ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

‘আগে যা পারেনি তা-ই করে দেখাবে’ বাংলাদেশ!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:০৩ পিএম, ১৮ মার্চ ২০২২ শুক্রবার | আপডেট: ০৪:০৪ পিএম, ১৮ মার্চ ২০২২ শুক্রবার

টেম্বা বাভুমা ও তামিম ইকবাল

টেম্বা বাভুমা ও তামিম ইকবাল

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হচ্ছে শুক্রবার। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায় সেঞ্চুরিয়নে শুরু হবে এই সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচটি। বাংলাদেশের কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলেছেন, তার অধীনে বাংলাদেশ দল এখানে 'এমন কিছু করবে, যা আগে কখনো হয়নি'।

সেক্ষেত্রে মাত্র একটা ম্যাচ জিতেই কোচের কথা রাখতে পারেন তামিম-সাকিব-মুশফিকরা। কারণ, প্রায় ২০ বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। তারপর এখনো পর্যন্ত কোনো ফরম্যাটেই জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল।

এখনো পর্যন্ত ওয়ানডে ফরম্যাটে মুখোমুখি ২২ দেখায় দক্ষিণ আফ্রিকা ১৭টি ম্যাচে জিতেছে, একটিতে ফলাফল আসেনি আর বাংলাদেশ জিতেছে চারটিতে। কিন্তু তার একটিও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে নয়।

দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো ২০১৯ সালে বাংলাদেশের হেড কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন। এরপর এই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গেল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।

ডোমিঙ্গো চার বছর দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দলের কোচ ছিলেন, তবে সেই দক্ষিণ আফ্রিকা দল আর বর্তমান স্কোয়াডের মধ্যে অনেক পার্থক্য। তখন মনে করা হতো- দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে যে কোনও কন্ডিশনে যে কোনও ম্যাচ জেতার সক্ষমতা রাখতো। যেখানে খেলতেন এ বি ডি ভিলিয়ার্স, ডেল স্টেইন, ফ্যাফ ডু প্লেসিসের মতো ক্রিকেটাররা। 

আর এখনকার দক্ষিণ আফ্রিকা দল একটা পুনর্গঠনের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে, এখনো অনেক পরীক্ষা দেয়া বাকি আছে এই দলটির। তাই এটাকে একটা সুযোগ হিসেবেও নিতে চান বাংলাদেশের কোচ হিসেবে প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করতে যাওয়া ডমিঙ্গো।

বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপির ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিমের মতেও বাংলাদেশের উচিত এবার দক্ষিণ আফ্রিকায় ম্যাচ জেতা। তিনি বলেন, "এসব জায়গায় আত্মবিশ্বাসটা একটা বড় ব্যাপার। ভালো শুরু, ভালো কিছু মোমেন্ট- এসব বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে।"

চলতি বছরের শুরুতেই নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে টেস্ট জয়কে অনুপ্রেরণা মানছেন দলের অনেকেই। এই একটা জয় বাংলাদেশের স্কোয়াডকে বাড়তি প্রেরণা দিচ্ছে।

তখন টেস্ট অধিনায়ক মোমিনুল হকও ম্যাচ জয়ের পর বলেছিলেন, "আগে যদি বলতাম, নিউজিল্যান্ডে আমরা টেস্ট জিতবো, অনেকেই হাসতেন। কিন্তু এখন আর কেউই হাসবে না।"

ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল অবশ্য সরাসরি জয়ের কথা বলেননি। কিন্তু তিনি মনে করেন, এখন শুধু ভালো খেলা বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য হতে পারে না।

দেশ ছাড়ার আগে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের অধিনায়ক বলেন, "দশ বছর আগে যদি প্রশ্ন করতেন বলতাম, ভালো খেলতে চাই। কিন্তু এখন সেটা কঠিন। এখন আমাদের ম্যাচ জেতা ছাড়া ভালো খেলেছি এটা বলাও কঠিন।"

দলের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও নানা পর্বের নাটকীয়তা শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার বিমান ধরার আগে ঢাকায় বিমানবন্দরে বলে গেছেন, অন্তত একটা ওয়ানডে জেতা উচিত বাংলাদেশের।

যদিও বাংলাদেশ ২২ বছর ধরে টেস্ট এবং ছোট ফরম্যাট শুরু হওয়ার পর থেকে টি-টোয়েন্টি খেললেও এখনও পর্যন্ত পরিসংখ্যান ও আনুকূল্য সব মিলিয়েই দলটির প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডে।

ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ গত পাঁচ-সাত বছরে বিশ্বের যে কোনও দলকেই হারাতে পারে এবং সেটা করেও দেখিয়েছে। এক্ষেত্রে কন্ডিশন বা উইকেট তেমন কোনো প্রভাব ফেলেনি। এই ২০১৯ সালেও তুলনামূলক বৈরি কন্ডিশনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।

