স্বাধীনতার ইতিহাসে কলঙ্কিত এক নাম সোয়াত (ভিডিও)
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:২২ পিএম, ২৪ মার্চ ২০২২ বৃহস্পতিবার
পাকিস্তান থেকে অস্ত্র নিয়ে ১৯৭১ সালে চট্ট্রগ্রাম বন্দরে এসেছিল সোয়াত। এই জাহাজ থেকেই অস্ত্র খালাস করতে চেয়েছিলেন তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান। তবে জনরোষে মাঝপথে পিছু হটেন। সোয়াত প্রতিরোধ স্মরণে অবিলম্বে স্মৃতিস্তম্ভের কাজ শেষ করার দাবি সব মানুষের।
সোয়াত, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে কলঙ্কিত এক নাম। ১৯৭১ সালের ১৭ মার্চ অস্ত্র, গোলা বারুদ ভরে সোয়াত জাহাজ নোঙ্গর করেছিল চট্টগ্রাম বন্দরে।
খবর ছড়িয়ে পড়তেই অস্ত্র খালাস ঠেকাতে জোট বাঁধেন চট্টগ্রামের মুক্তিকামী মানুষ। ১৮ মার্চ প্রথম দফায় অস্ত্র খালাসের চেষ্টা হলে বাঙালি শ্রমিক-কর্মচারিরা অস্বীকৃতি জানিয়ে প্রতিবাদ করেন।
প্রতিরোধ মিছিলে অংশ গ্রহণকারী আবদুল খালেক চৌধুরী বলেন, “আমরা মিটিং করলাম, যে কোন প্রজ্ঞার হোক পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর অস্ত্র যেন না নামতে পারে। সেজন্য সেখানে আমরা বিক্ষোভ করলাম।”
২৪ মার্চ বিকালে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কলোনি মাঠের সমাবেশে হাজার হাজার শ্রমিক-জনতা লোহার রড হাতে মিছিল করে। পাকবাহিনীর গুলিতে সেদিন শহীদ হন ২৩ জন। আহত ছিলেন কয়েক শত।
প্রতিরোধ মিছিলে অংশ গ্রহণকারী মাহফুজুর রহমান খান বলেন, “বিশাল আকারে মিছিল নিয়ে আমরা ৩ নম্বর গেটের দিকে যাত্রা করি। যাত্রা পথে সর্বপ্রথম আর্মি এম্বিগেশন থেকে গুলি করা হয়। সেখানে আমাদের বেশ কয়েকজন শ্রমিক নিহত হন।”
২৫ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল অস্ত্র খালাসের উদ্দেশ্যে বন্দরে রওনা হয়। কয়েকবার বন্দরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেও প্রতিরোধের মুখে ব্যর্থ হন জিয়া।
মাহফুজুর রহমান খান বলেন, “সেই অস্ত্র খালাসের জন্য ব্রিগেডিয়ার মজুমদার এবং জিয়াউর রহমানের উপর অ্যাসাইনমেন্ট ছিল। জিয়া বার বার এসেছে, চেষ্টা করেছে কিন্তু প্রতিবাদের মুখে অস্ত্র খালাস করতে পারেনি।”
ইতিহাসের তথ্য বলছে, ২৫ মার্চ ক্যাপ্টেন রফিক বিদ্রোহ ঘোষণা করে পাকবাহিনীর উপর আঘাত করার প্রস্তুতি নিলেও মেজর জিয়া জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাসের উদ্দেশে কেন বন্দরে যেতে চান তা আজও রহস্যাবৃত।
মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, “তৎকালীন রফিক উদ্যোগী হয়ে পাঞ্জাবিদের উপর আক্রমণে ভূমিকা নেন। আর বাকি সবাই বসেছিলেন, পাঞ্জাবিরা যদি আক্রমণে করে তাহলে প্রতিরোধ করার জন্য।”
পাকিস্তান জান্তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামবাসীর বীরোচিত ভূমিকা তুলে ধরতে বন্দরে নির্মিত হতে যাচ্ছে স্মৃতিস্তম্ভ।
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, “সোয়াত জাহাজের ঘটনা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে চট্টগ্রাম বন্দরের অংশগ্রহণকে নিয়ে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার জন্য পরিকল্পনা রয়েছে।”
১৯৭১ সালের ১৭ মার্চ বন্দরে নোঙ্গর করে পাকিস্তানী পতাকাবাহী জাহাজ এমভি সোয়াত। জাহাজটির অস্ত্র খালাস রুখে দিতে বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীরা প্রতিবাদ মিছিল বের করলে সেখানে গুলি চালায় পাকিস্তানী সেনারা। দেশে আনুষ্ঠানিক মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই ২৪ মার্চ এই বন্দর এবং সোয়াত জাহাজকে ঘিরে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়।
এএইচ/