বকেয়ার ভারে ধুকছে জাবি’র ক্যাফেটেরিয়া
জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১২:২০ পিএম, ৯ মার্চ ২০২২ বুধবার | আপডেট: ০১:৩৪ পিএম, ৯ মার্চ ২০২২ বুধবার
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ক্যাফেটেরিয়া। আড্ডা দেয়া থেকে শুরু করে গ্রুপ স্টাডি, ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে সবসময়ই সরগরম থাকে। কিন্তু প্রশাসন ও শিক্ষকদের কাছে পাওনা টাকা দীর্ঘদিন ধরে না পেয়ে ধুকছে ক্যাফেটেরিয়াটি।
খাদ্যদ্রব্য কেনার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে অগ্রিম টাকা পরিশোধ করে টোকেন নিয়ে খাবার সংগ্রহ করতে হয়। তবে এই নিয়ম শিক্ষকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন ও খাবারের মূল্য বাবদ শিক্ষক এবং জাবির বিভিন্ন অফিসের কাছে গত ১২ বছরে ক্যাফেটেরিয়ার পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় চার লাখ টাকায়। যেখানে শুধু একজন শিক্ষকের কাছেই রয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অফিস ও শিক্ষকরা ক্যাফেটেরিয়াতে ৩ লাখ ৮১ হাজার ৯৯০ টাকা বাকি রেখেছেন। শিক্ষকদের কাছে ক্যাফেটেরিয়ার মোট পাওনা ৩ লাখ ৩২ হাজার ২৯০ টাকা। এর মধ্যে শুধুমাত্র গণিত বিভাগের একজন শিক্ষক ২০১২-১৬ সাল সময়কালের মধ্যে ৯৯ হাজার ৪৪৬ টাকা বকেয়া রেখেছেন।
মুঠোফোনে উক্ত শিক্ষককের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া কোন কোন শিক্ষক ৩১ হাজার ০৫০ টাকা, ২৩ হাজার ৫শ’ টাকা ও ১৭ হাজার ৬৭১ টাকা পর্যন্ত বকেয়া রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল-কলেজ, ট্রান্সপোর্ট অফিস, কলতান বিদ্যানিকেতনসহ বিভিন্ন অফিসের কাছে ক্যাফেটেরিয়ার পাওনা রয়েছে ৪৯ হাজার ৭শ’ টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্যাফেটেরিয়ায় আলাদা করে কোনো ভর্তুকি দেয়া হয় না। রোজ যা বিক্রি হয় সেই টাকা থেকেই কাঁচামাল কিনে খাবার বানিয়ে পুনরায় বিক্রি করা হয়। অথচ এর মধ্যে শিক্ষকদের কাছে এই বিশাল পরিমাণ বকেয়া।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের বর্তমান পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর কবির বলেন, ‘আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এক টাকাও বাকি দেওয়া হয়নি। বকেয়াগুলো বিগত অনেক বছর ধরে জমেছে, এই বিষয়ে আমরা প্রশাসনকে অবহিত করেছি।’
ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের উপ-পরিচালক অধ্যাপক ড. জেবউননেছা বলেন, ‘আমরা দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে এই বকেয়া আদায় করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি, শিক্ষকদের কাছে বকেয়া টাকার জন্যে চিঠিও দিয়েছি।’
এ বিষয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের ২০১৩-১৪ কার্যকালের পরিচালক প্রফেসর আহমেদ রেজা বলেন, ‘আমার সময়ে একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এক লাখ টাকা আদায়ে করেছি। এছাড়া সবাইকে চিঠি দিয়ে টাকা আদায় করার চেষ্টা করেছি।’
২০১৪-১৬ কার্যকালের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. খবির উদ্দিন বলেন, ‘আমি নিজের রেফারেন্সে প্রত্যেককে চিঠি দিয়েছি এবং টাকা আদায় করার চেষ্টা করেছি, অনেকে দিয়েছেন, অনেকে দেয়নি।'
২০১৬-১৯ কার্যকালের পরিচালক অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘আমার সময়ে কোনো বাকি দেয়া হয়নি, বরং বেশ কিছু টাকা আদায় করা হয়েছে। প্রত্যেককে চিঠি দেয়া হয়েছে কিন্তু কয়েকজন শিক্ষক কোনো রেসপন্স করেননি।’
এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে অধ্যাপক ড. জেবউননেছা বলেন, ‘অন্যান্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ক্যাফেটেরিয়ার বিল সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন শাখায় চলে যায় এবং সেখান থেকেই বকেয়া কেটে রাখা হয়। জাবিতে এই ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।’
এছাড়া শিক্ষা ছুটিতে যাওয়ার আগে শিক্ষকদের পাঠাগার ক্লিয়ারেন্স নেয়ার সাথে সাথে ক্যাফেটেরিয়ার বিল পরিশোধপূর্বক ক্যাফেটেরিয়া ক্লিয়ারেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। এই ব্যবস্থাগুলো নিলে এ ধরণের সমস্যা আর হবে না আশা করেন তিনি।
এএইচ/