ঢাকা, শনিবার   ০২ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ১৭ ১৪৩১

হাজারও করিম মাঝির গল্প লুকিয়ে আছে গণকবরে (ভিডিও)

মুশফিকা নাজনীন

প্রকাশিত : ১২:৪৮ পিএম, ২৫ মার্চ ২০২২ শুক্রবার | আপডেট: ১২:৪৯ পিএম, ২৫ মার্চ ২০২২ শুক্রবার

স্বাধীনতার ৫০ বছরেও একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবরের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা যায়নি। সংরক্ষণ করা হয়নি শহীদদের নামের তালিকা। অবৈধ দখল আর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে বধ্যভূমিগুলো। 

রাজধানীর পূর্ব গোরানের বালু নদীতে যাত্রী পারাপার করতেন করিম মাঝি। ১৯৭১ সালে ঈদের দিন সকালে তিনি নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন, যাওয়ার আগে তার স্ত্রী তাকে নিষেধ করেছিলেন মসজিদে যেতে। কারণ সাধারণ যাত্রীর পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদেরও নদী পার করতেন করিম মাঝি।

সে সময় স্ত্রীকে বুঝিয়ে ঈদের নামাজ আদায়ে মসজিদের পথে পা বাড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মসজিদের বারান্দায় পা রাখতেই পাকিস্তানি আর রাজাকারের গুলিতে নিহত হনে করিম মাঝি। 

একুশে টেলিভিশনের সাথে আলাপচারিতায় এমন বর্ণনাই দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্ণেল কাজী সাজ্জাদ আলী শরিফ। 

তিনি বলেন, বাংলার মাটিতে করিম মাঝির দাফন করতে দেয়নি পাকিস্তানী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকাররা।

সে সময় পূর্ব গোরানের বালু নদীর পাশে ছিলো করিম মাঝির বাড়ি। কিন্তু আজ সেখানে কিছুই আর খুঁজে পাওয়া যায়না। চিহ্নটুকুও নেই। 

কাজী সাজ্জাদ আলী শরিফ বলেন, "করিম মাঝির ছেলে নূর মাঝি আমাকে বলেছে বাপের লাশ টা দেখলাম এই ঘাটে ওই ঘাটে, নদীর পাড়ে; আমি দেখেছি ঘুরেফিরে, যাওয়ার সাহস পাইনি, কারণ রাজাকাররা চোখ রেখেছিল।"

করিম মাঝির মতো সারাদেশে অসংখ্য মানুষের সাথে ঘটেছে এমন নিদারুন ঘটনা। পাকিস্তানিরা নির্মমভাবে মানুষ খুন করেছে। মৃতদেহ ফেলে দিয়েছে খাল-বিলে-নদীতে। কখনোবা গণভাবে দেয়া হয়েছে মাটিচাপা।

বগুড়ার ধুনটে ১৩জনকে জীবিত মাটি চাপা দেয়া হয়।  নাটোরে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয় ৩৯ জনকে।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় পাকিস্তানী সৈন্যরা ট্রেন থামিয়ে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়।

রাজশাহীতে একশটি গণকবর থেকে দশ হাজার কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। চট্টগ্রামের দামপাড়ায় প্রতিদিন ৫/৬টি ট্রাক বোঝাই মানুষ এনে গুলি করে হত্যার পর মাটিচাপা দেয়া হতো। আর খুলনার চুকনগরে ১০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়। 

সরকারি হিসেবে মোট ২০৯টি বধ্যভূমি ও গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। রাজধানীতে ৭০টি বধ্যভূমির মধ্যে মিরপুরেই রয়েছে ২৩টি। সংরক্ষিত হয়েছে মাত্র তিনটি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের তালিকায় ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকায় রয়েছে ৩৯টি বধ্যভূমির নাম। এগুলো অরক্ষিত। একই চিত্র দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বধ্যভূমিগুলোর। 

নাটোর, দিনাজপুর, বগুড়া, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, কুড়িগ্রাম, ভালুকা, খুলনা, নীলফামারী, নেত্রোকোণা, পাবনা, গাইবান্ধাসহ দেশের বেশিরভাগ বধ্যভুমি এবং গণকবরগুলো অরক্ষিত।

গাইবান্ধায় গণবকর দখল করে দেয়া হয়েছে দেয়াল। বহু গণকবরের নাম-নিশানা মুছে ফেলে দালানকোঠা তোলা হয়েছে। লতাগুল্ম-বনজঙ্গলে ঢাকা পড়ে অনেক গণকবর লোকচক্ষুর অন্তরালে। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্ণেল সাজ্জাদ আলী শরিফ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে গণকবর গুলো দ্রুত সংরক্ষণ প্রয়োজন। 

বলেন, "একাত্তরে সবচেয়ে বড় বিষয়টা ছিল একত্রে দাঁড়ানো, একাত্বতা, এটিই আমাদের আনতে হবে।" 

সরকারের উপর নির্ভর না করে এলাকাভিত্তিক ভাবে গণকবরগুলো সংরক্ষণ করার অনুরোধও জানান তিনি জানান। 

এসবি/