ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাপা সিরাপ বিক্রি বন্ধ, তদন্তে ৪ কমিটি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৫:৫৩ পিএম, ১৩ মার্চ ২০২২ রবিবার

নিহত দুই শিশুর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছেন তদন্ত কমিটি।

নিহত দুই শিশুর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছেন তদন্ত কমিটি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ‘নাপা সিরাপ’ খেয়ে দুই (শিশু) ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় চলছে জেলাজুড়ে। নিহত সহোদরের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের আহাজারী-কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। ঘটনার বিচার দাবি করছেন স্থানীয়রা। এদিকে পুরো ঘটনার তদন্তে গঠিত হয়েছে পৃথক ৪টি তদন্ত কমিটি। 

বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের দূর্গাপুর গ্রামের ইটভাটা শ্রমিক ইসমাঈল হোসেন সুজন খানের দুই শিশুপুত্র ইয়াছিন খান (৭) ও মোরসালিন খান (৫) নাপা সিরাপ সেবনের ১০/১৫ মনিটের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। 

পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, শিশু দুটিকে হাসপাতালে আনার পর তেমন কোনো চিকিৎসা মেলেনি। শিশুদের স্বজনরা জানিয়েছে, ঔষধ খাওয়ানোর পরই তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। 

এ ঘটনা তদন্তে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটির প্রধান সরজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। 

স্বাস্থ্য বিভাগ চট্রগ্রাম অঞ্চলও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এতে প্রধান করা হয়, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের পরিচালককে। তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ ব্রাহ্মণবাড়িয়াও। এছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

স্থানীয় ক্যামিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি সাধারণ সম্পাদক আবু কাউসার জানান, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই (নাপা) সিরাপ ও ট্যাবলেট বিক্রি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এদিকে, রোববার থেকেই কাজ শুরু করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি। এদিন দুপুরে আশুগঞ্জ উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামে গিয়ে তদন্ত কমিটির সদস্যরা নিহত দুই শিশুর স্বজনদেন সঙ্গে কথা বলেন। ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আকিব হোসেন। তার সঙ্গে অধিদপ্তরের দুইজন উপ-পরিচালক ও দুইজন সহকারী পরিচালক এবং একজন পরিদর্শক রয়েছেন। 

এই তদন্ত কমিটি মৃত দুই শিশুর মা লিমা বেগম ও চাচা উজ্জল মিয়া ও দাদি নিলুফা বেগমের সাক্ষ্য নেন। 

সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. আকিব হোসেন জানান, যে সিরাপটি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, সেটি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছে। একই ঔষধের অন্যান্য ব্যাচের ঔষধ সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তিনি মানব সেবার প্রয়োজনে ব্যবহৃত এই ঔষধ সেবনের মাত্র ১৫ মিনিটের ব্যবধানে এমন মৃত্যুর ঘটনাকে রহস্যজনক বলে মন্তব্য করে রহস্য উদঘাটনে চেষ্টার কথা জানান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতারের তত্ত্বাবধায়ক মো. ওয়াহীদুজ্জামান জানান, রোগীর স্বজন, চিকিৎসক ও কর্মীদের গাফিলতির পাশাপাশি তৃতীয় কোনো পক্ষের কারসাজি রয়েছে কি-না, এর তদন্তের জন্যই কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম জানান, সিরাপে ক্ষতিকারক উপাদান ছিল কি-না, তা খতিয়ে দেখতে ল্যাবরেটরীতে পাঠানো হয়েছে। ল্যাবরেটরীর রিপোর্ট আসার পরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এনএস//