ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

বিপন্ন প্রজাতির শাপলা পাতা মাছে সয়লাব মোংলার বাজার

মোংলা প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০১:৩৬ পিএম, ১০ মার্চ ২০২২ বৃহস্পতিবার

‘কেজি ৪০০, কেজি ৪০০, তাজা মাছ ৪০০ টাকায় খাইলে আবার আসবেন’ এভাবে হাঁকডাক দিয়ে প্রকাশ্যে মোংলার প্রধান মাছ বাজারে বিক্রি হচ্ছে মহাবিপন্ন প্রজাতির ‘শাপলা পাতা’ মাছ। 

বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) সকালে মাছ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন বিক্রেতা ডালায় শাপলা পাতা মাছ সাজিয়ে বিক্রি করছেন।

সরেজমিনে গিয়ে বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) সকালে মাছ বিক্রির দৃশ্য দেখা যায়।

তবে, সাগর এবং সুন্দরবনের বিভিন্ন নদ নদীতে বিলুপ্ত প্রজাতির এই মাছ শিকার নিষিদ্ধ ও বিক্রি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু কেউ তা মানছেন না। 

স্থানীয় প্রশাসন এমনকি মৎস্য বিভাগ এবং বনবিভাগের কর্তাব্যক্তিরা নিরব থাকায় অহরহ এই মাছ বাজারে আসছে।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) কর্তৃক শাপলা পাতা মাছকে বিপন্ন প্রায় প্রজাতি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ সালের আইনানুযায়ী এই মাছ শিকার নিষিদ্ধ।

 ‘কেজি ৪০০, কেজি ৪০০, তাজা মাছ ৪০০ টাকায় খাইলে আবার আসবেন’ এরকম চটকারি হাঁক দেওয়ায় ক্রেতারাও হুমরি খেয়ে কিনছেন। তবে এই মাছ শিকার এবং বিক্রি যে নিষিদ্ধ তা জানেননা বলে দাবি বিক্রেতা।

মোংলা পোর্ট পৌরসভা মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ আফজাল ফরাজি ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল হালিম বলেন, প্রায় প্রতিদিনই সাগর থেকে জেলেরা শাপলা পাতা মাছ বাজারে আনছেন। এই মাছ ধরা বা বিক্রি যে নিষিদ্ধ তা আমরা জানিনা, আমাদের কেউ বলেনি। 

সাগর থেকে এই মাছ শিকার করে নদী পথে আনার সময়ও বনবিভাগের কোন কর্মকর্তাও বাধা দেয়না বলে জানান তিনি। 

মৎস্য ব্যবসায়ী মোঃ সোলায়মানের দাবি, বনবিভাগের লোকজনই তাদের শাপলা পাতা মাছ বাজারে আনার সহায়তা করেন। তারা নিষেধ করলে তো আর এই মাছ বাজারে ওঠানো সম্ভব না। 

অন্য এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের বিএম (বোটম্যান) এসব মাছ বিক্রি করায় তাদের কাছ থেকে কয়েক দফায় টাকা নিয়েছেন।

তবে বিএম মিজানুরের দাবি, ব্যবসায়ীরা তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। 

এ প্রসঙ্গে খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে বলেন, প্রচার-প্রচারণার অভাবেই মূলত কেউ জানেনা এই শাপলা পাতা মাছ শিকার নিষিদ্ধ। এখন থেকে মাইকিং করে এটার বিরুদ্ধে সতর্ক করা হবে। আর বিএম মিজানুর রহমানের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। 

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রধান প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুর রউফ বলেন, সাগর বা সমুদ্র থেকে দিনের পর দিন এভাবে নিধন চলতে থাকলে একসময় এই শাপলা পাতা মাছ পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। 

সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের উদাসীনতার কারণেই এমন শিকার হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই শিকারের কারণে জীব বৈচিত্র্য বাধাগ্রস্থ হবে। সাগরে এই মাছের নিধন ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

এএইচ/