সুখ-দুঃখের নকশিকাঁথা (ভিডিও)
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০১:১১ পিএম, ১৭ মার্চ ২০২২ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৩:৫০ পিএম, ১৭ মার্চ ২০২২ বৃহস্পতিবার
নকশিকাঁথা উপমহাদেশের লোকশিল্পের একটা অংশ। সূক্ষ্ম হাতে সুঁচ আর রঙিন সুতায় গ্রামবাংলার নারীরা মনের মাধুরী মিশিয়ে নান্দনিক এই কাঁথা বোনেন। তবে আধুনিক লেপ-কম্বলের আগ্রাসনে হারিয়ে যেতে বসেছে সেই ঐতিহ্য।
কাঁথাশিল্প উপমহাদেশের এক সুপ্রাচীন শিল্পকলার নিদর্শন। নরম কাপড়ে তৈরি কাঁথার গায়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে বিচিত্র নকশা তোলার রেওয়াজ কবে থেকে শুরু হলো তা সঠিকভাবে বলা যায় না।
নকশিকাঁথা শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে গ্রামের আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ড, যার সুচারু বর্ণনা মেলে পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের নকশিকাঁথার মাঠ আখ্যানে।
আগে সংসারে স্বচ্ছলতার পাশাপাশি বাড়তি খরচ মেটাতে ভূমিকা রাখতো হাতে তৈরি নকশিকাঁথা। কালের বিবর্তনে কারখানায় তৈরি দেশি-বিদেশি রং-বেরঙের লেপ-কম্বলের চাহিদায় হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামীণ এই শিল্প। বিরল হয়ে পড়েছে কাঁথা সেলাইয়ের কাজে গ্রামাঞ্চলের কিশোরী ও নারীদের ব্যস্ত সময় কাটানোর দৃশ্যও।
নকশী কাঁথার কারিগর জানান, পড়াশুনার ফাঁকে ফাকে কাঁথা সেলাই করে যে টাকা পাই তা পড়াশুনার কাজে লাগে।
“দুইটা টাকার জন্য কাঁথা সেলাই করি, সেই টাকা দিয়ে বাচ্চাকাচ্চার দু’একটা কাপড় দিলাম বা ভালমন্দ খাওয়ালাম” বলেন আরেক কারিগর।
উৎপাদন, আয় বৃদ্ধি ও নতুন বাজার তৈরির মাধ্যমে শিল্পটির সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
কুড়িগ্রাম যাত্রাপুর ইউপি সদস্য রহিম আহমেদ রিপন বলেন, “আধুনিক যুগ হওয়ায় বর্তমানে লেপ-তোষক আসার কারণে এই বিধবা বা গরিব ও চরাঞ্চলের মহিলাদের এই আয়টা বন্ধ হয়ে গেছে।”
নকশিকাঁথার ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে বিসিক শিল্পনগরী থেকে ঋণ সহায়তা ও বাজারজাতের উদ্যোগের কথা জানালেন এই কর্মকর্তা।
কুড়িগ্রাম জেলা বিসিক শিল্পনগরী উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “এই ঐহিত্যবাহী পণ্যকে আবার নতুন করে কিভাবে বাজারে নিয়ে আসা যায় এজন্য বিভিন্ন উদ্যোক্তাকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।”
শুধু সুঁইয়ের ফোঁড়ে ফুটিয়ে তোলা নকশা নয়, একেকটি নকশীকাঁথার জমিনে লুকিয়ে থাকে গল্প- কখনো ভালোবাসার, কখনো দুঃখের। বাংলার পথে-প্রান্তরে হারিয়ে যাওয়া গল্পকে বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে একেকটি নকশীকাঁথা।
এএইচ/