এর আগে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে প্রভিডেন্সে জ্যাক ক্যালিস, গ্রায়েম স্মিথ, এবি ডি ভিলিয়ার্সের দক্ষিণ আফ্রিকাকেও ৬৭ রানে হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ।

এসব স্মৃতি যেমন বাংলাদেশের এই স্কোয়াডের অনেককেই আশা জোগাবে। একইসাথে এসব জয়ের কোনোটিই যে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে নয়- এই তথ্য বাংলাদেশের জন্য খানিকটা অস্বস্তিকরও বটে।

তবে সাকিব-তামিমদের মত সিনিয়র প্লেয়াররা সেই অস্বস্তি কাটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ক্যারিয়ারের অন্তত একটা জয় চাইবেন সেটাই স্বাভাবিক। আর এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আরেকটি অস্ত্র আছেন, শরিফুল ইসলাম। তিনিই এই দলের একমাত্র সদস্য, যিনি দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে 'কিছু একটা' জিতেছেন।

২০২০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ যুব ক্রিকেট দল। সেই দলেরই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য শরিফুল ইসলাম এখন বাংলাদেশ জাতীয় দলের নিয়মিত ফাস্ট বোলার হিসেবেই একাদশে খেলেন।

তার কথাতেও সেই স্মৃতিচারণ চলে এসেছে। শরিফুল বলেন, শেষবার যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলেছিলাম বিশ্বকাপ জিতেছিলাম। এটা একটা বড় ব্যাপার।

একই সঙ্গে শরিফুল আনন্দিত দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে অ্যালান ডোনাল্ডের সান্নিধ্য পেয়ে। আর ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ দলের নতুন ফাস্ট বোলিং কোচের সঙ্গে কাজ করা শুরু করেছেন বোলাররা। শরিফুলের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন, 'কব্জির অবস্থান নিয়ে'।

৯০'র দশকে দক্ষিণ আফ্রিকা তো বটেই, বিশ্বের সেরা ফাস্ট বোলারদেরই একজন ছিলেন সাদা বিদ্যুৎ খ্যাত অ্যালান ডোনাল্ড।

এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অলরাউন্ডার অ্যালবি মরকেলও এই সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটারদের পাওয়ার হিটিং কোচের দায়িত্ব পালন করছেন।

যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেম্বা বাভুমার দলের বিপক্ষে জয়ের আশা করছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এবং ম্যানেজমেন্ট। তবে কাজটা ততটাও সহজ হবে না বলছেন বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটারের মেন্টর নাজমুল আবেদীন ফাহিম।

তিনি বলেন, "এমন কোনো দেশে গিয়ে খেলা সবসময়ই কঠিন। যেখানে কোয়ালিটি পেস বোলাররা আছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা এগিয়ে থাকবেই। বাংলাদেশের জন্য কঠিনই হবে।"

এইতো ২০২১ সালের কথা! টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ দক্ষিণ আফ্রিকান বোলারদের সামনে অসহায় হয়ে পড়ে। নাজমুল আবেদীন বলেন, "এই ধরনের ম্যাচে শুরুটা ভালো হওয়া খুব দরকার। প্রাথমিক ধাক্কাটা ড্রেসিংরুমে একটা উদ্বেগ ছড়িয়ে দেয়।"

বিশ্লেষক হিসেবে তিনি মনে করেন, সাকিব আল হাসানের দলে থাকাটা দলকে সাহায্য করবে।

কোচ রাসেল ডমিঙ্গোও মনে করেন, সাকিবের উপস্থিতি সবসময় তাকে স্বস্তি দেয়, একটা ভারসাম্য তৈরি হয় একাদশে। তবে কোচের মতে, মূল ব্যাপারটা হচ্ছে দল হিসেবে ভালো খেলা।

যেমন বোলিং-ব্যাটিংয়ে প্রভাব দেখিয়েও বাংলাদেশ অনেক ম্যাচ হেরে গেছে বাজে ফিল্ডিংয়ের কারণে। তার ওপর ভিন্ন কন্ডিশনে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের ক্যাচ ধরতে খানিকটা সমস্যা হয়- এটা স্বীকারও করেছেন অনেক ক্রিকেটার।

তবে নিজেদের মাটিতেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৯টি ক্যাচ মিস দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এটাকে বড় উদ্বেগ বলছেন ডোমিঙ্গো। তার মতে, "এসব ম্যাচে এমন কিছু সুযোগ আসে যা ধরতে পারলে অন্য দরজাগুলোও খুলে যায়।"

এদিকে, তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের পর দুটি টেস্ট ম্যাচ খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশ। সেখানে অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার পূর্ণশক্তির স্কোয়াড থাকছে না। ওয়ানডে সিরিজ খেলেই মূল দলের ৮ থেকে ১০ জন ক্রিকেটার ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) খেলতে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।

এনএস//