সুবর্ণচরে একের পর এক রহস্যজনক মৃত্যু, এলাকায় আতঙ্ক
নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০২:৩৯ পিএম, ৪ মার্চ ২০২২ শুক্রবার
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়নের কেরামতপুরের আলোচিত মো. বেলাল হোসেন (৩২) হত্যাকাণ্ডের সাড়ে তিন মাসেও উদ্ঘাটন হয়নি রহস্য। ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী নিহত বেলালের বড় ভাই রফিকুল ইসলামসহ গ্রামের বাসিন্দারা।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, শুধু বেলাল হোসেন হত্যাকাণ্ডই নয়, বিগত পাঁচ-ছয় বছরে কেরামতপুর এলাকায় আরও পাঁচটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে দুটি ঘটনা স্থানীয়ভাবে সালিসের মাধ্যমে ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। আর বাকি তিনটির বিষয়ে ঝামেলা এড়াতে থানা-পুলিশের আশ্রয়ও নেয়নি ভুক্তভোগীরা। তবে সর্বশেষ বেলাল খুন হওয়ার পর থেকে এলাকাবাসীর মাঝে আতঙ্ক বেড়ে গেছে। অনেকে এখন রাতে একা চলতে ভয় পান।
সম্প্রতি সরেজমিনে চরক্লার্ক ইউনিয়নের কেরামপুর এলাকা ঘুরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৩১ অক্টোবর দুপুরে কেরামতপুর গ্রামের আনিছ মোল্লার বাড়ির পুকুরে বেলাল হোসেনের (৩২) লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে সুবর্ণচরের চরজব্বর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় নিহত বেলাল হোসেনের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম বাদী চরজব্বর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামির কলামে ‘অজ্ঞাত’ উল্লেখ করা হলেও বর্ণনায় নিহত বেলালের স্ত্রী মিনোয়ারা বেগমের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী চরক্লার্ক গ্রামের আবুল হাশেমের ছেলে শেখ ফরিদের (২৮) পরকিয়ার সম্পর্ক ছিল বলে উল্লেখ করা হয়। যার প্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনার দিনই মিনোয়ারা বেগমকে আটক করে। পরে ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
কেরামতপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. হাসান জানান, বেলাল হত্যাকাণ্ডের পর সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে একা বের হতেই এখন ভয় লাগে। কেউ একজনকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন।
তিনি জানান, শুধুমাত্র বেলাল হত্যাকাণ্ডই নয়, গত পাঁচ-ছয় বছরে কেরামতপুর এলাকায় এক কিশোর ও এক নারীসহ কমপক্ষে আরও পাঁচজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৫ সালে মো. আবদুর রহমান ওরফে রুবেলের (১২) লাশ পাওয়া যায় কেরামতপুর গ্রামের বোলন চেয়ারম্যানের বাড়ির পাশে গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায়। রুবেল তার নানার বাড়িতে থাকতো।
রুবেলের মৃত্যুর ছয়-সাত মাস পর একই বাড়ির পাশে একটি নবজাতকের লাশ পাওয়া যায়। ২০১৭ সালে একই গ্রামের আরেক বেলালের ভগ্নিপতির (৩০) লাশ পাওয়া যায় ঘরের মধ্যে অর্ধ ঝুলন্ত অবস্থায়। সেটি পরবর্তীতে স্থানীয়ভাবে সালিসের মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়।
এ ছাড়া ২০১৮ সালে (রমজান মাসে) একই গ্রামের ইলিয়াছের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। একই বছর ইলিয়াছের বোন হনুফা খাতুনের লাশ পাওয়া যায় পার্শ্ববর্তী মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের সোলেমান বাজারের পাশে। কিন্তু ঝামেলা এড়াতে এই দুটি ঘটনায় পরিবারের কেউ থানা-পুলিশের আশ্রয় নেয়নি বলে জানান মো. হাসান।
সর্বশেষ বেলাল হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চরজব্বর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দিপক চন্দ্র নাথ বলেন, সন্দেহভাজন আসামি মিনোয়ারা বেগমকে এরই মধ্যে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া সন্দেহভাজন অপর তিন আসামি এলাকাছাড়া। তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা অব্যাহত আছে। মামলার বাদী রফিকুল ইসলামকেও বলা হয়েছে, আসামিদের বিষয়ে খোঁজ-খবর জানানোর জন্য।
চরক্লার্ক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল বাশার বলেন, তিনি কোনো অস্বাভিবক মৃত্যুর ঘটনা শালিসের মাধ্যমে মীমাংসা করেননি। যদি হয়ে থাকে, তাহলে তার আগের মেয়াদের চেয়ারম্যানের আমলে হয়েছে। সর্বশেষ বেলাল হত্যার সঙ্গে জড়িতদের ধরিয়ে দিতে তিনি নিজেই নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কেরামতপুরে একাধিক অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা আইনের আওতায় না আসা এবং সর্বশেষ বেলাল হত্যার বিষয়ে চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক বলেন, বেলালের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। সন্দেহভাজন একজন গ্রেফতার আছে, বাকিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এছাড়া পূর্বের কোনও ঘটনা কেউ যদি পুলিশকে না জানায়, কিংবা কোনও অভিযোগ না করেন, তা হলে থানা পুলিশের কি করার আছে- বলে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এনএস//