ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারেন পুতিন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৩৫ পিএম, ৩ মার্চ ২০২২ বৃহস্পতিবার

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার প্রথম সপ্তাহ শেষে দেখা যাচ্ছে, ভ্লাদিমির পুতিন যেমনটা ভেবেছিলেন অথবা তার জেনারেলরা তাকে যেরকম ধারণা দিয়েছিলেন, তার চেয়েও অনেক শক্তভাবে পাল্টা লড়াই করতে শুরু করেছে ইউক্রেন। কিন্তু এই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত কী হতে পারে, সেটা বলার মতো সময় এখনো আসেনি।

ভ্লাদিমির পুতিন হয়তো আশা করেছিলেন, রাশিয়ার সৈন্যদের আক্রমণের কয়েকদিনের মধ্যেই কিয়েভের পতন হবে। সেই সঙ্গে তিনি হয়তো এটাও ভেবেছিলেন, যে অঞ্চলকে (ইউক্রেন) ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়ার অংশ বলে তিনি দাবি করেন, সেটাকে পুনরায় দখলে নেয়াকে মেনে নেবে দ্বিধাগ্রস্ত এবং বিভক্ত পশ্চিমা দেশগুলো। কিন্তু এর কোনটাই ঘটেনি।

ধারণার চেয়ে অনেক শক্ত বলে নিজেকে প্রমাণ করেছে ইউক্রেন। সেই সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলো যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, বিশেষ করে জার্মানি তার ধারণার চেয়ে জোরালো প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। রাশিয়ার অর্থনীতি এর মধ্যেই বেশ কঠিন আঘাতের মুখোমুখি হয়েছে।

পশ্চিমা দেশগুলোর ক্রোধ একদিন এসে তাদের ওপরেও পড়ে কিনা, তা নিয়ে পুতিনের আরেক বড় বন্ধু দেশ, চীনও চিন্তায় পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। সেটা হলে চীনের অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ সংকট তৈরি করবে। তাই এই আক্রমণ থেকে নিজেদের অনেকটাই দূরে সরিয়ে রেখেছে চীন।

অপরদিকে নেটোর আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে হয়তো ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন নেটো জোটে যোগ দিতে পারে।

ইউক্রেন যাতে নেটোতে যোগ দিতে না পারে, সেই জন্য এই যুদ্ধ শুরু করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। কিন্তু এর ফলে হয়তো তার উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে নেটো জোটে সদস্য সংখ্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।

এগুলো সবই পুতিনের জন্য বড় ধরণের পাল্টা আঘাত। কোভিড-১৯ থেকে আলাদা থাকার সময় তিনি নিজের মতো করে যেসব হিসাব-নিকাশ করেছেন, তারই ফলশ্রুতিতে এসব ঘটনা ঘটেছে।

ভ্লাদিমির পুতিন যখনই কোন সমস্যা পড়েন, তিনি পিছিয়ে যেতে অস্বীকার করেছেন। সুতরাং এখনো তিনি আরও কঠিন হামলার দিকে এগোবেন- আর তার কাছে সেই অস্ত্রও রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত দাবি করেছেন যে, রাশিয়ার সৈন্যরা এর মধ্যেই থার্মোব্যারিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে- যাকে অনেকে ‘ভ্যাকুয়াম বোমা’ বলে বর্ণনা করেন। এই বোমাটি আশেপাশের অক্সিজেন টেনে নিয়ে উচ্চ তাপমাত্রার বিস্ফোরণ তৈরি করে।

অনেক সময় রাষ্ট্রদূতরা চমকপ্রদ দাবি তুলে থাকেন। কিন্তু এক্ষেত্রে এমন ভিডিও এর মধ্যেই দেখা গেছে যে, রাশিয়া থেকে থার্মোবারিক রকেট লঞ্চার ইউক্রেনের দিকে ছোঁড়া হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এগুলো যেকোনো সময় ব্যাপক মাত্রায় ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে।

২০০৮ সালের একটি আন্তর্জাতিক সনদে এ ধরণের বোমা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু রাশিয়া ওই সনদে স্বাক্ষর করেনি। তাদের দাবি, আন্তর্জাতিক মানবতার রীতি মেনেই তারা ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করে। কিন্তু খারকিভের বাসিন্দারা হয়তো সেই দাবির সঙ্গে একমত হবে না।

ভয়ংকর রকমের মারণাস্ত্র ব্যবহার নিয়ে ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে কখনোই কোন দ্বিধা ছিল না। ধারণা করা হয়, লন্ডনে ২০০৬ সালে তেজস্ক্রিয় পোলোনিয়াম দিয়ে সাবেক কেজিবি এজেন্ট আলেকজান্ডার লিটভিনেঙ্কোকে হত্যায় অনুমতি দিয়েছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন।

এটা সত্যি যে, পুতিন বলেছেন যে, ইউক্রেনের ব্যাপারে কেউ যদি বাইরে থেকে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করে, তাহলে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে।

তিনি অনেকবার এরকম কথা বলেছেন, যে বিশ্বে রাশিয়ার জায়গা হবে না, সেই বিশ্ব টিকে থাকার দরকারটাই বা কী? তবে এটাও বলা দরকার, একটি পারমাণবিক সংঘর্ষের আশংকা তখনই তৈরি হবে, যখন নেটো তাদের হিসেবে সাংঘাতিক কোন ভুল করবে।

ইতিহাস নিজেকে পুনরাবৃত্তি করে। ১৯৩৯ সালে জোসেফ স্ট্যালিন ফিনল্যান্ড আক্রমণ করে আশা করেছিলেন যে, কয়েকদিনে মধ্যেই সেটি দখল করে নেবেন। কিন্তু তারা পাল্টা লড়াই শুরু করে। রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়। তথাকথিত ‘শীতকালীন যুদ্ধ’ শেষ হতে একশো দিনের বেশি লেগে গিয়েছিল।

সেই যুদ্ধে ফিনল্যান্ড কিছু এলাকা হারিয়েছে, কিন্তু স্বাধীন দেশ হিসাবেই টিকে গিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রেও সেরকম সম্ভাবনাই দেখা দিয়েছে। কারণ ইউক্রেন এখন পর্যন্ত রাশিয়াকে ঠেকিয়ে রেখেছে, কিন্তু খুব বেশিদিন হয়তো তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারবে না।

তবে যুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে বেশ ভালো ভাবেই উৎরে গেছে ইউক্রেন। বেশিরভাগ মানুষ যা ধারণা করেছিল, তার চেয়ে অনেক শক্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। যাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে, সেই তালিকার শীর্ষে থাকবেন ভ্লাদিমির পুতিন।
সূত্র: বিবিসি
এসএ/