ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

সুনামগঞ্জে যুবক-যুবতীদের মধ্যে বেড়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:১২ এএম, ২ মার্চ ২০২২ বুধবার

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

গত এক বছরে সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আত্মহত্যায় অকাল মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২০০ জনের। যাদের মধ্যে ২০ থেকে ৪০ বছরের যুবক-যুবতীর সংখ্যাই বেশি।

পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলায় গত এক বছরে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৪৫ জন। বিষপানে মারা গেছেন ৪৯ জন। আত্মহননকারী এসব লোকদের বয়স ২০-৪০ বছরের মধ্যে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

পারিবারিক বিরোধ, প্রেমে ব্যর্থতা, মানসিক হতাশাই মুখ্য কারণ বলে চিহ্নিত করেছে পুলিশ।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে নিজঘরে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের বাঘের কোনা গ্রামের জুয়েল আহমদ নামের ২০ বয়সের এক যুবক। বিয়েবাড়ি থেকে ফিরে ঘরে ঢুকে আত্মহত্যা করেন তিনি। অথচ তার আত্মহত্যার কারণ জানে না তার পরিবার।

৫ ফেব্রুয়ারি একই উপজেলার জয়কলশ ইউনিয়নে ডুংরিয়া গ্রামে বিকাশ দাস (৪০) নামের এক যুবক গাছের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। আত্মহননকারী বিকাশের মানসিক সমস্যা ছিল বলে দাবি পরিবারের। 

২ ফেব্রুয়ারি শাল্লা উপজেলা পরিষদের বারান্দার গ্রিলের সঙ্গে ফাঁস দেওয়া অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করে অফিস সহায়ক সাদ্দাম হোসেনের (২৫)। সাদ্দামের মৃত্যুতে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে পুলিশ।

মাস কিংবা সপ্তাহের কোনো না কোনো দিন এভাবেই জেলায় ঘটছে আত্মহত্যা। মানসিক রোগ, পারিবারিক কলহ, মাদকাসক্তি, কর্মসংস্থানের অভাব, দরিদ্রতা, বেকারত্ব, প্রেমে হতাশাসহ নানা কারণে হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলার অনেক তরুণ-তরুণী বেছে নিচ্ছেন আত্মহত্যার মতো বিপজ্জনক পথ।

বেসরকারি সংস্থা আঁচলের গত মার্চের আত্মহত্যা বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারাদেশে করোনাকালে পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি আত্মহত্যা করেছে। ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট আত্মহত্যার ঘটনা ১৪ হাজার ৪৩৬টি। এরমধ্যে নারীর আত্মহত্যার ঘটনা ৮ হাজার ২২৮টি এবং পুরুষের আত্মহত্যার ঘটনা ৬ হাজার ২০৮টি। 
আত্মহত্যার ঘটনা পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী রয়েছেন ৪৯ শতাংশ, ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৩৫ শতাংশ, ৩৬ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ১১ শতাংশ।

দেশের শিক্ষা ও অর্থনৈতিক সূচকে পিছিয়ে থাকা জেলা সুনামগঞ্জে আত্মহত্যার এমন পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত থাকলে মানবসম্পদের বিপর্যয়ের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক অবক্ষয় আর পারিবারিক রক্ষণশীল সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন অনেকেই। 

আত্মহত্যার প্রতিরোধে যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ পারিবারিক বিরোধ ধমনে তৃণমূল পর্যায়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপরে গুরুত্ব দিয়েছেন তারা।

ইসলামগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক ও সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ বলেন, হাওর অঞ্চলের তরুণদের বেশির ভাগ কর্মসংস্থানের অভাবে বেকার। বেকারত্ব জীবন, পারিবারিক বিরোধ ও হতাশার জন্ম দেয় তাদের মধ্যে। হতাশা থেকেই কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। যা সমাজের বড় ধরনের একটি অবক্ষয়। এ থেকে পরিত্রাণ খোঁজা জরুরি।

অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল হাকিম বলেন, আত্মহত্যা মূলত হতাশাজনিত কারণে হয়ে থাকে। একটি মানুষ মরতে চায় যখন তার জীবনযাত্রা মানোন্নয়নে কোনো লক্ষণ নেই। তার ভবিষ্যতের উন্নতির কোনোকিছুই তারা খুঁজে পাচ্ছে না অথবা পারিবারিক কলহ। এসব কিছুর মূলেই অভাব-অনটন, হতাশাগ্রস্ত ও কর্মস্থানের অভাব।

হতাশাগ্রস্ত যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান যদি করা যায়, যুবকদের কর্মে ব্যস্ত রাখা যায়, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা যায়, যেসব কারণে তারা হতাশাগ্রস্ত সেগুলো যদি চিহ্নিত করে উপশম করা যায় তাহলেই আত্মহত্যার প্রবণতা কমবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, গত বছরে সুনামগঞ্জে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ১৪৫ ও বিষপানে ৪৯ জন আত্মহত্যা করেছেন। পারিবারিক বিরোধ, প্রেমে ব্যর্থসহ নানা কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে এসব আত্মহত্যা সংঘটিত হয়েছে। পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে পুলিশ কাজ করছে বলে জানান তিনি।

এএইচ/