টি কারণে কোটি লোকের ভ্যাকসিনেশনের এই কর্মযজ্ঞটি অত্যান্ত প্রনিধানাযোগ্য। 

আমাদের প্রতিবেশিদের মধ্যে জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনার শতকরা হিসেবে আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছে প্রায় সবাই। এই এক কোটি নাগরিককে একদিনে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসতে পারলে বাংলাদেশ এক লাফে ডিঙ্গিয়ে যাবে এদের কাউকে কাউকে। তবে তার চেয়েও যা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, কোভিড সংক্রমণের এদেশে সাম্প্রতিক যে নিন্মমুখি ট্রেন্ড, তাকে এক ধাক্কায় আরো একটু নামিয়ে আনায় ভূমিকা রাখবে এই ভ্যাকসিনযজ্ঞটি। আর বলাই বাহুল্য স্বাভাবিক স্কুলিংসহ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ায় আমাদের সাম্প্রতিক যে প্রয়াস, তাতেও এই উদ্যেগটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে নিঃসন্দেহে।

তবে এতকিছুর পরও কয়েকটি জিনিস মাথায় রাখাটা জরুরি। এক কোটি লোককে সফলভাবে একদিনে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে পারার আনন্দের আতিশয্যে আমাদের স্বাস্থ্যবিধিগুলোকে ভুলে গেলে একদমই চলবে না। মনে রাখতে হবে কোভিড ঠেকানোয় সবচেয়ে কার্যকর যে বস্তুটি তার নাম ‘মাস্ক’। আর এই বিষয়টি প্রমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালটি অনুষ্ঠিত হয়েছে এই বাংলাদেশেই। 

পাশাপাশি এক কোটি মানুষের মধ্যে এমন অনেক মানুষ থাকবেন যাদের জন্য এই ডোজটি হবে কোভিড ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে এটি হবে দ্বিতীয় বা বুস্টার। ভ্যাকসিন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার স্বার্থে এই বিষয়গুলোও যথাযথভাবে ডকুমেন্টেশন করার বিষয়টি ভ্যাকসিনযজ্ঞের এই দিনটিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে মাথায় রাখতে হবে। 

তবে যে স্বাস্থ্য প্রশাসন অমন দুঃসাহসী উদ্যোগ নেয়ার সাহস দেখিয়েছে, এই বিষয়গুলো যে তাদের মাথায় ভালোভাবেই গেঁথে আছে সে বিষয়ে আমাদের এতটুকুও সন্দেহ নেই। আমরা এখন পুরো জাতির মতো, পুরো পৃথিবীর সাথে আমরাও অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছি ২৬ ফেব্রুয়ারির বাংলাদেশের দিকে, যেদিন আবারো ‘করে দেখাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ’।

লেখক: অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল), বিভাগীয় প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় 

-ডা. শেখ মোহম্মদ ফজলে আকবর, গবেষক, এহিমি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান