ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

রাশিয়ার পারমাণবিক বোমা হামলার ঝুঁকি আসলে কতটা?

একুশে টেলিভিশন  

প্রকাশিত : ০৭:৩০ পিএম, ১ মার্চ ২০২২ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৮:০১ পিএম, ১ মার্চ ২০২২ মঙ্গলবার

প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার পারমানবিক অস্ত্রকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এর মাধ্যমে ঠিক কী বোঝানো হয়েছে সেটি পুরোপুরি পরিষ্কার না।

ব্রিটেনের কর্মকর্তারা বলছেন সতর্কতার মাত্রা সম্পর্কে মিস্টার পুতিন যা বলেছেন সেটি তাদের বোধগম্য হচ্ছে না।

কেউ কেউ বলছেন মিস্টার পুতিন আসলে সবচেয়ে কম যে সতর্কতার মাত্রা 'কনস্ট্যান্ট' সেখান থেকে পরবর্তী ধাপ 'এলিভেটেড' অর্থাৎ সামরিক ডেঞ্জার বা বিপদ পর্যায়ে উত্তরণের কথা বলেছেন।

তবে এটিও নিশ্চিত নয়। প্রতিটি পদক্ষেপ অস্ত্র প্রস্তুত করার কার্যক্রম বৃদ্ধি করে।

কেউ কেউ মনে করেন এটি আসলে যতটা না পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহারের উদ্দেশ্যের চেয়ে জনমনে একটি বার্তা দেয়ার চেষ্টা।

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস ইঙ্গিত দিয়েছেন যে পুতিনের ঘোষণা বাগাড়ম্বর বলেই তার কাছে মনে হয়েছে।

কিন্তু এর মানে এই নয় যে এ নিয়ে কোন ঝুঁকিই নেই।

এটা কী নতুন কোন সতর্কতা ছিলো?

গত সপ্তাহে মিস্টার পুতিন সতর্ক করে বলেছেন কোন দেশ যদি রাশিয়ার পরিকল্পনায় কোন হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে তাহলে তাদের এমন পরিণতির মুখে পড়তে হবে যে পরিস্থিতি আগে কখনো তারা মোকাবেলা করেনি।

মোটা দাগে অনেকে মনে করছেন এটি আসলে ন্যাটোকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে যাতে করে ইউক্রেন সংকটে তারা জড়িত না হয়।

ন্যাটো অবশ্য এর মধ্যেই পরিষ্কার করেছে যে তারা সেটি করবে না, কারণ তারা জানে এটা তাদের সরাসরি রাশিয়ার সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে ফেলতে পারে যা সংঘাতকে পারমাণবিক যুদ্ধে নিয়ে যেতে পারে।

তবে এই সতর্কটা ছিলো অনেক বেশি সরাসরি ও প্রকাশ্য।

কেন এ নতুন সতর্কতা?

পুতিন বলেছেন তার পদক্ষেপ 'আগ্রাসী বিবৃতির' জবাব। সোমবার ক্রেমলিন বলেছেন বিবৃতি বলতে পশ্চিমা কর্মকর্তাদের বক্তব্যগুলোকে বোঝানো হয়েছে। যার মধ্যে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও রয়েছেন যিনি ন্যাটোর সাথে সম্ভাব্য সংঘর্ষ বা সংঘাতের কথা বলা হয়েছিলো।

পশ্চিমা কর্মকর্তাদের বিশ্বাস ইউক্রেন নিয়ে পুতিনের ভুল হিসেবনিকেশ থেকেই নতুন সতর্কতাটি এসেছে।

তিনি হয়তো ইউক্রেন থেকে কী ধরণের প্রতিরোধ আসবে সেটি ঠিক মতো বুঝে উঠতে পারেননি। এবং পশ্চিমারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিষেধাজ্ঞা দিবে এটিও তিনি ধারণা করতে পারেননি।

একজন ব্রিটিশ অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, "এটি রাগ, হতাশা ও অসন্তোষের লক্ষণ"।

পারমাণবিক সতর্কাবস্থা বাড়াতে পুতিনের নির্দেশের পেছনে কারণ কী?

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের দূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড বলেছেন এটি আসলে যুদ্ধকে জায়েজ করে নিতে পুতিনের একটি চেষ্টা মাত্র যার মাধ্যমে তিনি আক্রমণকারী নন এমনটি দাবি করার চেষ্টা করছেন।

তবে এভাবে চিন্তা করলে পারমাণবিক সতর্কতা আসলে নিজের দেশের জনগণকে দেয়া একটি বার্তা।

আর অন্য দিক থেক দেখলে মনে হয় যে পুতিন ইউক্রেনের মানুষকে সামরিক সহায়তা দেয়া নিয়ে পশ্চিমা পরিকল্পনা নিয়ে মূলত উদ্বিগ্ন।

তার আরেকটি উদ্বেগের কারণ হলো নিষেধাজ্ঞা। যেটি তিনি তার ঘোষণাতেও বলেছেন যে অসন্তোষ তৈরি করে তার সরকারকে উৎখাতের জন্যই এটি করা হয়েছে।

সার্বিকভাবে বিষয়টি হলো ন্যাটোর প্রতি একটি সতর্কবার্তা।

ঝুঁকিগুলো কী?

মিস্টার পুতিনের হুমকিকে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ইচ্ছার পরিবর্তে সতর্কতা মনে করা হয় তাহলেও সেখানে যদি কোন পক্ষ অপর পক্ষকে ভুল বোঝে তাহলে একটি ভুল হিসাবনিকাশের ঝুঁকি থেকে যায়।

একটি উদ্বেগ হলো পুতিন 'একা হয়ে গেছেন' এবং ধরাছোঁয়ার বাইরে। অল্প কয়েকজন উপদেষ্টা তাকে সত্যিটা জানাতে পারেন।

অনেকের ভয় যে তিনি কখন কোন সিদ্ধান্ত নেন সে সম্পর্কে ধারণা করা কঠিন। আবার অনেকের আশা যে তিনি যদি সবার কাছ থেকে খুব দূরে সরে যান তাহলে নীচের দিকে তার চেইন অব কমান্ড তার আদেশ বাস্তবায়নে অনীহাও দেখাতে পারে।

সব মিলিয়ে একটি পারমাণবিক সংঘাতের সম্ভাবনা কিছুটা বাড়লেও প্রকৃত অর্থে এটি এখনও অনেক কম।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসবি/