ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

৭১ শতাংশ রুশ নাগরিক মনে করে ইউক্রেনে হামলা সঠিক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:০৮ পিএম, ২৪ মার্চ ২০২২ বৃহস্পতিবার

রাশিয়ার সরকারি জরিপ আর স্বাধীন সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন যে, অধিকাংশ রুশ নাগরিক ইউক্রেনে চলমান আগ্রাসন সমর্থন করেন। কিন্তু এই তথ্য আসলে কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য?

পাঁচই মার্চ 'রাশিয়ান পাবলিক অপিনিয়ন রিসার্চ সেন্টার' পরিচালিত একটি জরিপের তথ্যে প্রকাশিত হয় যে ইউক্রেনে রাশিয়ার 'বিশেষ সেনা অভিযান' সমর্থন করেন ৭১% রুশ নাগরিক। সমর্থন করেন না ২১% মানুষ এবং এ সম্পর্কে জানেন না ৮% মানুষ।

যাদের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে তাদের ৭০% মনে করেন রুশ সেনাবাহিনীর অভিযান পরিকল্পনামাফিক চলছে। একই ধরণের চিত্র উঠে এসেছে 'দ্য পাবলিক অপিনিয়ন ফান্ড'-এর জরিপে। সংস্থাটি মূলত প্রেসিডেন্সিয়াল প্রশাসনের পক্ষ হয়ে জরিপ পরিচালনা করে।

ঐ সংস্থাটির জরিপে উঠে এসেছে যে ৬৫% রুশ নাগরিক ইউক্রেনে চলমান সেনা অভিযান সমর্থন করেন, ১৭% করেন না এবং ১৮% অভিযান সম্পর্কে জানেন না।

রাশিয়ার সরকারবিরোধী অ্যাক্টিভিস্ট অ্যালেক্সি মিনইয়াইলো'র স্বাধীন জরিপেও উঠে এসেছে যে সিংহভাগ রুশ নাগরিকই যুদ্ধের পক্ষে। জরিপটির শিরোনাম ছিল 'রুশরা কি যুদ্ধ চায়'।

ঐ জরিপে 'হ্যাঁ' উত্তর দিয়েছেন ৫১% অংশগ্রহণকারী এবং 'না' উত্তর দিয়েছেন ২৭% উত্তরদাতা।

এই জরিপগুলোতে যুদ্ধের সমর্থনে মন্তব্য করেছেন যারা, তাদের ৭৩% রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর বিশ্বাস করেন এবং যুদ্ধের বিরোধিতা করা উত্তরদাতাদের ৮৫% সেসব সংবাদ মাধ্যমের খবর বিশ্বাস করেন না।

যেসব রুশ নাগরিক ইউক্রেনে যুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতা করছেন তাদের অধিকাংশের বয়স ত্রিশের নিচে। তারা এখনও সেনাবাহিনীতে ডাক পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে অথবা সম্প্রতি সেনাবাহিনীতে তাদের দায়িত্ব পালন সম্পন্ন করেছে।

যুদ্ধের বিরুদ্ধে যে রুশ নাগরিকরা
সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণ করে তৈরি করা গবেষণায় অবশ্য উপরে উল্লিখিত জরিপগুলোর থেকে ভিন্ন ফলাফল পাওয়া গেছে। যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়া থেকে ইন্টারনেটে পোস্ট করা কন্টেন্টের ৫২% যুদ্ধের সমর্থনে, আর ৩০% যুদ্ধবিরোধী।

যুদ্ধের সমর্থনে অথবা যুদ্ধের বিরুদ্ধে, যেরকম পোস্ট হোক - ৩০% রুশ নাগরিক ইউক্রেনের নাগরিকদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছেন।

যুদ্ধের খবর প্রকাশে সেন্সরশিপ
ইউক্রেনের টেলিভিশন ও নিউজ ওয়েবসাইটগুলো যুদ্ধের ভয়াবহ সব ছবি-ভিডিও-খবরে পূর্ণ।

