ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

ফেমাস গ্রুপের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির মামলা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:৪৯ পিএম, ২ মার্চ ২০২২ বুধবার

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড'র (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর ফেমাস গ্রুপের দুইটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ৮০ কোটি ২৮ লাখ টাকার গোপনকৃত বিক্রয় হিসাব আটক করেছে। এতে সরকারের প্রায় ১৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।

ব্যবসায়িক গ্রুপটির ফেমাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লি. প্রতিষ্ঠানটি ৯৩, টঙ্গি শি/এ, টঙ্গি, গাজীপুর-১৭১০ এ অবস্থিত। যার মুসক নিবন্ধন নং- ০০০০০২২১১-০১০। অন্যটি ফেমাস আইবারকেম ফ্লেভারস এন্ড ফ্র্যাগনেন্সেস লি. ২০৮৯, কুনিয়া তারগাছ, গাজীপুর সদর, গাজীপুর এ অবস্থিত। যার মূসক নিবন্ধন নম্বর -০০০১৩১৫৭৭-০১০৩। প্রতিষ্ঠান দুটোর কর্পোরেট অফিস- ইসলাম লডস (২য় তলা), হাইজ-১৪, রোড-১৬/এ, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।

প্রতিষ্ঠান দুটো মূলত খাদ্য সামগ্রীতে ব্যবহৃত কেমিকেল (ফ্লেভার) এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোড়কের প্যাকেজিং সামগ্রী উৎপাদন ও সরবরাহ করে।

প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত সেবা বিক্রির তথ্য গোপন করে চালান ব্যতীত সেবা সরবরাহ করে দীর্ঘ দিন ধরে সরকারের বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে বলে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যক্তি।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থার উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সাজেদুল হক এবং মুনাওয়ার মুরসালীন এর নেতৃত্বে গত ২৩ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্পোরেট অফিসে অভিযান পরিচালনা করেন।

অভিযানে গোয়েন্দা দল দেখতে পান, প্রতিষ্ঠানটি মাসিক দাখিলপত্রে প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।

অভিযানের শুরুতে কর্মকর্তাগণ প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সংক্রান্ত ও বাণিজ্যিক দলিলাদি প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ করা হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালিয়ে এবং প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারে ধারণকৃত তথ্যাদি যাচাই করে সেবা বিক্রি সংক্রান্ত বাণিজ্যিক দলিলাদি লুকায়িত অবস্থায় আটক করা হয়। এসব তথ্য ভ্যাট দলিলাদির সাথে ব্যাপক অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হয়।

তদন্ত অনুসারে, ফেমাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লি. প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকিং তথ্য অনুসারে ৮৬৯ কোটি ১০ লাখ ৮১ হাজার ৭২২ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় গাজীপুর ভ্যাট সার্কেল-৫ এ মাসিক রিটার্নে ৮২৭ কোটি ৯০ লাখ ৭১ হাজার ২৪৫ টাকার বিক্রয় হিসাব প্রদর্শন করেছে। রিটার্ন ও প্রকৃত বিক্রয়ের পার্থক্য পাওয়া যায় ৫৩ কোটি ৪৮ লাখ ৩ হাজার ৫১২ টাকা। প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করায় এক্ষেত্রে ৬ কোটি ৯৭ লাখ ৫৬ হাজার ৯৮০ টাকা ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে। এই ফাঁকির উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাসে ২% হারে ২ কোটি ৪১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৩৫ টাকা সুদ প্রযোজ্য।

এছাড়া, ফেমাস আইবারকেম ফ্লেভারস এন্ড ফ্র্যাগনেন্সেস লি. প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৪৭ কোটি ৩৮ লাখ ৯২ হাজার ৬৫১ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় ভ্যাট টঙ্গী সার্কেল-৪ এ মাসিক রিটার্নে ২০ কোটি ৫৯ লাখ ৩৭ হাজার ২৩০ টাকা বিক্রয় হিসাব প্রদর্শন করেছে। রিটার্ন ও প্রকৃত বিক্রয়ের পার্থক্য পাওয়া যায় ২৬ কোটি ৭৯ লাখ ৫৫ হাজার ৪২১ টাকা। প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করায় এক্ষেত্রে ৩ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার ৭০৭ টাকা ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে। এই ফাঁকির উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২% হারে ৪৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮১৬ টাকা সুদ প্রযোজ্য।

বর্ণিত তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠান দুইটির সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ১০ কোটি ৪৭ লাখ ৭ হাজার ৬৮৭ টাকা এবং সুদ বাবদ ২ কোটি ৮৭ লাখ ৩৫ হাজার ৬৫১ টাকাসহ সর্বমোট ১৩ কোটি ৩৪ লাখ ৪৩ হাজার ৩৩৮ টাকা রাজস্ব ফাঁকির তথ্য পাওয়া যায়।

এনবিআর জানায় বুধবার (২ মার্চ) ফেমাস গ্রুপের দুইটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্তে ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট আদায়ের আইনানুগ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে প্রেরণ করা হয়েছে।

এসি