বাইডেনের সঙ্গে আলাপে ঠান্ডা পানি ঢেলে দিল ক্রেমলিন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:৪৬ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সোমবার
ইউক্রেন সংকট নিয়ে আলোচনার জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে যে শীর্ষ বৈঠকের কথা ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে বলা হচ্ছিল, তাতে ঠান্ডা পানি ঢেলে দিয়েছে ক্রেমলিন।
রাশিয়া বলছে, দুই নেতার মধ্যে এরকম সামনাসামনি শীর্ষ বৈঠকের কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এখনো পর্যন্ত নেই।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স জানিয়েছিল, মস্কো যদি ইউক্রেনে অভিযান না চালায়, দুই নেতার মধ্যে এরকম একটি বৈঠকের ব্যাপারে দুই পক্ষ নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। কিন্তু ক্রেমলিনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, আপাতত কূটনীতি চলবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে।
বিবিসির মস্কো সংবাদদাতা স্টিভ রোজেনবার্গ বলছেন, স্বল্প সময়ের জন্য হলেও একের পর এক টেলিফোন কূটনীতিতে এমন একটা আশা তৈরি হয়েছিল যে, আলোচনার মাধ্যমে এই সংকটের একটা সমাধান হবে। কিন্তু ক্রেমলিনের বিবৃতি যেন এতে ঠান্ডা পানি ঢেলে দিল।
এদিকে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সভাপতিত্বে রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের এক বৈঠক হচ্ছে, যেখানে ইউক্রেন সংকট নিয়ে আলোচনা হবে। ক্রেমলিন স্পষ্ট করেই বলছে, এটি কোন নিয়মিত বৈঠক নয়।
রাশিয়ার জরুরি দুর্যোগ বিষয়ক মন্ত্রী জানিয়েছেন, পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে ৬০ হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে।
আলেক্সান্ডার চুপ্রিয়ান বলেন, এ পর্যন্ত ৬১ হাজার মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে রাশিয়ায় ঢুকেছে। তিনি বলেন, নয়টি ট্রেনে করে কিছু মানুষকে এখন রাশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র এই উদ্ধার অভিযানকে সাজানো বলে বর্ণনা করছে। তারা বলছে, এটি ইউক্রেনে রাশিয়ার আসন্ন অভিযান থেকে দৃষ্টি অন্যখাতে প্রবাহিত করার একটা চেষ্টা।
এদিকে পূর্ব ইউক্রেনের লুহানস্কে রোববার যে গোলাবর্ষণে দুজন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়, তার জন্য রাশিয়ার সমর্থনপুষ্ট বিদ্রোহীরা ইউক্রেনের সরকারি বাহিনীকে দায়ী করেছে।
তবে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ইউক্রেনের সরকার। তারা বলছে, এটি আরেকটি সাজানো হামলার ঘটনা, যার মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে একটি বৃহত্তর সংঘাতের উস্কানি দেয়া হচ্ছে।
গত কয়েকদিনে পূর্ব ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি লংঘনের ঘটনা বেশ বেড়ে গেছে। ডনবাস অঞ্চলে শনিবার দুজন সরকারি সেনা নিহত হয়। এই এলাকাটিও নিয়ন্ত্রণ করে রাশিয়ার সমর্থনপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবদীরা।
ইউক্রেনকে ঘিরে এখন যে সংকট চলছে, তাতে এরকম একটা শীর্ষ বৈঠক কি সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পথ তৈরি করতে পারে?
বিবিসির কূটনৈতিক সংবাদদাতা জেমস ল্যান্ডেল বলছেন, কাগজে-কলমে এর উত্তর হচ্ছে, 'হ্যাঁ।'
তিনি লিখেছেন, স্বল্প মেয়াদে এক থেকে কিছুটা সময় পা্ওয়া যেতে পারে, কারণ এরকম একটা বৈঠকের বিস্তারিত ঠিক করতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, যদি এরই মধ্যে রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান চালায়, তাহলে আর এই বৈঠক হবে না।
দীর্ঘমেয়াদে এরকম একটা বৈঠক থেকে ইউরোপীয় নিরাপত্তার ব্যাপারে একটা বড় বোঝাপড়াও হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, এই বৈঠক আদৌ হবে কিনা।
ইউক্রেনে হয়তো পরিস্থিতি এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। উভয় পক্ষই হয়তো এই বৈঠকে যোগ দেবে না বলে জানিয়ে দিতে পারে। আর যদি বৈঠক হয়ও, দু্পক্ষের মধ্যে যে বিরাট মতপার্থক্য, কোন সমঝোতার সম্ভাবনা নিয়েও কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
যে শীর্ষ বৈঠকে কথা হবে ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে, সেখানে ইউরোপ্ও নিশ্চয় নিজেদের কথা তুলে ধরার সুযোগ চাইবে। এরকম বহু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে এই বৈঠকের ব্যাপারে। তবে এখনো পর্যন্ত যেটা পরিস্কার, ইউক্রেন সংকটে কূটনীতির দরোজা এখনো খোলা, পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি।
এদিকে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন যেন মস্কোকে সম্ভাব্য অভিযান থেকে বিরত রাখা যায়।
দিমিত্রো কুলেবা ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। সেখানে তিনি বলেন, ইউক্রেনের ব্যাপারে ইউরোপ যা করবে বলে বলছে, তা তাদের করে দেখাতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মধ্যে শীর্ষ বৈঠককে তিনি স্বাগত জানান।
সংবাদদাতারা বলছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে কখন এবং কী রকম কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেয়া উচিৎ, তা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মতবিরোধ দেখা যাচ্ছে। সূত্র: বিবিসি
এসি