ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণে ‘নো-ফ্লাই জোন’র দাবি জেলেনস্কির

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:০৩ পিএম, ১৬ মার্চ ২০২২ বুধবার | আপডেট: ১০:২১ পিএম, ১৬ মার্চ ২০২২ বুধবার

ইউক্রেনে একদিকে অব্যাহত লড়াই, অন্যদিকে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধবিরতির আলোচনা - এ পরিস্থিতির মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ভিডিও লিংকে মার্কিন কংগ্রেসে দেয়া এক ভাষণে আবারও ইউক্রেনের আকাশে 'নো-ফ্লাই জোন' বলবৎ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

আমেরিকার কাছে আরো সাহায্য চেয়ে এক আবেগপূর্ণ ভাষণে জেলেনস্কি তাকে যুদ্ধবিমান সরবরাহের আহ্বান জানান - যাতে 'ইউক্রেনের আকাশকে রাশিয়া মৃত্যুর উৎসে পরিণত করতে না পারে'।

ব্রাসেলসে ন্যাটোর প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের এক বৈঠকেও ভিডিওলিংকের মাধ্যমে যোগ দেয়া ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ নো-ফ্লাই জোন আরোপের আহ্বান জানান।

ন্যাটো মহাসচিব জেন্স স্টোলটেনবার্গ বলেছেন ইউক্রেনের সমর্থনে এই জোট ঐক্যবদ্ধ এবং সদস্য দেশগুলো ইউক্রেনকে জরুরি সামরিক সরঞ্জাম দিচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত ন্যাটো জোট নো ফ্লাই জোনের দাবি প্রত্যাখ্যান করে এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা রাশিয়ার সাথে সরাসরি সংঘাতে জড়াতে চায় না।

তবে ইউক্রেন এ যুদ্ধে আরো অস্ত্র সাহায্য পাচ্ছে, আজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনের জন্য আরো এ্যান্টি ট্যাংক মাইন এবং এয়ারডিফেন্স সিস্টেম দেবার কথা ঘোষণা করছেন।

যুদ্ধ থেমে নেই
অন্যদিকে ইউক্রেনে যুদ্ধ থেমে নেই। রাজধানী কিয়েভসহ শহরগুলোর ওপর রাশিয়ার বোমা ও আর্টিলারি হামলা চলছে।

কিয়েভে আরো একটি আবাসিক ভবনে গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। শহরটির উত্তর পশ্চিমে ধোঁয়ার কুন্ডলি আকাশে উঠতে দেখা যাচ্ছে। একজন উর্ধতন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা বলছেন, তাদের বাহিনী পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছে।

ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের ওপরও প্রচণ্ড বোমাবর্ষণ চলছে। শহরটি এক বাসিন্দা বিবিসিকে বলেছেন, রুশ বাহিনী একটি আবাসিক এলাকার ওপর আঘাত হানার জন্য ক্লাস্টার গোলা ব্যবহার করছে - যা আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী নিষিদ্ধ। তবে এতে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেন স্বাক্ষর করেনি। খারকিভে দুজন নিহত হবার খবর পাওয়া গেছে।

ইউক্রেনে মার্কিন দূতাবাস বলছে, চেরনিহিভ শহরে রুশ বাহিনীর গুলিতে রুটির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ১০ জন লোক নিহত হয়েছে।

দক্ষিণ পূর্বের জাপোরিঝিয়া শহরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেখানে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র একটি ট্রেন স্টেশন এবং পার্কে আঘাত হেনেছে - যা ওই শহরে বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র হামলা।

অন্যদিকে যুদ্ধের কারণে মারিউপোল শহরের "দুঃস্বপ্নের মত পরিস্থিতি" নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন আন্তর্জাতিক রেডক্রসের সভাপতি পিটার মোয়ার। তিনি বলছেন মারিউপোল শহরে হাজার হাজার লোক এখনো আটকা পড়ে আছে এবং তাদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া যাচ্ছে না।

রুশ বাহিনীর অগ্রাভিযান "থমকে গেছে"
ইউক্রেনের পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিটিশ সরকার সবশেষ যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়, রুশ বাহিনীর অগ্রাভিযান থমকে গেছে, এবং ইউক্রেনের ভূখন্ডে তারা যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে তা অতিক্রম করতে তারা হিমশিম খাচ্ছে।

ইউক্রেনের সৈন্যরা যেসব সেতু ধ্বংস করে দিয়েছে - তা রুশ অগ্রাভিযান প্রতিহত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তা ছাড়া ইউক্রেনের আকাশের নিয়ন্ত্রণ দখল করার ক্ষেত্রে রুশ ব্যর্থতা তাদের সক্ষমতাকে ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয় - এমন প্রমাণও মিলছে যে রাশিয়া - ইউক্রেনের কিছু জায়গায় পূর্ব রাশিয়া থেকে সৈন্য এনে পুনর্মোতায়েন করতে হয়েছে, তাদের প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের সহায়তাও নিতে হয়েছে।

তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ তার মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে বলেছেন, ইউক্রেনে তার দেশের অভিযান পরিকল্পনা মতই এগুচ্ছে তবে পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার অর্থনৈতিক দুর্ভোগের কথাও তিনি স্বীকার করেন।

শান্তি আলোচনা অব্যাহত - আশাবাদী কথাবার্তা
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনা এখন অধিকতর বাস্তবমুখী হচ্ছে, তবে এতে কোন ফলাফল পেতে আরো সময় লাগবে। মঙ্গলবার তিনি এটাও বলেছিলেন যে ইউক্রেনের মানুষ এখন বুঝতে পারছে যে তাদের দেশের আসলে ন্যাটোতে যোগ দেয়া হবে না।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই লাভরভও বলছেন, একটি আপোষরফা হবার আশা আছে, তবে ইউক্রেনকে অবশ্যই অসামরিকীকরণ করতে হবে।

গত কয়েকদিন ধরে মুখোমুখি এবং অনলাইনে উভয়ভাবেই এ আলোচনা হচ্ছে। আজ আরো আলোচনা হবার কথা রয়েছে - যা অনলাইনে হবে। ইউক্রেনীয় আলোচক মিখাইলো পোলডিয়াক বলছেন, দু পক্ষের অবস্থানে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে তবে আপোষের সুযোগও আছে। সূত্র: বিবিসি

এসি