ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

নির্বাসিত ইউক্রেনীয় সরকার গঠনের কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫৮ পিএম, ৭ মার্চ ২০২২ সোমবার | আপডেট: ১১:৫৯ পিএম, ৭ মার্চ ২০২২ সোমবার

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা তীব্রতর হলে একটি নির্বাসিত সরকার গঠনের কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ভলোদিমির জেলেনস্কি ও তার সরকারের কার্যক্রম পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লাভিবে সরিয়ে নেওয়া কিংবা নির্বাচিত সরকারকে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হলে প্রতিবেশী পোল্যান্ডে একটি নির্বাসিত সরকার গঠন করার গঠনের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

পশ্চিমা এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত যে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তাতে পুতিন হামলা অব্যাহত রাখবে বলেই মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে, পুরো ইউক্রেনকে নিয়ন্ত্রণে নেবে রাশিয়া।

মস্কোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজের চেষ্টাকে শক্তিশালী করার বদলে অন্য কোনো আলোচনা করতে নারাজ জেলেনস্কি। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইউক্রেনে উড়াল-নিষিদ্ধ অঞ্চল ঘোষণার দাবিতে সরব হয়েছেন তিনি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এই ঘোষণা দেওয়া হলে তার অর্থ হবে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়া।

জেলেনস্কি নিহত হলেও যেভাবেই হোক ইউক্রেনের সরকার অব্যাহত থাকবে। ইউক্রেনীয় নেতাদের এমন পরিকল্পনা রয়েছে। রোববার (৬ মার্চ) সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকিন।

তিনি বলেন, এ নিয়ে ইউক্রেনের নেতাদের একটি পরিকল্পনা রয়েছে, যা নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাই না। এ নিয়ে আমার বিস্তারিত কথা বলারও ইচ্ছা নেই। তবে যেভাবেই হোক, সরকার বহাল থাকবে।

সংকটের মধ্যে জেলেনস্কির নেতৃত্বের তারিফ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট তার নেতৃত্ব দেখিয়ে দিয়েছেন। পুরো সরকার যা করেছে, তা উল্লেখযাগ্য। তারা অবিশ্বাস্য সাহসী ইউক্রেনীয়দের প্রতিমূর্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হাতে যদি জেলেনস্কি নিহত কিংবা গ্রেফতার হন, তাহলে তার উত্তরসূরি নির্ধারণে আলোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র দেশগুলো। বিভিন্ন দেশের সরকারের সূত্রের বরাতে নিউইয়র্ক টাইমস এমন খবর দিয়েছে।

ইউক্রেনে যে কোনো আকারে একটি স্বাধীন সরকার নিশ্চিত করা নিয়েই তারা প্রাথমিক উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এমনকি কিয়েভে যদি রাশিয়া একটি পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠার উপায় খুঁজে পায়, তবুও দেশটিতে একটি স্বাধীন সরকার নিশ্চিত করতে হবে এবং সেই সরকারটি হতে হবে বৈধ।

পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলেন, পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে একজন স্বাধীন নেতাকে স্বীকৃতি দেওয়া গেলে রাশিয়া-সমর্থিত যে কোনো সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হবে। তাতে রাশিয়ার পুতুল সরকারও স্বীকৃতি পাবে না।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ও জনগণের মনোবল ধরে রাখতে জেলেনস্কির উপস্থিতি ও তার আবেগী বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটকের ভূমিকা রাখছে। তিনি দেশ ছেড়ে কোথাও যেতে চাচ্ছেন না। অনেকটা পরিহাস করে বলেছেন, আমার গোলাবারুদ দরকার, দেশ থেকে পালাতে বাহনের প্রয়োজন নেই।

সেনাবাহিনী যখন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তখন দেশে অবস্থান করতে তার প্রত্যয় প্রশংসনীয় বলে মনে করেন পশ্চিমা নেতারা। রাশিয়া কোনো পুতুল সরকার বসালে তাতে স্বীকৃতি দেবে না যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

