ইউক্রেন আক্রমণে রাশিয়া কেন এত মরিয়া?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:২৯ পিএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ বুধবার
ইউক্রেনের সীমান্ত থেকে রাশিয়ার সেনা সরানোর প্রক্রিয়া যে শুধুই ছলচাতুরি ছিল তা এ বার বুঝিয়ে দিলেন ভ্লাদিমির পুতিন। কারণ এখন সরাসরি সঙ্ঘাতের আহ্বান করে চলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন।
ইউক্রেনের ওই দুই এলাকা দনেৎস্ক এবং লুহানস্ক, যাদের একত্রে ডনবাস বলা হয়, সেখানে এখন ইউক্রেন সেনার নিয়ন্ত্রণ। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগ বাড়িয়ে ইউক্রেনের দুই এলাকাকে রাশিয়ার স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ ইউক্রেনকে প্রকাশ্যে যুদ্ধের জন্য উসকানি দেওয়া। একইসঙ্গে এটাও বোঝানো যে সেনা নিয়ে ইউক্রেনের সীমান্তে ঢোকার পথ পরিষ্কার করে রাখল রাশিয়া।
২০১৪ সালে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ থেকে নিজেদের মুক্ত বলে ঘোষণা করে ডনবাস। অভিযোগ ওঠে ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ যেই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে তাদের রাশিয়াই অর্থ এবং নানারকম সুযোগ সুবিধা দিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে লালন করে আসছে। এমনকি এই এলাকার বাসিন্দাদের কোভিড টিকাকরণ এবং প্রায় আট লক্ষ পাসপোর্টের ব্যবস্থাও করেছে পুতিন সরকার।
এখন রাশিয়া ওই দুই এলাকাকে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়েছে, অর্থাৎ ইউক্রেনের অংশ বলে মনে করছেনা। যেকারণে রাশিয়া এখন চাইলেই সেখানে সেনা পাঠাতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাদের যুক্তি, তারা ডনবাসের ‘বন্ধু’ হিসেবে তাদের ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে চাইছে। এই ধোয়া তুলেই মূলত ওই দুই অঞ্চলে রুশ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে দনেৎস্কের এক প্রাক্তন রাজনৈতিক নেতা আলেকজান্ডার বোরোদাই, যিনি এখন রাশিয়ার পার্লামেন্টেরও সদস্য, সম্প্রতি বলেছিলেন, রাশিয়া যদি ডনবাসকে ইউক্রেনের সরকারের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত পৃথক অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেয় তবে সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারাও ডনবাসকে ইউক্রেনের সেনাদের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করতে রাশিয়ার পাশে দাঁড়াবে। অর্থাৎ রাশিয়া আর ইউক্রেনের যুদ্ধে সহায়ক হবে ডনবাসের বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলো।
রাশিয়া কি এর আগেও বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল?
দিয়েছিল, এর আগে জর্জিয়ার দু’টি বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল মস্কো।
এ নিয়ে জর্জিয়ার সঙ্গে সেনা সঙ্ঘাতও হয়েছিল রাশিয়ার। ২০০৮ সালে একটা ছোটখাটো যুদ্ধই হয়েছিল রাশিয়া এবং জর্জিয়ার। পরে ওই দুই বিচ্ছিন্নতাবাদী এলাকাকে আর্থিক সহায়তা, সেনা নিরাপত্তা এবং নাগরিকত্ব দিয়ে সাহায্য করে মস্কো।
ইউক্রেনের ডনবাস আয়ত্তে এলে কী লাভ রাশিয়ার?
ইউক্রেনের ওই দু’টি অঞ্চল দখলে এলে রাশিয়ার দখলে আসবে একটি বন্দরও। দনেৎস্কের ওই বন্দর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকলে ঘুরপথে বাণিজ্যের বড় সমস্যা ঘুচবে রাশিয়ার। সহজ হবে বাণিজ্যপথ। বাঁচবে বিপুল অর্থ।
ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় চিন্তা ন্যাটো। কোনও ভাবে যদি ইউক্রেন ন্যাটোয় অংশ নেয়, তা হলে এই পুরো এলাকায় রাশিয়ার কর্তৃত্ব খর্ব হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মস্কোর দাবি, ইউক্রেনকে ন্যাটোর অংশ করে এই অঞ্চলে কর্তৃত্ব কায়েম করতে চাইছে আমেরিকাসহ ন্যাটো গোষ্ঠীভুক্ত রাষ্ট্রগুলি। জর্জিয়ার ক্ষেত্রেও এই একই ভয় পেয়েছিল মস্কো।
এসবি/