ডাউন সিনড্রোম রোগ ঠেকাতে ত্রিশের মধ্যে বিয়ের পরামর্শ
শাবিপ্রবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৮:৩৭ পিএম, ২১ মার্চ ২০২২ সোমবার
‘একিভূত সমাজ ব্যবস্থা অংশগ্রহণে বাড়ায় আস্থা’ এ প্রতিপ্রাদ্যকে সামনে রেখে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস’ উদযাপন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমেস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ‘ডাউন সিনড্রোম রিচার্স গ্রুপ’ এর আয়োজনে ও টিটুয়ান্টিওয়ানআরএস এর সহায়তায় এ দিবস উদযাপন করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে সোমবার (২১ মার্চ) দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-এ এর সামনে থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জুনতলা হয়ে গোল চত্বর, বঙ্গবন্ধু চত্বর ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ঘুরে একই স্থানে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এতে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকার ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুরাও অংশ নেন।
সমাবেশে বায়োকেমেস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি (বিএমবি) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শেখ মির্জা নুরুন্নবীর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়রুল ইসলাম। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. কামরুল ইসলাম, বিএমবি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ-আল-শোয়েব ও সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের পেডিট্রেশন ডা. জিয়াউল রহমান।
ডাউন সিনড্রোম রোগের বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ সম্পর্কে ডা. জিয়াউর রহমান বলেন, রোগটি বংশপরস্পরায় সঞ্চারিত হয় না। শুক্রানু ও ডিম্বানু বৃদ্ধির সময় ক্রটিপূর্ণ মিয়োসিস কোষ বিভাজন ও জাইগোট বৃদ্ধির সময় ক্রটিপূর্ণ মাইটোসিস কোষ বিভাজনের ফলে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু জন্ম নিতে পারেন।
পরীক্ষালব্ধ গবেষণার ফল হতে জানা যায় যে, সাধরণত গর্ভবতী মায়ের বয়স ৩০ বছর বা এর বেশি হলে এই ক্রটিপূর্ণ মিয়োসিস কোষবিভাজন এর হার বেড়ে যায়। এছাড়া গর্ভবতী মায়ের শরীরে ফলিক এসিড এর পরিমাণ কম থাকলে বা এর পরিপাক ক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হলে এই রোগ হওয়ার প্রবণতা ৯০% বেড়ে যায়, যা ত্রুটিপূর্ণ মিয়োসিস কোষ বিভাজনের অন্যতম দায়ী নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। কোন কোন ক্ষেত্রে বাবার বয়স ৩০ বছর এর বেশি হলে এই ক্রটিপূর্ণ মিয়োসিস কোষ বিভাজনের হার ১০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তাই ক্যারিয়ার বিষয়ে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি ত্রিশ বছরের মধ্যে বিবাহ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডাউন সিনড্রোম এ আক্রান্ত রোগীর উপসর্গগুলো হল- মুূখমন্ডল ও নাকের সংযোগ চ্যাপ্টা হওয়া, মাথা, নাক, মুখ, কান ও গলা খাটো হওয়া, চক্ষু উপরে উঠানো, জিহ্বা বের হয়ে থাকা, শুষ্ক ত্বক, শরীরে বয়সের ছাপ ও কনজেনিটাল হার্ট ডিফেক্টস ইত্যাদি।
বিএমবি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল শোয়েব বলেন, মানব শরীরে সাধারণত ২১ নম্বর ক্রোমোজোমের ২টি করে কপি থাকে। কিন্তু এ রোগে আক্রান্ত মানুষের ২১ নম্বর ক্রোমোজোমের ১টি অতিরিক্ত কপি উপস্থিত থাকে। এজন্য এ রোগটি ক্রোমোজোম ২১ ট্রাইজোমি (৩ কপি) নামেও পরিচিত।
লাইফ সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. কামরুল ইসলাম বলেন, এ রোগে আক্রান্ত মানুষদের ব্রেইন খুব সচেতন। তারা যেকোনো কাজে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারেন। তাই সমাজের অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতো তাদেরকেও সমাজে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে দেশের একটি অঞ্চলে তৃতীয় লিঙ্গের একজন মানুষ নির্বাচনের মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। আশা করি, ভবিষ্যতেও এসকল মানুষেরা ভালো কিছু করতে পারবেন।
প্রধান অতিথির বক্তেব্যে কোষাধ্যক্ষ বলেন, ডাউন সিন্ড্রোম এ আক্রান্ত রোগী পরিবারের বা সমাজের বোঝা নয় বরং এটা প্রতিরোধযোগ্য। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার কমানো সম্ভব। এ রোগে আক্রান্ত শিশুদেরকে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ভিন্ন কিছু ভাবার দরকার নেই। দেশের সকল জনসংখ্যার দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এসময় তিনি এ রোগে আক্রান্ত শিশুদের সফলতা কামনা করেন।
এসি