ছুটির দিনে বইমেলায় উপচে পড়া ভিড়
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:০০ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সোমবার | আপডেট: ১১:০৩ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সোমবার
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ছুটির দিন থাকায় আজ অমর একুশে বইমেলায় উপচে পড়া ভিড় ছিল। ছুটির এই দিনে সকাল কিছুটা ফাঁকা হলেও বিকেলে ছোটে জনস্রোত।
বিকাল ৩টার পর থেকে জনসমাগম বাড়তে থাকে। প্যাভিলিয়নগুলোতে প্রিয় লেখকের উপস্থিতিতে তৈরি হয়েছিল ক্রেতাদের জটলা। মেলার ৭ম দিনে নতুন বই এসেছে ২২৪টি। সোমবার মেলা সকাল ৮ টা থেকে শুরু হয়ে চলেছে রাত ৯ টা পর্যন্ত।
মেলায় আগতদের বেশিরভাগই ছিল তরুণ-তরুণী। মা-বাবার হাত ধরে শিশুরাও এদিন বেশ ভিড় জমায়। কেউ সাদা-কালো পোশাকে, কেউবা ফাগুনের সাজে বেরিয়েছিলেন ঘর থেকে। সব মিলিয়ে মেলার দুই প্রাঙ্গণ- বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিল উপচে পড়া ভিড়।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে। রাত সাড়ে ১২ টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার নেতৃত্বে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়।
বিকাল ৪ টায় অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে বক্তৃতা ২০২২। স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। ‘ফিরে দেখা: আমাদের ভাষা আন্দোলন’- শীর্ষক অমর একুশে বক্তৃতা প্রদান করেন কবি আসাদ চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, আমাদের একুশ এখন সারা বিশ্বের। একুশের সত্তর বছর আমাদের জাতিসত্তার উৎসমূলে নতুন করে দৃষ্টিপাত এবং ভাষা-সংস্কৃতি ও জাতিতাত্ত্বিক নিবিড় আত্মঅন্বেষায় উদ্বুদ্ধ করে।
প্রবান্ধিক ও কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, আজ ২১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশের সত্তর বছর পূর্ণ হল। তবে বাঙালির ভাষা আন্দোলন কেবল সত্তর বছরের বিষয় নয়। হাজার বছর ধরে বাঙালি আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকারের জন্য লড়াই করে এসেছে। এ লড়াই কেবল সাংস্কৃতিক লড়াই ছিল না, এ লড়াই ছিল অর্থনৈতিক-সামাজিক এবং অবশ্যই রাজনৈতিক।
তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের মূলে ছিল পূর্ববাংলার সংগ্রামী জনগণের লড়াকু ভূমিকা। তারা এ আন্দোলনকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠার পরিণতিতে নিয়ে গেছে এবং কালক্রমে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়কে আসন্ন করেছে।
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, অমর একুশের সত্তর বছরপূর্তি বাঙালি জাতির জন্য পরম গৌরবের বিষয়। ভাষা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।
আজ ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন ইমদাদুল হক মিলন ও আনিসুল হক।
অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মাকিদ হায়দার, বিমল গুহ এবং আবদুস সামাদ ফারুক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তি শিল্পী দেওয়ান সাইদুল হাসান, জয়ন্ত রায়, শাহাদৎ হোসেন নিপু। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী’। নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যশিল্পী সৌন্দর্য প্রিয়দর্শিনী ঝুম্পা ও ফরহাদ আহমেদ শামীম। সংগীত পরিবেশন করেন মহাদেব চন্দ্র ঘোষ, কল্যাণী ঘোষ, স্বর্ণময়ী ম-ল, তাজুল ইমাম ও আরিফ রহমান। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ পাল (তবলা), আনোয়ার সাহদাত রবিন (কী-বোর্ড), মো. আরিফ কোরাইশী (গীটার), মো. ফারুক (অক্টোপ্যাড)।
ভাষাশহীদ মুক্তমঞ্চে সকাল ৮ টায় কবি অসীম সাহার সভাপতিত্বে শুরু হয় ‘কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ’। স্বরচিত কবিতাপাঠে অংশ নেন অর্ধশতাধিক কবি। বিকেল ৩ টায় এই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় কবিকণ্ঠে একুশে কবিতাপাঠ। স্বরচিত কবিতা পাঠে অংশ নেন পঁচিশজন কবি। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সচিব কবি হাসানাত লোকমান। অমর একুশের সত্তর বছর পূর্তি স্মরণে এই মঞ্চে বিকেল ৪ টায় প্রদর্শিত হয় শহীদ জহির রায়হান পরিচালিত ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’।
মঙ্গলবার অমর একুশে বই মেলার ৮ম দিন। মেলা চলবে দুপুর ২টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত।
বিকাল ৪ টায় বই মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ : লেখক বঙ্গবন্ধু শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মোহাম্মদ সেলিম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ঝর্না রহমান ও তানভীর আহমেদ সিডনী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
অমর একুশে বইমেলার অংশ হিসেবে সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এসি