ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

নারী দিবসে নারী ভাবনা

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ১১:৫৭ এএম, ৮ মার্চ ২০২২ মঙ্গলবার

নারী শব্দটি শুনতে ছোট হলেও এর অর্থ ব্যাপক। সংসার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা- সবই সামলাচ্ছে নারী।

দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সকল খাতে তাদের স্বাক্ষরতার দৃষ্টান্তে চোখ আটকে যায়। তবে হতাশার কথা, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও এদেশে নারীরা নিরাপদ নয়। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, খুন, যৌতুক ও বাল্যবিবাহের মত নিকৃষ্ট ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। 

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নিজেদের ভাবনা ও প্রত্যাশা একুশে টেলিভিশনের কাছে তুলে ধরেছেন নারীরা। 

সুমাইয়া আখতার তারিন
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল বিশ্বিদ্যালয়

বর্তমানে নারী সমাজের যে অগ্রগতি তা নারী আন্দোলনের ফসল। আমরা আমাদের চারপাশে লক্ষ্য করলে দেখতে পাই নারীর প্রতি সমাজের বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি। 

একবিংশ শতাব্দীতে এসেও এমন দৃশ্য দেখতে পাওয়াটা লজ্জাজনক। এটি থেকে বের হয়ে আসার জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। এছাড়া পারিবারিক শিক্ষা, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং মানসিকতার পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
 
নারীর প্রতি অধিকাংশ মানুষের বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গির অনেক প্রতিকূলতা পার হয়ে এসেছি। ছেলেদের সাথে সমানতালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে, সাংবাদিকতা করছে মেয়েরা।

ইসরাত জাহান প্রমা
ভেটেরিনারি অ্যান্ড সায়েন্স বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়

নারী অধিকারে সোচ্চার হওয়া ঐতিহাসিক একটা দিন ৮ মার্চ। আমার মতে প্রত্যেকদিনই মেয়েদের জন্য নারী দিবস। কারণ প্রত্যেকদিনই মেয়েদের নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করতে হয়। ২০২২ সালে এসে আমরা এখনও নিজের অধিকার আদায়ে সক্ষম হইনি। বেশিরভাগ নারীকেই চার দেয়ালে বন্দী থেকে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে জীবন কাটাতে হচ্ছে। 

প্রতিটা নারীরই নিজস্ব পরিচয় থাকা উচিত। নিজের মতো করে বাঁচা, স্বাধীন জীবন-যাপন করাটা প্রতিটি নারীর অধিকার। আধুনিক যুগে এসেও সমাজে নানাভাবে নারীরা বঞ্চিত হচ্ছে, নানারকম সহিংসতার শিকার হচ্ছে। তবে প্রত্যশা করব খুব দ্রুতই নারীর ক্ষমতায়নে সুস্থ-সুন্দর বিশ্ব গড়ে উঠবে। সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীর বীরত্বগাথা লেখা থাকবে। নারী-পুরুষ সমতায় রঙিন হবে স্বপ্নের পৃথিবী। 

জান্নাতী বেগম
ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

নারী আন্দোলনের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় নারী সমাজের অনেকটা অগ্রগতি ঘটেছে। নারীরা আজ প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনেকটাই এগিয়ে। তবে এখনো অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে নারীদের বিচরণ ঠিকভাবে হয়নি। সেসব জায়গায় পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করলে হয়তো নারীদের বিচরণ শুরু হবে। তবে জেন্ডার সমতা নিয়ে এখনও সমাজে বিরূপ দৃশ্য দেখা যায়। যা একটি উন্নত রাষ্ট্র গঠনের অন্তরায়। 

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করার জন্য সমাজের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। নারী দিবস একদিনে পালন করা যায় না। কারণ, সমুদ্রের জল একটা গ্লাসে রাখা যায়না, বলেন এই শিক্ষার্থী।

নুসরাত জাহান,
আইন বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি 

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মূল লক্ষ্য শুধুমাত্র প্রতিবছর দিবস পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা নয়। বরং, নারী দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হতে হবে সমাজের সর্বস্তরের নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা। 

নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা শুধুমাত্র নারী দিবস পালন করা নয়। সভা-মিছিলে নারীদের নিয়ে বড় বড় ভাষণ দেওয়ার মাধ্যমে নারী অধিকার নিশ্চিত হয়ে যায় না। ভূমিতেও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রতিটি নারী দিবসে এমন একটি করে নতুন চ্যালেঞ্জ হাতে নিতে হবে। তাহলেই কেবল নারী দিবসের সার্থকতা বজায় থাকবে।

খাদিজা জাহান তান্নি
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, বশেমুরবিপ্রবি

নারী নির্যাতন, অপহরণ, আর ধর্ষণের খবর এখন অলিগলি ছুঁয়ে গেছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। সমাজের একটি অপরিহার্য অংশ হয়েও নারীদের নিরাপত্তা কোথায়? এমনভাবে চলতে থাকলে জাহিলিয়াতের যুগে ফিরে যেতে বেশি দেরি নয়। ইসলাম ও সমাজ দুই জায়গায়ই নারীদের মর্যাদা অতুলনীয়। সেই শিক্ষা বাস্তবায়নের অভাবে আমাদের সামনে এই ভয়ংকর চিত্রগুলো ফুটে উঠছে।

সমাজের রীতিনীতি অমান্যকারীদের কঠোর বিচার তো দূরে থাক বরং পক্ষে কথা বলা লোকের অভাব নাই। এই কালো অধ্যায়ের অবসান ঘটে নতুন দিনের সূচনা হোক- এটাই নারী দিবসে প্রত্যাশা।

যুথী বিশ্বাস
ইসলামিক স্টাডিজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

নারীরা নিজেদের অধিকার আদায়ে সুদীর্ঘকাল যাবত আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছেন। এই পথে অগ্রগতি মন্থর হলেও তা চলমান আছে। সমাজে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তবে আমাদের শিক্ষিত পরিবারগুলোতে এই ব্যাপারে কিছুটা উন্নতি দেখা গেলেও সেই অর্থে গ্রামের পরিবারগুলোতে কোনো প্রভাব নেই বললেই চলে। 

তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সেভাবে না পড়ায় লিঙ্গ সমতা ব্যাপারটা এখনো তাদের কাছে অজানা। আমি নিজেও যখন ভার্সিটিতে ভর্তি হই তখনও আমাকে গ্রামবাসীদের অজস্র অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে।

এএইচ