বোমায় বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া আবাসনকেন্দ্র, আহত ও নিহত বেসামরিক নাগরিক, ধ্বংস হয়ে যাওয়া রুশ যানবাহনের ছবি-ভিডিওর পাশাপাশি ইউক্রেনে আটক হওয়া রুশ সেনা সদস্যদের রক্তাক্ত ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে ইউক্রেনের আনুষ্ঠানিক সোশ্যাল মিডিয়া পেইজগুলোতে।

তবে রাশিয়ার টেলিভিশন দেখলে অবশ্য রুশ সেনাবাহিনীর ব্যর্থতা বা পরাজয়ের খবরগুলো দেখা যায় না।

রুশ সেনাবাহিনী ইউক্রেনে অভিযান পরিচালনা শুরু করার এক সপ্তাহের মধ্যে রুশ সরকার একটি আইন প্রণয়ন করে, যেখানে রুশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য নয়, এমন খবর প্রচার করাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ঐ আইন অনুযায়ী, সরকার অবিশ্বাসযোগ্য মনে করে এমন কোনো খবর প্রচার করলে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হবে। রুশ সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ইউক্রেনে চলমান সেনা অভিযানকে 'যুদ্ধ' হিসেবে চিহ্নিত করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং অভিযানকে 'বিশেষ অভিযান' হিসেবে উল্লেখ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

যেসব সংবাদ মাধ্যম এই নির্দেশনা মেনে চলেনি, সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই সব স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম ব্লক করে দেয়া হয়েছে। সংঘাত শুরু হওয়ার আগে ক্রেমলিনের বিরোধিতা করে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করা প্রায় সব রুশ সংবাদ মাধ্যমকে 'বিদেশি চর' হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে।

'কী প্রশ্ন করা হয়েছে, তা গুরুত্বপূর্ণ'
যুদ্ধের বিষয়ে বা রুশ বিশেষ সেনা অভিযান সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের কোন প্রশ্নটি কীভাবে করা হচ্ছে, সেটির ওপর তাদের উত্তর নির্ভর করে এবং জরিপের ফলাফলও প্রভাবিত হয় বলে মনে করেন যুক্তরাজ্যের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের গবেষক অ্যালেক্সি বেসুদনভ।

রাশিয়ার সরকারি সংস্থার পরিচালিত জরিপগুলো করা হয়েছে অংশগ্রহণকারীদের ফোন করে প্রশ্নের উত্তর নিয়ে।

বেসুদনভ বলেন, "ফোন করে অপরিচিত একজন ইউক্রেনে রুশ অভিযান নিয়ে প্রশ্ন করে আপনার মতামত চাইলে এ সম্পর্কে খোলামেলা উত্তর দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করবে অধিকাংশ মানুষই।"

বেসুদনভের মতে, এই জরিপগুলো থেকে বোঝা যায় যে ৫০ থেকে ৭০ ভাগ রুশ নাগরিক সম্ভবত রাশিয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত সমর্থন করার পক্ষে।

এছাড়া অংশগ্রহণকারীদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি এবং বয়স বিভাজনের ওপরও এই জরিপগুলোর ফলাফল নির্ভর করে বলে মন্তব্য করেন বেসুদনভ। ত্রিশের কম বয়সী অধিকাংশ রুশ নাগরিক এই বিশেষ সামরিক অভিযান সমর্থন করে না।

এছাড়া কোন মাধ্যম থেকে খবর পাচ্ছেন, তার ওপরও জরিপের ফলাফল ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। অংশগ্রহণকারী নারী না পুরুষ, তার ওপরও উত্তর অনেকাংশে নির্ভর করে। মধ্যবয়সী নারীদের অধিকাংশই যুদ্ধ সমর্থন করেন না।

কাজেই, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের বিষয়ে রাশিয়ার নাগরিকদের ঢালাও সমর্থন রয়েছে বা এর বিরোধিতা রয়েছে, এমন মন্তব্য হয়তো করা যাবে না। কিন্তু সংখ্যায় কম হলেও, রাশিয়ার নাগরিকদের অনেকের মধ্যেই ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনবিরোধী একট মনোভাব নিশ্চিতভাবেই রয়েছে। সূত্র: বিবিসি

এসি