ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

বইমেলায় পাঠকপ্রিয় উপন্যাস ‘অগ্নি সারসেরা’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০২:৫২ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ বৃহস্পতিবার

জমে উঠেছে একুশে বইমেলা। প্রতিদিন আসছে নতুন নতুন গ্রন্থ। গত দশদিনের মেলায় বেশ কয়েকটি গ্রন্থ পাঠক প্রিয়তায় শীর্ষে রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কবি ও কথাসাহিত্যিক মিলটন রহমানের উপন্যাস ‘অগ্নি সারসেরা’।

উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স। বইমেলার ২৭ নম্বর প্যাভিলিয়নে বইটি পাওয়া যাচ্ছে।

কয়েকজন পাঠক বললেন, তারা উপন্যাসটি সংক্ষিপ্ত রূপ পাঠ করেছিলেন শিল্প সাহিত্য বিষয়ক পত্রিকা ‘শব্দঘর’ এ। এবার পূর্ণাঙ্গ পাঠের জন্য তারা গ্রন্থটি ক্রয় করেছেন। 

মিরপুর থেকে আসা তরুণ অতনু চক্রবর্তী বললেন, “তিনি পুরো উপন্যাসটি পাঠ করেছেন, উপন্যাস ‘অগ্নি সারসেরা’ নতুন সময়ের ডাক দিয়েছে। এতে পুরো বিশ্বকে বদলে দেয়ার যে স্বপ্ন এবং আন্দোলন তা পুরো বিশ্ববাসীর কথা।”

উপন্যাসটি সম্পর্কে মিলটন রহমান বলেন, “একটি কালখণ্ড। যার ভেতর হেঁটে চলে নিতান্ত গ্রাম্য কিশোর থেকে বেড়ে ওঠা তরুণ নিতাই চাঁন। সরল, প্রাকৃত-অতিপ্রাকৃত ঘটনাবহুল সময়ের সাক্ষী নিতাই। নানান সংস্কার, গ্রামীণ ও ধর্মীয় মিথ, স্বদেশ ও বৈশ্বিক রাজনীতি, যুদ্ধ-বিগ্রহের অভিজ্ঞতা গ্রামের সহজ-সরল কিশোরোত্তীর্ণ তরুণকে ঠেলে দেয় অতল খাদে। যার জটিল বিশ্বে ধরা দিয়েছে, সাতচল্লিশের দেশ ভাগ, পঞ্চাশের জমিদার প্রথা বাতিল, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা, স্বৈরাচার পতন, বিএনপি-আওয়ামী লীগের শাসন। একই সময়ে ইরাক-ইরান যুদ্ধ, ইরাক কুয়েত যুদ্ধ, পশ্চিমা বিশ্বের আগ্রাসী ভূমিকাও বাদ পড়েনি তার চৌহদ্দি থেকে।” 

তিনি আরও বলেন, “মঙ্গল রাষ্ট্রের খোঁজ করতে গিয়ে নিতাই আবিষ্কার করে আরও জটিল এবং বুর্জোয়া এক বিশ্ব। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, পুঁজিবাদ, রাজতন্ত্র এসব কোন তন্ত্রই নিজস্ব অবস্থানে নেই। সোভিয়েত ভেঙে পনের টুকরো হওয়ার ঘটনা থেকে জেনে যায় সমাজতন্ত্র বা কমিউনিজম নিজস্ব অবস্থান থেকে যোজন দূরে। গণতন্ত্রের নিজস্ব কোন শক্তি নেই, সে পুঁজিবাদ চালিত! গণতন্ত্র হচ্ছে প্লেটোর সেই ‘দি শীপ অফ স্টেট’। যেখানে একটি দেশের মানুষ ওই নেশাগ্রস্ত জাহাজের মালিকের কাছেই বন্দী। তার এসব চিন্তার মজ্জায় এসে দাঁড়ায় কখনো রহস্যময় সুন্দরী তরুণী, কখনোবা অচেনা পাখি কিংবা বংশিবাদক যে কিনা রাতে পরী নাচায়।”

“কৈশোরে যে উচ্ছ্বলতা নিয়ে বেড়ে উঠছিলো, তারুণ্যে এসেই নিতাই জেনে যায় জটিল বিশ্বের খবর। রাজনীতির চালে অপহরণ হয়ে যাওয়া নিতাই কিভাবে দেশী-বিদেশী সংবাদ মাধ্যমে খবর হয়ে যায়। কিভাবে তার বৈশ্বিক পরিচয় দাঁড়িয়ে যায়, উপন্যাসের মধ্যপথে নেয়া বাঁকে তা পরিস্কার হয়ে ওঠে। উচ্চ শিক্ষায় ইংল্যান্ডে গিয়ে সেখানেও পরিচয় হয় ব্যাঙ্কসি নামের এক চিত্রশিল্পীর কাজের সাথে। যার কাজ হচ্ছে প্রচলিত নীতির বিরুদ্ধে নতুন যুক্তি প্রতিষ্ঠা। কাজের সাথে পরিচয় হলেও দেখা হয়নি শিল্পীর সাথে। সেখান থেকে যোগাযোগের সূত্র দীর্ঘ হতে থাকে তার। এখানে যাদের সাথে সম্পর্ক হয় তাদের রাজনৈতিক দর্শনও এক” যোগ করেন লেখক।

মিলটন রহমান বলেন, “উপন্যাসের প্লট এগিয়েছে নতুন রাজনীতির সন্ধানে। এক গ্রাম্য কিশোর কিভাবে সেই বৈশ্বিক রাজনীতির অংশ হয়ে গেলো এবং শেষ পরিণতিতে আইএসআই’র লক্ষ্যে পরিণত হলো তাই বিদৃত হয়েছে এ উপন্যাসে। মেটাফোর, ম্যাজিক রিয়ালিজম এবং জটিল দর্শন চিন্তার অর্শ্ববেগি এক গল্প গাঁথা উপন্যাস ‘অগ্নি সারসেরা’।” 

লেখকের জবানিতে সারসংক্ষেপ শোনার পর বুঝতে বাকি রইলো না যে পুরো বিশ্বের মুখোশ ধরে টান দেয়ার সাহস দেখিয়েছেন তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের কথাসাহিত্যিক মিলটন রহমান। এ কাজটিকে দুর্দান্ত এবং দু:সাহসি কাজ বলে মনে করাই যায়। 

এ উপন্যাসটি শিল্প-সাহিত্য বিষয়ক পত্রিকা ‘শব্দঘর’ এ ছাপা হয়েছিলো ঈদ সংখ্যা-২০২১ ‘ইদ্দতকালে ভিন্ন স্বর’ শিরোনামে। স্থানাভাবে উপন্যাসের কিছু অংশ বাদ দিয়ে ছাপা হয়েছিলো।

এএইচ/