আফগানিস্তানের পাচার হওয়া শিল্পকর্ম নিউজিল্যান্ডের গ্যালারিতে
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৫১ পিএম, ২২ মার্চ ২০২২ মঙ্গলবার
তালেবান আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর দেশটির শিল্প ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য হাজারা শিল্পী খাদিম আলীর তৈরি তিনটি ট্যাপেস্ট্রি তালেবানদের কড়া পাহারার মধ্যেও পাচার করতে সক্ষম হয়েছিল এর কারিগররা।
সেই তিনটি ট্যাপেস্ট্রি এখন নিউজিল্যান্ডের নিউ প্লাইমাউথ আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শিত হচ্ছে।
এক প্রতিবেদনে নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড জানিয়েছে, ট্যাপেস্ট্রিগুলো আয়তনে বেশ বড়। নয় মিটার দৈর্ঘ্য আর চার মিটারের বেশি প্রস্থের এই তিনটি ট্যাপেস্ট্রি নিউজিল্যান্ডে পৌঁছাতে একটি অবিশ্বাস্য পথ পাড়ি দিয়েছে। প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে তারা এবং একটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত পার হয়েছে।
শিল্পী খাদিমের এই কাজ তিনটি প্রথমে কোয়াটা, পরে অস্ট্রেলিয়া হয়ে চূড়ান্ত ধাপে আর্ট গ্যালারির প্রদর্শনীর জন্য নিউজিল্যান্ডে পৌঁছায়। এই গ্যালারিই তাদের জন্য একমাত্র জায়গা, এমনটাই মনে করে নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড।
আফগান শিল্পী খাদিম আলীর স্টুডিও ছিল পশ্চিম কাবুলের দাশত-ই-বারচিতে। অস্ট্রেলিয়ায় তার বাড়ি থেকে তিনি প্রায়ই এটি দেখতে যেতেন। তিনি কিছু স্থানীয় কারিগরকে তার সহকারী হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন যারা স্টুডিও থেকে কাজ করতেন এবং স্থানীয় কিছু নারীকেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল যারা বাড়িতে থেকে তাতে কাজ করতেন।
জানা গেছে, প্রায় এক দশক ধরে খাদিমের স্টুডিও ছিল ভাবনা ও চিন্তার আদান-প্রদানের পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্পকর্ম উৎপাদনের একটি প্ল্যাটফর্ম। এরপর তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফিরে আসলে তাদের আইনের অধীনে শিল্প নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
খাদিম বলেন, অনেক শিল্পকর্মই ফেলে দেওয়া হয়েছিল, কারণ আমরা জানতাম তালেবানরা সমস্ত শিল্পকে ঘৃণা করে, তারা সমস্ত ছবি নির্মাণের বিরোধিতা করে। তাদের সময়ে অনেক কাজ বাতিল বা ধ্বংস করা হয়েছে. কারণ তখন শিল্পীদের জীবন-মৃত্যুর ব্যাপার সেখানে জড়িত ছিল। আমি চাইনি যে তারা যা করেছে তার জন্য তাদের কারও মৃত্যু হোক।
নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড জানায়, তালেবানের অধীনে খাদিমের শিল্পকর্মগুলো ধ্বংস হতে পারে, এমন কথা চিন্তা করে তার দল কিছু ট্যাপেস্ট্রি দেশের বাইরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর জন্য কিছু ট্যাপেস্ট্রি সংগঠিত করার প্রক্রিয়ার মাঝেই তালেবানরা কাবুলে প্রবেশ করে।
খাদিম বলেন, তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। লোকেরা তাদের জীবন বাঁচাতে পালিয়ে যাচ্ছিলো। তার সহকারীরা সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানে যাওয়ার চেষ্টা করছিল এবং তারা কুশনের ছদ্মবেশে ট্যাপেস্ট্রিগুলি তাদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা করেছিল।
প্রসঙ্গত, একসময় হাজারি জাতিগোষ্ঠী আফগানিস্তানের বৃহত্তম গোষ্ঠী ছিল। যদিও এখন তাদের জনসংখ্যার ২০ শতাংশের নিচে। ১৯ শতকের আগে তারা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ছিল।
১৮৯১-৯৩ সালের হাজারি যুদ্ধের সময় হাজারি জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি গণহত্যার শিকার হয়, পালিয়ে যেতে বাধ্য বা দাসত্ব বরণ করে বলেই অনুমান করা হয়।
এসি