এরপর ইউক্রেনকে মুক্ত করতে যদি কোনো স্বীকৃত নেতা থাকেন, তবে মস্কো নিয়ন্ত্রিত সরকারকে দুর্বল করে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা নেতাদের জন্য সহজ হবে। এখানে আরও কিছু বাস্তবিক ও আইনগত বিষয় কাজ করছে। সেসব মাথায় রেখে ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রকাশ্যে নিয়ে আসছে, যাতে ইউক্রেনের জনগণ তাদের সহায়তার বিষয়টি জানতে পারেন।

ইতিমধ্যে ইউক্রেনে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র, স্টিংগার বিমানবিধ্বংসী অস্ত্র, বিভিন্ন ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ও সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম পাঠিয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলো। এতে কিয়েভ একদিকে শক্তিশালী হচ্ছে, অন্যদিকে রুশ সামরিক বাহিনী ক্ষতির মুখে পড়ছে।

একটি কার্যকরী সরকার যদি পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউক্রেন কিংবা পোল্যান্ড ও রোমানিয়া থেকেও পরিচালিত হয়, তবে তাদের কাছে সহায়তা পাঠানো অনেক সহজ হবে। বিশ্বজুড়ে বিদ্রোহীদের কাছে গোপন অস্ত্র সরবরাহের দীর্ঘ ইতিহাস আছে যুক্তরাষ্ট্রের। ইউক্রেনের ক্ষেত্রে সেই সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দরকার একটি আনুষ্ঠানিক কিন্তু গোপন জায়গা।

আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধ কী রাশিয়া-চীন সম্পর্কে ফাটল ধরাচ্ছে?

রাশিয়ার বিরুদ্ধে সংঘটিত সামরিক প্রতিরোধ যতটা দীর্ঘ হবে, পুরো দেশ কিংবা কোনো কোনো অংশে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ ততটা স্থায়ী হবে। গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস ও ক্যাপিটল হিলে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে এ নিয়ে। রাশিয়া যদি কিয়েভের নিয়ন্ত্রণ নেয়, তবে কীভাবে সহায়তা দেওয়া হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।

এমন প্রেক্ষাপটে প্রকাশ্যেই ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এতে ইউক্রেনের জনগণের মনোবল যেমন বাড়বে, তেমনি রাশিয়ার কাছে একটি বিষয় পরিষ্কার হবে যে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ হচ্ছে না। জেলেনস্কির উত্তরসূরি হিসেবে যাদের ভাবা হচ্ছে, তারা যেন একই স্থানে দীর্ঘ সময় অবস্থান না করেন, তা নিশ্চিত করতে চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কিয়েভের বাইরের কোনো নিরাপদ স্থানে তাদের সরে যেতে বলা হয়েছে।

রাজধানীর পতন ঘটলে নেতৃবৃন্দের ব্যবহারের জন্য একটি স্থান নির্ধারণ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো। সেক্ষেত্রে পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউক্রেনের কারপাথিয়ান পর্বতমালাকে নির্জন আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু জায়গাটি বোমা প্রতিরোধক কিনা অথবা যোগাযোগকে কঠিন করে তুলবে কিনা, তা বলেনি ইউক্রেনের কর্মকর্তারা।

ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, জেলেনস্কির স্থলাভিষিক্ত হেসেবে স্পিকার কিংবা পার্লামেন্টের প্রধানই ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। দেশটির বর্তমান স্পিকার রুসলান স্টেফ্যানচুক একজন পশ্চিমাপন্থী রাজনীতিবিদ। জেলেনস্কির সাবেক সহযোগী।

মার্কিন ও ইউরোপীয় কর্মকর্তারা বলছেন, জেলেনস্কির উত্তরসূরি হিসেবে রুসলানসহ যাদের ভাবা হচ্ছে, তারা সবাই রুশ আগ্রাসনের চরমবিরোধী। রুসলানকে স্থানান্তরে পশ্চিমাদের পরামর্শের বিরোধিতা করেছে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। কিন্তু তাদের বোঝানো হয়েছে, জেলেনস্কি নিহত হলে সংবিধান অনুসারে তার একজন বৈধ উত্তরসূরি দরকার। যেটা হতে পারেন স্পিকার রুসলান। এতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জোরালো লড়াই চালিয়ে যাওয়া সহজতর হবে।
কেআই//